অতনু চট্টোপাধ্যায়ের পাঁচটি কবিতা
বিশ্বরূপ
মাছরাঙা মাছ ভেবে ঠোঁটে তুলে নেয়
জল নড়েচড়ে।
জোনাকির মতো আমি দপদপ
আগুন পোহাই।
জাম্বুরা ভারি গোল!
গুটিকয় মেয়েলি পুরুষ
লাগাতার নাচে গায়, দুমদাম
ঢুকে পড়ে পুলিশের জিপ।
কাঁহাতক গবাদির মতন নিরীহ
হাত বদলাব-পা
চলে যাবে খাঁটি বিশ্বরূপ।
যে মানুষ টিকে থাকে
তার যদি কিছু টিকে থাকে…
আমার তো ব্যভিচার,
মুখে হাসি বালকসুলভ।
শশধর, বনলতা, তৃণ
সকলেই ফোন করে,
জলের ছায়ার মতো নিশিদিন
ভাতের হোটেলে পড়ে পাত।
অনাথ লেখারা ঘোরে লাইনের ধারে
যদি জোটে পাউরুটি
ডেনড্রাইট
অথবা তামাক।
প্রভাত সঙ্গীত
গ্রহরত্ন, পঞ্চভূত
প্রদক্ষিণরত কত যোনি,
নিতম্বপিশাচ ওড়ে
শাড়ির অঞ্চলে বাঁধা
ক্ষুধাতুর মুখরা রমণী।
ওড়ে সহজাত বোধ
সঙ্গে নাচে নদের নিমাই,
শ্রী-কল্পে উত্থিত শিশ্ন
দেহ, নিচ, লুঙ্গির বাঁধন…
কিছু নিল দ্বিজদাসে,
কিছু রয়, করে আস্ফালন।
যাকে আজ কাছে পাই
তার সঙ্গ ললাটচন্দন।
বাগানে ফুলের শিশু
বরষায় কাদা মাখে,
নয়নে অঞ্জন।
খোল করতাল বাজে
পুকুরে কলঙ্ক ভাসে,
ভেসে ওঠে মন।
দেবতা নিষ্কৃতি চায়,
প্রতিমা দর্শনে যাবে, মুখে খিস্তি
অঙ্গে প্রসাধন।
ঘটোৎকচ ১
তিনটে কবিতা লিখে শেষ হয়ে যাব।
এই নৈশ টেবিলে আরামের পাপ লেখা আছে ।
“ভীম সেন ঊরু পেতে তুলে নিল মাথা
রাক্ষস শুয়ে আছে, গৃধিনী ধুলোয়।”
যেকোনো ছুতোয়, এই উল্লেখটুকু-
বিষাদের অবশেষ ভাগ,
মাছের কাঁটার মতো পড়ে আছে পাতে।
অক্ষম চিরদিনই সংশয়ে একা
তবুতো মাতৃঋণ মাসির প্রতিও
রাখা থাকে।
“ভীম সেন ঊরু পেতে তুলে নিল মাথা
রাক্ষস শুয়ে আছে গৃধিণী ধুলোয়।”
আলো আসে, আলো যায়, আলো সর্বগামী,
মর্গের আলো দিল ছুঁচেবোনা লাশ, ক্ষণিক বিরাম।
নীলসাদা পুলিশের খাতা, মায়াকাননের
পথে তোমার পিতার নামে গাছ পোঁতা হবে।
আত্মহত্যা মানে আরোগ্য গাছ।
যদিও উপমাখানা আদ্যন্ত ভুল
ভীম সেন মুখে পোড়ে ভুলের কলিজা ছিঁড়ে
রক্তের ফুল।
তিনদিক ফাঁকা, সন্ধে ঘনিয়ে আসে ধীরলয়ে…
আকাশের গায় ফোটে নিখুঁত সেলাই ।
কাছে যাই, দূরে দূরে থাকি…
ঘটোৎকচ ২
চল হে “কাপ্তান বাবু”, ধার-বাকি
বিষ্ঠাতপ্ত জামা।
চল দেখি মনোরথ,
তপোক্লিষ্ট মানিব্যাগ
ক্ষুধামন্দ, কন্যার শাসন।
রাত্রির অগস্ত্য চল
সঙ্গে নাও গূঢ় সম্ভাষণ।
যবনিকা দুলে ওঠে
অস্ত্র ধর বাঙালি গ্যারিক।
অদ্য শেষ বোঝাপড়া,
ঝর্না যেন কলমের দাস,
অযাচিত ঝরে পড়ে
দাগ লাগে, লাগে ঘূর্ণিপাক।
নর, রথী, তিরন্দাজ
পুরাভূত রুগ্ন সারমেয়
মুদ্রাদোষে ডেকে ওঠে
সঙ্গ দেয় আঠালো মন্দার।
মুখোমুখি সভাসদ
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর
যুক্তি, বুদ্ধি, শীর্ণকায়া দাগ।
উৎকর্ণ জামগাছ,
দ্বিধাদীর্ণ জামগাছ,
অসংলগ্ন দুঃখবতী ছায়া।
ঘটোৎকচ ৩
অঝোর তন্দ্রায় ওঠে যদি নিশিচাঁদ
অতিকায়, তখন সরল মাঠ ভেবে,
জলাশয়, ভাঙা ঘাট ভেবে
নেমে যাব দুই ভাই,
শ্মশান যাত্রীদের বিবেচনা
দেশলাই জ্বেলে দেখে নেব মুখ।
যা ছিল কঠোর, এতটা আসার পর
তাই দেখি হাস্য কবলিত।
নধর তুলোর বীজ চুলে এসে লাগে।
মেষপালকের নিচু দিন,
গুহার আধারে ভাঙা ভাঁড়,
পশু হাড় ফুটো করে গড়ে তোলা বাঁশি।
বারবার কেন আসি
পোড়ামুখ ডাকিনী পাড়ায়?
এখানে তো সবকিছু কল্পতরুময়,
মাতৃ আরাধনা।
Bhalo laglo besh
বিশ্বরূপটা ভীষণ ভালো লেগেছে।
Darun👌
খুব ভালো লেগেছে। যদিও কবিতার খন্ডাংশ উদ্ধৃত করে কিছুই বোঝানো যায় না, তবু ‘ঘটোৎকচ-১’-এর
এই অংশটুকুর প্রতি যুগপৎ শ্রদ্ধা ও ঈর্ষা রেখে গেলাম:
‘যেকোনো ছুতোয়, এই উল্লেখটুকু-
বিষাদের অবশেষ ভাগ,
মাছের কাঁটার মতো পড়ে আছে পাতে।’
কবি অতনু চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় কবি। কবিতার প্রকৃত পাঠক ওঁকে ঠিক খুঁজে নেবে।
Osadharon