বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ১৬) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
পর্ব ১৬
১৯৪৫-৪৬ মরশুমে যতই দেশব্যাপী সমস্যার পাহাড় থাকুক। ক্রিকেট খেলার এক শতাংশ ভাঁটা পড়েনি। যখন অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস কলকাতায় খেলছে তখন একই সঙ্গে নিয়মিত কলকাতার ময়দানে (তখনকার গড়ের মাঠ) ক্রিকেট চলছে।
১৭ ই নভেম্বর বার্নপুর (১৫৩/৮; এফ পাগসলী ৭৪) বনাম চুঁচুড়া টাউন স্পোর্টিং (১৩৮/৬; কে নন্দী ৩১, আর শীল ৩৭) ম্যাচ ড্র হয় চুঁচুড়ায়।
২৩ শে নভেম্বর ড্যাঙ এর করা ৪৮ ক্যাবলস কে ১৮৫ তুলতে সাহায্য করে কুচবিহার মহারাজার দলের বিরুদ্ধে। পিয়ারসন সুরিটা ৪৮ রানে ৩ উইকেট পান। জবাবে শুঁটে ব্যানার্জির অপরাজিত ১০৭ ক্যাবলস কে জিতিয়ে দেয়। একই দিনে তালতলা (১২৭) হেরে যায় অমৃতবাজার পত্রিকার (১৬৬/৫) কাছে। অজয় বসু (সাংবাদিক ও পরে ধারাভাষ্যকার) অপরাজিত ৫৩ করেন। ঐ দিন আরেক ম্যাচে ক্যাবলসের দ্বিতীয় দল (২০০/৭) জিতে যায় আর এফ সিগনালের (১৭১) বিরুদ্ধে।
পরের দিন মোহনবাগান দুটো ম্যাচ খেলে দুটোই ড্র করে। প্রথমে এরিয়ানের (২৫৬/৩) বিরুদ্ধে মোহনবাগান (১১৯/২) করে। তারপর অন্য ম্যাচে মোহনবাগান (২১৩/৯) ও বেঙ্গল আসাম রেল (১৪০/৫) ড্র করে।
গ্রিয়ার (১৭৭/৫) বনাম শিবপুর (১১২/৪), মারোয়ারী (১৯৮/৭; বাজোরিয়া ৬১, পি মিত্র অপরাজিত ৬৪, এস রায় ৫২/৩, বি বসু ৪৫/৩) বনাম অমৃতবাজার (১৬৮/৭; জি চ্যাটার্জি ৭৫) ম্যাচ ড্র হয়।
তালতলা (১০২) হেরে যায় Raf Muir (১৭৩/৮) এর কাছে ৬ উইকেটে। কলকাতা পুলিশ (৯৪) হেরে যায় ন্যাশনাল এসির (১৩৭/৬) বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে। স্পোর্টিং ইউনিয়ন (১৪৫) হেরে যায় ক্যাবলস ( ৯ উইকেটে ১৬৮) এর কাছে।
সবথেকে আশ্চর্য ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেট দল (১২৭/৭) কোনক্রমে হার বাঁচায় ইস্ট বেঙ্গলের ফুটবল দলের (২১৪) বিরুদ্ধে।
২৫ শে ডিসেম্বর ইস্টবেঙ্গল (১৯১) হেরে যায় পার্সির (২৪০/৩) কাছে। পার্সির কে খাম্বাট্টা ১১৬ ও ডি ম্যাডান ৯৫ করেন। ইস্টবেঙ্গলের এস ঘোষ ৪০ করেন। পার্সির মাভেওয়ালা ৬২ রানের ৮ উইকেট পান।
বেঙ্গল আসাম রেল (২১৩/৮; পি চক্রবর্তী ৫৫) হারিয়ে দেয় যাদবপুর কলেজ (১৭৩; বি চৌধুরী ৭৮, এস দাস ২৫/৪)। গ্রিয়ার (৪৯ ; আই ঘোষ ৭/৪) বিশ্রী ভাবে ৯ উইকেটে হেরে যায় ইউনিয়ন স্পোটিং (১৫৬; এন বসু ৫৬, এন দেশাই অপরাজিত ৫৩, এস ঘোষ ৫২/৩) এর কাছে।
মোহনবাগান একই দিনে দুটো ম্যাচে হারে। মহামেডান (২১৫/৮) প্রথমে হারায় মোহনবাগানের (৭৩) প্রথম দলকে। মহামেডানের সৈফুদ্দিন ৫৫ করেন। মোহনবাগানের বি চ্যাটার্জি ১০৩ রানে ৪ উইকেট পান। মোহনবাগানের সি ঘোষ ২৮ করেন, মহামেডানের ইসমাইল ১৮ রানে ৯ উইকেট পান।
মোহনবাগানের দ্বিতীয় দল (৮৬; আর মিত্র ২৩, এস মুখার্জী ২৫/৪, জে দাশগুপ্ত ২৯/৪) হারে টাউনের (২০৬/৬) কাছে। টাউনের কে এল রায় ৯৪ করেন ও মোহনবাগানের টি চৌধুরী ৬৭ রানে ৪ উইকেট পান।
২৬ ডিসেম্বর ভবানীপুর (১৫০/৮; এ গুপ্ত ৬৭, এস ব্যানার্জি ৪৭/৬) ও হাওড়া ইউনিয়নের (৭৪/৬) ম্যাচ ড্র হয়। ভবানীপুরের দ্বিতীয় দল (৯৯/৭; এস দাস ৩৪, এ চ্যাটার্জি ২৭/৪) সালখিয়া ফ্রেন্ডস (১৫৪; এ চ্যাটার্জি ৬৩, এস দাশগুপ্ত ২৮/৪) এর সঙ্গে ড্র করে। ইয়ং বেঙ্গল (১৩৬; এস ব্যানার্জি ২৬/৪) ড্র করে বেঙ্গল নাগরপুর রেলওয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাবের (১১০/৯; এস ঘটক ১৭/৪) বিরুদ্ধে।
আশুতোষ কলেজ (১৮১/৩) অতি সহজেই হারায় সেন্ট পলস (৮৫) কলেজ কে। যাদবপুর কলেজ (১১৫/৯; বি দে ৩৪/৬) হারায় শ্যামবাজার (৭৫; এস সুর ২৪/৭) কে। ইস্টবেঙ্গল (২১২/৬; এস সি মিত্র ৫৯) ও ইউনিয়ন স্পোর্টিং (১১৭; ওয়াই সি পাল ৩৯/৫) কে হারায়।
২৭ তারিখ বেঙ্গল সি সির (২০৪/৫) হয়ে কার্তিক বসু শতরান (১০০) করেন। তালতলা (২১৯) ও ইস্টবেঙ্গল (১৮২/৯) ম্যাচ ড্র হয়। অমৃতবাজারের প্রথম দল (১৬৯/৬) ন্যাশনাল এসির (১৪৯/৮) ড্র করে। দ্বিতীয় দল (২১২) করে মিলন সমিতির (৯৫) বিরুদ্ধে। অমৃতবাজারের জি চ্যাটার্জি ৭০ করেন। মিলন সমিতির এস রায় ২৫ রানে ৪ উইকেট নেন। কে ভট্টাচার্য ৭০ রানে ৬ উইকেট নেন অমৃতবাজারের পক্ষে।
২৮ তারিখ ক্লাব ক্রিকেটের দুটি ম্যাচের খবর পাওয়া যায়। অমৃতবাজার ৪ উইকেটে ২৩৬ করে। মন্টু সেন ৯০ ও সন্তোষ গাঙ্গুলী ৬৪ করেন। জবাবে বেঙ্গল সিসি ৯৮/৭ তুলে ম্যাচ ড্র করে। কোচবিহার মহারাজার দল (১৬৩; এ দাশগুপ্ত ৭৯, ক্ল্যাট ৬৫/৫, কুকা ৫৫/৪) হারিয়ে দেয় RAF কে (১৩৩)।
২৯ তারিখ গ্রিয়ার (১৩৪/৮) ও কলেজিয়ানস (৭৯/৫) ম্যাচ ড্র হয়। তালতলা (১০৭/৮; এ ঘোষ ৩২/৭) ও কলকাতা পুলিশ (৫০/৩) ম্যাচ ড্র হয়। ইস্টবেঙ্গল (১০৯/৯; জি ব্যানার্জি ৩৭/৭) ও অরোরা (৪০/৭; জি চন্দ্র ৮/৪) ম্যাচ ড্র হয়।
দমদমা (অধুনা দমদম) RAF (১৭১/৮) হারিয়ে দেয় 3rd company EC signal (১০৩; হোয়াইট ১১/৪) কে। রেঞ্জার্স (২২২/৩; এস স্মিথ অপরাজিত ১১০) হারিয়ে দেয় সিটি এসি (৩৬; মার্টিন ৯/৫) কে।
ক্যাবলস (১২১/৯; ওয়েস্ট ৪১/৫, কেনেট ৪২/৪) হেরে যায় পুলিশ এসি (১২৪/৪) কে। পার্সি (১২২; বি রায় ৩২/৫) ও ট্রামওয়েজের (১৪৩/৬) কাছে হেরে যায়।
ঐ দিন একটি এক্সিবিশন ম্যাচে সিসিবি ভেটারেন্স (১৩৫; ধ্রুব দাস ৪৮/৪, শুঁটে ২০/৫) হেরে যায় সিসিবি ইয়ং (১৭০/৮; ধ্রুব দাস ১৯ মিনিটে ১০টি চার ও ছয়টি ছয় সহ ৮২) এর কাছে।
৩০ শে ডিসেম্বর ভবানীপুর (১৬৫) এরিয়ানসের (২২২/১) হেরে যায়। কমল ভট্টাচার্য অপরাজিত ১১১ ও সুশীল বসু ৭৭ করেন।
ই বি লীর অপরাজিত ১২৮ ও ল্যাম্বের ৫৭ রানের ওপর ভিত্তি করে ক্যাবলস (২৫৫/৭) হারিয়ে দেয় সিসিবি (২০৮/৯) কে। সিসিবির সরল দে অপরাজিত ৭৫ করেন।
সন্তোষ গাঙ্গুলীর ৭০, পি রায়ের ৭৮ এর জন্য স্পোর্টিং ইউনিয়ন ২১৫/৬ তোলে। ক্যাবলসের মরগ্যান ৬৩ রানে ৫ উইকেট নেন। ক্যাবলস ১৩৪ করে। পি রায় (পঙ্কজ রায়) স্পোটিং ইউনিয়নের ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন।
ধ্রুব দাসের ১০৬ রানের জন্য কালীঘাট (১৮৫/৬) হারিয়ে দেয় পার্সি (১৭১) কে। মারওয়ারী (১০১) হেরে যায় গ্রিয়ার (১৬৭/৮) এর কাছে। বেঙ্গল ভেটনারি (৭৬) কে হারিয়ে দেয় ইয়ং বেঙ্গল (১০০) ৩ উইকেটে।
এতদিন জানা ছিল যে cab লীগ ১৯৫৩/৫৪ ও নক আউট ১৯৫২/৫৩ থেকে শুরু হয়। কিন্তু যুগান্তর থেকে পাচ্ছি যে এইদিন cab লীগে অরোরা (১৭২) হারাচ্ছে YMCA কলেজ (১১০) কে।
মোহনবাগান নিজেদের মধ্যে একটি ম্যাচ আয়োজন করে। Dr এন এন বোস দ্বাদশ (১৭৮) ও বি সি ঘোষ (১২০/১০) ম্যাচ টি ড্র হয়। এন এন বোসের দলের এ গাঙ্গুলী ৪৪ রানে ৪ উইকেট পান।
১ লা জানুয়ারি ও ২ রা জানুয়ারি ১৯৪৬, প্রচুর ম্যাচ হচ্ছে কলকাতায়। এর মধ্যে পয়লা জানুয়ারি বেঙ্গল আসাম রেলের টি ভট্টাচার্য ১০১, কালীঘাটের ধ্রুব দাস ১০৮, পি সেন অপরাজিত ১০৫ করছেন। অমৃতবাজারের এম দাশগুপ্ত (৬৫), বেঙ্গল আসাম রেলের এস ব্যানার্জী (অপরাজিত ৫৩), মোহনবাগানের এস বসু (৬২), ডালহৌসির এ গাববিস (৭১), পার্সির মাভেওয়ালা (অপরাজিত ৭৫), ন্যাশনাল ক্লাবের নিজস্ব ম্যাচের এন সি adhya দলের এস চ্যাটার্জি (৬০) অর্ধ শতরান করেন। বল হাতে এরিয়ানসের সুশীল বসু (৪/৭১), ক্যাবলসের উইলসন (৪/৮২), মহামেডানের ইসমাইল (৫/৬৫) ও হামিদ (৪/৬১), মোহনবাগানের এস চৌধুরী (৭/৪৭), পার্সির মাভেওয়ালা (৬/৫৮), গ্রিয়ারের নিজেদের মধ্যে ম্যাচের পি বসুর দলের কে মল্লিক (৪/৪২) দারুন সফল।
অমৃতবাজার (১৫০/৭) ও হাওড়া ইনস্টিটিউসন (৮৪/৭), বেঙ্গল আসাম রেল (২৩৭) বনাম এরিয়ানস (১৫৪/৮), ইস্টবেঙ্গল (২৫৮/৮) বনাম ক্যাবলস (২৩২/৭), মোহনবাগান (১৮৮) বনাম মহামেডান (১২৮/৮) কালীঘাট (৩৪১/৮) বনাম স্পোর্টিং ইউনিয়ন (১৫০/৮), এন সি adhya (২০৮/৯) বনাম এন কে শীল (১২৬/৮) ম্যাচ ড্র হয়।
ডালহৌসি (২০৬/৮) বনাম পার্সি (২০৫/৮) তুমুল উত্তেজনায় ড্র হয়। এস কে সিনহার দল (১৪৭) পি বসুর (১৫২) দলের কাছে ১ উইকেটে হারে। তালতলার নিজেদের ম্যাচে কে সুকুলের দল (১৩৬) হেরে যায় এস পালের দলের (১৫১) বিরুদ্ধে ৪ উইকেটে।
২ রা জানুয়ারি, ভবানীপুর (১৯৮/৫) ড্র করে কুমারটুলির (১৩০/২) সঙ্গে। অমৃতবাজার (২০০/৩) ড্র করে দক্ষিণ কলকাতার (৮৩/৬) সঙ্গে। বেঙ্গল সিসি (১৮২/৬) ও অরোরার সঙ্গে। ক্যাবলস (২৬৬/৮) ও এরিয়ানস (২৬৪/৮) ম্যাচ উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় ড্র হয়। ভবানীপুরের দ্বিতীয় দল (২০৮) ও কালীঘাট (১৬৬/৩) ম্যাচ ড্র হয়। কিন্তু ভবানীপুরের তৃতীয় দল (১১১) হেরে যায় অরোরার (১১৪/৫) ম্যাচে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯/৭) বনাম ডি এন দে দল (১২০/৬) ম্যাচ ড্র হয়। এদিকে সিএবি লীগে গ্রিয়ার (১৬২) বনাম জোড়াবাগান (১৪৮/৫) ম্যাচ ড্র হয়। স্পোর্টিং ইউনিয়ন (১৭২) হারিয়ে দেয় ডালহৌসি (১৪৪) কে। বেঙ্গল সিসি (৯২) হেরে যায় পার্সির (১৬৯/৮) এর কাছে। ওদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা (১৮৭/৯) বনাম মারোয়ারি (১২৯/৩) ম্যাচ ড্র হয়।
ঐ দিন কেবলমাত্র অমৃতবাজার পত্রিকার মন্টু সেন ১২৭ করেন। হাফ সেঞ্চুরী করেন ভবানীপুরের প্রথম দলের এন মুখার্জী (৭৩), জে ঘোষ (৭১), ক্যাবলসের লী (৮৬), এরিয়ানসের জি চ্যাটার্জি (৬৭), এস ব্যানার্জি (৫৪), এ সাহা (৬১), ভবানীপুরের দ্বিতীয় দলের সুশু ঘোষ (৮৬), কালীঘাটের বাদল দত্ত (৭১), গ্রিয়ারের এ মিশ্র (৭৯), জোড়াবাগানের আর দাস (৬৪), স্পোর্টিং ইউনিয়নের এন মুখার্জী (৬১), পার্সির ম্যাডান (৭০), মাগামেন (৫১)।
বল হাতে সফল হন ক্যাবলসের টম লংফিল্ড (৪৬/৫), ডি এন দে দলের এন বসু (৬৩/৪), জোড়াবাগানের টি সেন (৬/৫), কমল ভট্টাচার্য (৫৭/৪), ডালহৌসির গুরুয়ার (৪০/৪), রবিনসন (৪৫/৪), স্পোর্টিং ইউনিয়নের এন মিত্র (৬০/৫), এন মুখার্জী (৪৮/৪), পার্সির মাভেওয়ালা (৩৮/৬), বেঙ্গল সিসির এস ব্যানার্জি (৮৩/৪)।