গুচ্ছ কবিতা – রাজদীপ রায়

শেয়ার করুন

মারী

অথচ পৃথিবীতে শুরু থেকেই জীবাণু ছিল
মৃত্যু-সম্ভাবনা নিয়ে গড়ে উঠেছিল
পোকার জীবন এই

তবু, তারই মধ্যে কোথাও কোথাও
নক্ষত্রের সংকেতে
মনে হয়েছিল

বেঁচে থাকলে, পৃথিবীকে আরও সুন্দর দেখায়।

আরও একটু দূরে পড়ে আছে অজানা শরীর

শীতকাল এখনও আসেনি
তবুও বরফ পড়ে, হাড় জুড়ে যায়

শকুন নেমেছে, ছিঁড়ে খাচ্ছে
শরীরের অবশেষ

পোশাকের অংশ দেখে মনে হয়
চিনি, তবু আমি তাকে অচেনা করেছি।

পোকা হয়ে গেছি
মসৃণ ভয়ে
তাড়া করে কেউ
আমারই মতন।
অনুবীক্ষণে
তাকে দেখা যায়,
তার হাতি পায়ে
পিষে যেতে যেতে
মসৃণ ভয়ে
পোকা হয়ে গেছি!

সে তোমার মধ্যে চিরস্থায়ী মেঘ,
তবু তাকে ছুঁয়ে না দেখেই
এড়িয়ে এসেছ চলে

সে এখন পড়ে আছে গাছের তলায়;
রোদ স’রে গেলে তার ওপর
পাখি এসে বসে, ক্রমে ক্রমে বাসা বাঁধে।

অনেক শতাব্দী পরে
খনিজ পাবার লোভে
তুমি মাটি খুঁড়ে দেখো
সেখানে আর কোনো মেঘ নেই ;

শুধুই জীবাণু, কালো উপেক্ষায় গিজগিজ করে—

অক্ষম আমি এই কথা শুধু পাখিরাই জানে

আর তুমি জানো সতর্কভুক
দেহ থেকে মন কত দূরগামী

এমনকি মৃতদেহ উঠে বসে
তারও কিছু কথা বলবার ছিল

মাটিতে পোঁতার আগে…

অকারণগুলো খেলা করে।

জ্বরের আতঙ্কে ভুগে কালশিটে শহর
তার পরিখার ভেতরে সন্ত্রাস
তিলে তিলে মধুর হয়েছে
এখন ইঁদুর কোনো অসুখের আনুগত্য নয়।

সীমান্ত পেরিয়ে আসা পরিযায়ী দল
ডানায় কীসের রোগ চেপে রেখে
হারিয়েছে ওড়ার ক্ষমতা?

—সেই নিয়ে গর্ভগৃহে আলোচনা হয়।

এদিকে ভোরের আলো ফোটবার আগে
কিশোরীর বিদীর্ণ পাপড়ি
ধানখেতে ছড়িয়ে পড়েছে,

ভাইরাস একা একা আসে না কখনও।

ছুঁয়ে দিলে পাপ হয়ে যাবে
তাই দূরে সরে গিয়ে

এই খাঁচা বানিয়েছি
এখন আমাকে সব পাখি ভেবে ভুল করে,
দানাপানি দেয়

এ-সমস্ত স্বাভাবিক মেনে নিয়ে হতবাক চোখে দেখি:

তারাও আসলে সব ভাইরাসে অন্ধ হয়ে গেছে!

দূরত্ব বাড়ার আগে দেখে নিচ্ছি শেষবার:
বাজার এভাবেই চেয়েছে, তোমাদের শান্তি
কিংবা এই মুখোশ কেনবার প্রস্তুতি
আরও বেশি সংকীর্ণ করে ফেলছে পোকাদের…

কাল থেকে আর কেউ থাকবে না বাইরে।

রাস্তার কুকুরগুলো দেখবে
রাতে আলো জ্বলে উঠছে চারিদিকে;
অপরাধে লিপ্ত, লোভে ব্যাকুল—সমস্ত
চৌকো চৌকো ছোটো-বড়ো বাক্সের ভেতর।

সংক্রমণের খুব কাছাকাছি বসে
রুটি ছিঁড়ে খাছে একটি পরিবার

এই শেষ রুটি—কোনোক্রমে তিন ভাগ হবে।

[ শীর্ষচিত্র : ধ্রুবি আচার্য্য ]

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *