শমন জাত – ব্রততী চক্রবর্ত্তী
—ও বাজান, তুমি যে কইসিলা আমার মল জোড়াডা আনবা আইজ? কই তা? এই জামার পকেডে তো কিসু নাই। আইজও তাইলে আনো নাই, না?
—স্যাকরায় না দিলে, আমি কী করুম কও? আমারে তো কইসিলো আইজি দিয়া দিব। এহন কয় যে, আরো দুইডা দিন সময় দাও ইনুজ ভাই, হয়া যাইব। পালিশ করতে দিসে আরেক জাগায়। হ্যার কাসে নাকি পালিশের জিনিস নাই। তাই আইজও দিতে পারে নাই ।
—আরে ঠিকই আসে। আর তো দুইডা দিন মোডে। পালিশ করায়া আনুক ভালো কইরা। দেবে আনে তারপর। কই, তুমি কী খাবার আনসো দাও তো এহন।
—হ, খাবার আনসি তো। একরকম নুনতা গজা, আর লাল বাতাসা আনসি। এই দ্যাহো, এই যে। আর একখান ছোডো আয়নাও আনসি তোমার। সেইদিন যে তোমার আয়নাখান পইরা ভাইঙা গেল। হ্যার লাইগ্যা এইডা আবার আনসি।
—সত্যি! কই, দাও দেহি। আমি তোমারে পানি আইনা দেই। বাতাসা দিয়া খাইবা এহন।
—হ, তা এক গেলাস দাও।
গজা, লাল বাতাসার ঠোঙা আর আয়না নিয়ে চলে গেল আমিনা।
গত এক বছরে ইনুজ মিস্তিরি মেয়ের শখের মল জোড়া এনে দিতে পারেনি। টাকা নাই পয়সা নাই, মল কিনবে কোত্থেকে! প্রতি হাটবারে ইনুজ বাজারে যায়। আর আমিনা প্রতিবার মল জোড়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। ফিরে এসে ইনুজ একই কথা বলে, “আর দুইডা দিন সময় চাইসে স্যাকরা।” এই ‘দুই দিনের’ ছলনার আশ্রয়টুকুকে পিতা-পুত্রী উভয়েই সুন্দর লালন করে চলেছে দিনের পর দিন। দু’তরফেই, কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও বাস্তবের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়ে যায় হয়তো এটুকুতে। দিন আনি দিন খাই ঘরে, আসমানি স্বপ্ন আর বাস্তবের মিশেলে; রঙিন ভবিষ্যতের মতো মল জোড়া রিনরিন শব্দে বাজতে থাকে ছলনাটুকুতে।
আগে রাজমিস্তিরির সঙ্গে যোগানের কাজ করত ইনুজ। আবার পাশের গ্রামের ইজাদের ভেড়িতে চুন-খোল ছড়ানোর কাজও করত। বাপ-বেটির সংসার একরকম ভালোই চলে যেত এসবে। সেবারে যোগানের কাজ করতে গিয়ে ভাড়ার উপর থেকে নীচে খোয়া-গাদায় পরে গিয়েছিল ইনুজ। টানা তিন মাস হাসপাতালে পড়ে ছিল। মহকুমা হাসপাতালের বড়ো ডাক্তার বললে যে ইনুজের মেরুদণ্ড আর কোমরের হাড়গোড়ে নাকি কী সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আগের মতো আর কোনোদিন খাটতে পারবে না ইনুজ। সেই থেকে রোজগারপাতি প্রায় বন্ধ। রোজের পেট চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন হাতে বোনা চটার টুকরি, ঝুড়ি, কুলো এইসব বানিয়ে হাটে-হাটে বিক্রি করে ইনুজ। রেশনের চাল গম পায় কিছু, তাই দিয়ে যা হোক করে চলে। মেয়েটা একবেলা খেতে পায় ইস্কুলে। আর ওই একমাত্র মেয়ে ছাড়া ইনুজের জীবনে আর আছেটাই বা কী! মা-বাপ সব তো কবেই মরে হেজে গিয়েছে। দ্বিতীয় বাচ্চাটা বিয়োতে গিয়ে, ইনুজের বউটাও মোলো বাচ্চা সমেত। আমিনার তখন সাত বচ্ছর বয়েস। সেই থেকে মেয়েকে বুকে করে আগলে রেখেছে সে। চোদ্দ বছরের আমিনাও তেমনি বুঝদার হয়ে উঠেছে। বাপের দুঃখ-দরদ বোঝে। মা’র মতোই ফুটফুটে রং আর ডাগর চোখ পেয়েছে সে। গরিবের ঘরে এত রূপ ধরে রাখা দায়! গ্রামে মানুষের নজরে পড়ে। ইনুজকে অনেকে বলেছে, পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলেরও নাকি চোখ আছে আমিনার দিকে। তার নিজের অবশ্য এসব অত লক্ষ আসে না। তাও ইনুজ ভেবেই রেখেছে আর বছর তিনেকের মধ্যেই আমিনার বিয়ে দিয়ে দেবে। নিজের ঘর-সংসারে, যদি একটু সুখের মুখ দেখতে পায় মেয়েটা!
আজ এক বছরে ইনুজ মেয়ের মল কেনার টাকা গোছানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু কিছুতেই টাকার জোগাড় করতে পারেনি। স্যাকরা ধারে কাজ করে না। উপায় না পেয়ে, গেল হপ্তায় বিল্টু ঘোষের বাড়ি, সুদে টাকা ধার করতে গিয়েছিল ইনুজ। কোনো জিনিস বন্দক দিয়ে টাকা ধার পাওয়া যায় ঘোষেদের কাছে। আবার এমনিও টাকা ধার দেয়। কিন্তু বন্ধকি জিনিস ছাড়া টাকা ধার নিলে, সুদ অনেক বেশি পরে। তা সুদ বেশি হলেও ইনুজ গিয়েছিল টাকা ধার চাইতে। কিন্তু বিল্টু ঘোষ টাকা তো ধার দেয়ইনি, উলটে দু’কথা শুনিয়ে দিয়েছিল,
—ওরে শুইন্যা যা কে আছস, মোল্লার বেডির আবার মল পরনের শখ হইসে! আর হাসাইস না তুই ইনুজ। ক্যান তগো ধর্মে তো মল পরনের নিদান নাই জানি। তয়?
—তাতে কী? ঘরে পরবো। বাইরে আওয়াইজ না অইলে, তাতে তো আর কুনো দোষ নাই। মাইয়ার কেলাসের কয়জনে পরসে। ছোডো মানুষ। হ্যারও শখ লাগসে দেইখ্যা। আর দুই হাজার তো মোডে টাহা। ও আমি শোদ দিয়া দিমু তোমারে।
—ইল্লি রে! কবে শোদ দিবি শুনি? মরণের পর? দুই হাজার নাকি মোডে! চোখ দিয়া কুনোদিন হাজারটা টাহাও দেখছিস? দুইবেলা খাইতে পাইস? যে দুই হাজার টাহা চাইস? কাজকাম তো কিসু করতে পারো না, ধার শোদ দিবা ক্যামনে?
—সে আমি ভাইবা রাখসি। তুমি চিন্তা কইরো না।
—না, বড়ো মাতুব্বর রে আমার! চিন্তা করব না। আর তগো তো তাড়াইয়াই দেবে দ্যাশ থিক্যা আর কয়দিন পর। খবর রাখস কিসু? ধইরা নিয়া যাইব তগোরে। তহন টাহা দেবে কে? তর ঠাউদ্দা?
—ধুরও, এইসব কী কও তুমি? হুদাই তারাইবো ক্যান আমাগো?
—তর বাপে কবে আইসিলো এই দ্যাশে জানস? কুন তারিখ, কুন সালে আইসিলো এইসব জানস তুই? তর তো হালায় বাপই বাঁইচ্যা নাই আর। হা হা। তরে তো নিয়া যাইবোই। তর কাসে তো তর নিজেরই প্রমাণের কাগজপত্র সব ঠিক নাই। তরে আগেই ধরবো, দেহিস।
পান চিবোনো লাল দাঁতে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগল বিল্টু ঘোষ। ইনুজের মনে হল, এ সবই টাকা ধার না দেবার ফিকির। সে আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রবল চেষ্টায় জোরের সঙ্গে উত্তর দিল,
—ক্যান, তুমরা তো আমারে জানো। আমাগো সবকিসু চিনো। ধরতে আইলে তুমরা সব বইলা দিবা।
—ধুর মিঞা! কিসুই বোজে না বলদা। যা তো তুই। মেলা প্যাসাল না পাইড়া, যা আ্যহন। আমাগো কাম কইরা খাইতয়। তর মতোন নদীর চড়ে বয়া থাকলে আমাগো দিন চলবে না। যা যা।
ইনুজ আর কিছু বলে না। মেয়ের মল জোড়া কেনার জন্য সুদে ধার নেওয়ার আর কোনো উপায় নেই। বিল্টু ঘোষের বাড়ি থেকে ফিরে এসে, ইনুজ নদীর চড়ে গিয়ে বসল। ইনুজের ঘর থেকে দূরে দেখা যায় এই নদী। মা-বাবা গেছে, বউ গেছে। ইনুজ এই নদীর চড়ায় বসে থাকে দিনের পর দিন। বয়সের যেন কোনো গাছপাথর নেই তার। কতশত যুগ ধরে যে সে বসে রয়েছে এই নদীর চড়ে, কেই বা তার হিসেব রেখেছে? কচিত কেউ ওখান দিয়ে এলে গেলে ইনুজ তাদের ধরে বসে,
—ও ভাই, বিড়ি আসে নাকি? একখান খাওয়াইবা আমারে?
বিড়ি পেলে, ওখানেই বসে সুখটান দেয়। জলের দিকে নিবদ্ধ দৃষ্টি দিয়ে বসে থাকে ঠায়। আবার কোনো কোনো দিন আমিনা হঠাৎ করেই নদীর চড়ায় এসে ওঠে বাপের খোঁজে,
—ও বাজান, তুমি কী দ্যাহো কও তো এমন কইরা? নদী?
—না রে মা। মাইনসেরে দেহি।
—নদীতে মানুষ দেখন যায়! কী সব আজাইরা কতা যে কও তুমি?
—আজাইরা না রে মা, আজাইরা না। মাইনসের জীবনডাই আসলে আজাইরা। এই যে দ্যাহো নদী বয়। কত কত মাইনসের কান্না বয়, সুখ বয়, কত মাইনসের দেহ বয়, নিশ্বাস বয়, জানো? নদী সওব জানে, সওব শোনে, সবাইরে চেনে। কিন্তু কিসু বলে না। কেবল চুপ কইরা শোনে আর দ্যাহে।
—সে তো নদী দ্যাহে। তুমি কী দ্যাহো তাইলে?
—আমি ? আমি নদীরে জিগায়া জিগায়া শুনি সেইসব। আমি যহন আর থাকব না, তহন তুমিও জিগাইয়ো। দ্যাখবা, নদী তোমারেও আমার সব কথা কইয়া দেবে।
—ধুর! তুমি এহন চলো তো। বেলা গেল। ক্ষুধা লাগসে তো, খাইবা না? পাকা পুঁই-মিচুরি ভাজি করসি। গরম ভাত দিয়া স্বাদ লাগবোখানে খাইতে। চলো।
আজ দুইদিন হল, ইনুজের ঘোর জ্বর। বিছানায় একদম লেপ্টে গিয়েছে ইনুজের হাড় জিরজিরে শরীরটা। বেড়ার চাঁচলের ফোকর দিয়ে অপরাহ্ণের মায়াবী রোদের ছেনালি আর ভালোলাগে না ইনুজের। খড়ের চালাটায় জায়গায় জায়গায় ফুটো হয়েছে। এবছরও বর্ষায় নতুন করে ছাওয়া হয়নি চালাটা। প্রধান সায়েবের বাড়ি একবার যাবে ইনুজ, যদি ঘর ছাওয়ার টাকাটা দেয়। এখন নাকি গরিবগুর্ব মানুষদের ঘর করার জন্য টাকা পাওয়া যাচ্ছে অঞ্চল প্রধানের কাছ থেকে। ইনুজ এসব কোনো খবরই জানে না। আগের হাটে, চায়ের দোকানে জটলায় আলোচনা করছিল সকলে। তারাই বলেছে ইনুজকে, পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে গিয়ে টাকার জন্য বলতে। পঞ্চায়েতের টাকা পেলে, ঘর একেবারে টিন দিয়ে ছেয়ে নেবে ইনুজ। আর যদি কিছু টাকা বাঁচে আমিনার জন্য জমা রাখবে। দিন দশেক পর, শরীরটা একটু জুতে এলে, ইনুজ প্রধানের বাড়িতে গিয়ে হাজির হল। তীক্ষ্ণ চোখে একগাল হেসে, প্রধান সায়েব ইনুজকে কাছে ডাকলেন। সব শুনে, পঞ্চায়েত প্রধান ইনুজকে সাহারা দিলেন,
—আরে ইনুজ মিঞা! তুমি টাকার জন্য কোনো চিন্তা করবা না। বুজলা? আমরা সব এই একই অঞ্চলের বাসিন্দা। তুমি আমারে দেখবা আমি তোমারে দেখব। তোমার দরকারে আমি, আমার দরকারে তুমি থাকবা। নইলে কি চলে বলো? সবাই সবাইরে দেখব।
—আজ্ঞে আমনে যা কইবেন। আমারে দিয়ে যা কাজ হইব, কইবেন।
—ঠিক। এইই তো চাই। ও রবি, যা তো তুই ইনুজের টাকাটা দে। আর ইনুজ, তুমি এক কাজ করো শোনো, তুমি তো আর কোনো কাজ করতে পারো না এখন। তা তোমার মেয়েটারে আমাদের মুরগির পোল্ট্রিতে কাজে পাঠায় দিতে পারবা কাল?
—জী আজ্ঞে।
—বেশ বেশ। রবি তুই গিয়ে নিয়ে আসিস তো আমিনারে।
কৃতজ্ঞতায় ইনুজের গলা বুজে এল। আবেগে আর বেশি কিছু বলতে পারল না। রুগ্ন শরীরে খোদাতালারে স্মরণ করে ইনুজ চলে আসল দশ হাজার টাকা নিয়ে। আমিনার মল জোড়া সামনের হাটবারেই নিয়ে আসবে ইনুজ। তারপর ঘর ছাওয়া।
পরদিন ইনুজ, নগদ পয়সায় স্যাকরার কাছ থেকে মল জোড়া কিনে নিয়ে এলো। টকটকে গোলাপি রঙের পাতলা কাগজের মোড়োকে, ঝকঝকে একজোড়া রুপোর মল! হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে ইনুজ। কী যে অপরূপ! পড়ন্ত রোদে নদীর পাড়ের কাদায়, মাঝে মাঝে এমন আলো ঠিকরোয়; দেখেছে ইনুজ। দৃষ্টি ধাঁধিয়ে যায় সেদিকে চেয়ে থাকলে, অথচ চোখ ফেরানোও যায় না সহজে! ইনুজ ভাবে,
“নদীও কি তাইলে মল পইরা ঘুরে, পায়? হ্যার থিকাই কি ওইরোম কুলকুলানি আওয়াজ আসে তাইলে?”
বাড়ি এসে ইনুজ মেয়ের অপেক্ষায় বসে রইল। সন্ধের পর, রবির মোটরসাইকেলে ফেরত এল আমিনা। কিন্তু এ তো আমিনা না, এ যেন আর কেউ! আমিনার যেন শরীরে কোনো জীবন নেই। জমাট শ্যাওলার মতো একটা জীব।জীবন্ত কিন্তু বোবায় ধরা একটা দলামাত্র। ইনুজ মেয়েকে ঘরে নিয়ে এসে তক্তপোষের ওপর বসাল। ঢিপ করে বসে পড়ল আমিনা। ইনুজ কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে,
—ও মিনা, কতা কও না ক্যান? খুব খাটনি গেসে নাকি আইজ তোমার?
আমিনা তাও কোনো উত্তর দিল না। ইনুজ আর কিছুক্ষণ আমিনার উত্তরের অপেক্ষা করে, শেষে জামার পকেট থেকে মল জোড়া বের করল ইনুজ,
—এই দ্যাহো কী আনসি আইজ। এই যে। দাও দেহি তোমার পাও খান। দাও আমি পরায়া দেই।
মল জোড়ার দিকে চোখ পড়তেই ডুকরে চিৎকার করে উঠল আমিনা। মেয়ে খালি কাঁদে আর গোঙায়। ইনুজ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি নিয়ে। আমিনার হাতে, গলায় নখের খুবলোনো দাগগুলো স্পষ্ট। ইনুজ সেদিকে দেখে। সে মুহূর্তে কী বলে মেয়েকে শুশ্রূষা এনে দেবে, কীই বা এর বিচার করবে, নাকি পিতা-কন্যার মধ্যের সেই নিরুচ্চার ছলনার আশ্রয়টুকুকেই আঁকড়ে ধরবে আজন্মের মতো, ইনুজ সত্যিই বুঝে উঠতে পারে না। বাইরে ঘোর বাতাস বইছে তখন। টিমটিমে কেরোসিন বাতির আলোটা, ঘর জুড়ে হাহাকারের মতো কয়েকবার দপদপ করে হুট করে নিভে গেল কিছুক্ষণ পর। শুধু আমিনার আর্তচিৎকার অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে যেতে লাগল নদীর গর্ভ পর্যন্ত।
এর একসপ্তাহ পর, আরেকবার রবির মোটরসাইকেল এসে থামল ইনুজের উঠোনে।
“কাকা, পোল্ট্রিতে কাজ আছে আজ। আমিনারে যেতে হবে।”
ইনুজ চমকে উঠল। উত্তর দিতে গিয়ে জিভে জড়িয়ে কী বলল কিছু বোঝা গেল না। তবে, আমিনা যেন তৈরিই ছিল।
“পোল্ট্রির কাজ গুলান সাইরা দিয়া আসি বাজান। তুমি খাইয়া নিও কিন্তু। আমার আসতে সময় লাগবো।”
কথাগুলো বলে আমিনা চলে গেল রবির সঙ্গে প্রধানের ছেলের পোল্ট্রির ডেরায়। ইনুজ বিড়বিড় করে কী যেন বলল। কিন্তু তার কোনো কথাই শুনতে পেল না কেউ। মরা দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারল না সে।
হাতের কাজ ছেড়ে, নদীর পাড়ে গিয়ে বসল ইনুজ। সন্ধের পর অবসন্নতা গ্রাস করলে, মল জোড়ার পাশে কান পেতে ইনুজ শুয়ে পড়ে পাড়ের কাদায়। রাতে অন্ধকার নিশ্ছিদ্র হয়ে আসে ধীরে ধীরে। তবু যেন কিসের এক আবছা আলো জলের উপর ঝিকঝিক করে মাঝে মাঝে। ইনুজ ওঠে না। ঘরেও যায় না। শুধু নদীর দিকে চেয়ে থাকে একদৃষ্টে। কী ঠাহর করে দেখে, তা শুধু সে-ই জানে। কখনও মৃদু আওয়াজে ফিসফিস করে কিছু বলে। কিন্তু কেউ শোনে না। গভীর রাতে, পাড়ের ছলাৎ শব্দে হঠাৎ যেন কেউ জিজ্ঞেস করে,
“কী দ্যাহো তুমি?
নদী?
নদীতে কি মাইনসেরে দ্যাহন যায়?
জীবন দ্যাহন যায়?”