তুষের আগুন – হাংমিজি হাঞ্চে অনুবাদ: তপন মহন্ত
[লেখক পরিচিতি: হাংমিজি হাঞ্চে ইরিগেশন ডিপার্টমেন্টের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। কারবি ও অসমিয়া, দু’টো ভাষারই প্রতিষ্ঠিত লেখক। কয়েকটি গ্রন্থের প্রণেতা, কবি, গল্পকার, অনুবাদক হিসেব পরিচিতি। তাঁর লেখা ‘ফে-এ আমে’ শীর্ষক কারবি ছোটোগল্পটির লেখক কৃত অসমিয়া অনুবাদ ‘তুঁহ জুই’ থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন তপন মহন্ত।]
অ্যালুমিনিয়ামের পরিচিত থালাটি থেকে একটু ভাত নিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে অভ্যাসমতো ইষ্টনাম নিতেই বাইরে থেকে কারো কাশির শব্দ শোনা গেল। সকাল থেকেই গ্রামীন ব্যাংকের হিসেব মেলাতে না পেরে মনটা এমনিতে খারাপ, তদুপরি ভীষণ খিদে পেয়েছে, মুখে তুলতে না চাওয়া তরকারি দিয়ে ভাত খেতে বাধ্য হওয়ায় মনটা এমনিতে বিগড়ে ছিল। এমন সময় আবার কে এল! মোটকথা, রাগে বারিকার মেজাজ বিগড়ে যায়।
“বাবা! তিমুং বাড়ির পিসেমশাই এসেছেন।” পুত্র লঙ্কি তার স্কুলের বই তাকে ছুড়ে খবরটা জানিয়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করে। ব্যাংক থেকে কিছু টাকা ধার করার মতলব নিয়ে এসেছেন জেনে তিনি বললেন, “যা বাবা! তাঁকে কিছুক্ষণ বসতে বল গিয়ে। বলবি ভাত খেতে বসেছি।”
—“ইস্, আমার খুব খিদে পেয়েছে, যা কাজির, তুই গিয়ে বল।” লঙ্কি তার জামাকাপড় খুলতে শুরু করে।
—“তুই যা তো! তোর বোন ভাত খাচ্ছে।”
—“ইস্, আমি যাবো না।”
—“শুয়োর কোথাকার! গেলি না?” চেপে রাখা রাগটা আবার বেরিয়ে আসতে চায়।
—“সব কাজ আমাকেই করতে হবে”, বলে লঙ্কি বিড়বিড় করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাইরে যায়।
কচুর ডাটার কালাংদাং দিয়ে ভাত মেখে খাওয়া শুরু করেন বারিকা। কয়েক গ্রাস খাওয়ার পর গলায় কচুর চুলকানি অনুভব করেন। মনে হয় লবণ কম হয়েছে। “ওগো! একটু লবন আর দু’টো কাঁচালঙ্কা দিও তো।” পুত্রকে খেতে দিতে রান্নাঘরে যাওয়া স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন।
—“লবণ ফুরিয়ে গেছে। আজকের রান্নার লবণটুকু আমি তেরাঙের ঘর থেকে মেগে এনেছি। স্ত্রীর গলার স্বরটা ভালো না লাগায় তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হলেন, “গত হাট থেকে আমি তো দু পোয়া লবণ এনেছিলাম! কীভাবে ফুরিয়ে গেল? এমনিতে সামর্থ নেই, একটু হাতটান করে চালাতে হয়।” তাঁর কথাটা যে শ্রুতিমধুর হয়নি, এটা তিনি নিজেই বুঝতে পারেন।
—“ছেলেমেয়েরা আমের কুশির সাথে খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। কতটুকুই বা থাকে! মণে মণে আনলে তবু কথা ছিল, দু পোয়া লবণই তো!” স্ত্রীর মেজাজ যে চড়া হচ্ছে, তাঁর কথার সুরেই বারিকা ধরতে পারেন।
—“তুমি নজর রাখতে পারো না? তুমিও মানুষ আর… ”
—“আমি তো একলা মানুষ! খড়ির যোগাড় করব, না জল আনতে যাব। তুমি তো সারাদিন টোটোকোম্পানি করে ঘুরে বেরাও। শেষে যত দোষ নন্দ ঘোষ।” ভাতের থালাটা লঙ্কির সামনে ঠক করে ঠেলে দেয় তার মা।
—“এলাকার জন্য, মানুষের জন্য টো টো করে ঘুরে বেড়ালে লবণ আর শুকনা মাছ ঘরে আসবে না। আমি মেয়েমানুষ, আমি এসব কোথায় পাব।”
—“এগুলো গলায় ধরছে, এই তরকারি আমি খাব না।” পুত্র লঙ্কি থালাটার একপাশে কচুশাকটা সরিয়ে রাখে।
—“না খেলে খাবি না, আমার বয়ে গেল! আমি তো এগুলোই খেয়েছি। ঘ্যানঘ্যান করিস না।” বারিকার রাগটা ক্রমশ চড়তে থাকে।
—“মা, আর কিছু নেই নাকি?” এবার লঙ্কি আদুরে গলায় মাকে বলে।
—“নেই নেই, কিছু নেই। এবার মার খাবি।” মায়ের গলাটা আগের চেয়ে বেশি রুক্ষ হয়ে উঠছে।
—থামো তো! সবাই চুপচাপ থাকো! ভাত খেতে বসে যুদ্ধ শুরু করতে হবে নাকি? কথাটা বলে নিজের রাগটা চেপে আরেক গ্রাস ভাত মুখে নিয়ে গিলে ফেলেন বারিকা।
কম লবণে রান্না করা কচুশাক খেয়ে গলার চুলকানিটা যেন আরও বেড়ে গেল! “মানথু” একটু থাকলেও চলত। নেই জেনেও সেই কথাটি আবার ভাবেন। গত হাটে সে যায়নি, মানে যেতে পারেনি। উমসেরেতের সালিসিতে যেতে হল। নইলে তেরাঙ মণ্ডলের ঘর ছাউনি দেওয়া বাবদ অল্পকিছু পাওনা ছিল। লবণ আর শুকনো মাছ হয়ে যেত। গাঁওবুড়ার বদলে তাঁর সালিশি দরবারে যাওয়াটাই কাল হল। শুধু এবারের কথাই নাকি? প্রতিবার একই কথা। হাজার একটা বিবাদ গাঁওবুড়ার বদলে তাঁকেই মেটাতে হয়। জনগণের কাছ থেকে যত চাঁদা সংগ্রহ হয় তার সবটাই গাঁওবুড়া খেয়ে ফেলেন। প্রশাসনের ঘরেও জমা পড়ে না, জনগণের কোনও সামাজিক কাজ সম্পন্ন হয় না টাকার অভাবে, অথচ জনগণ চাঁদা তো দিয়েই থাকে। কোনো কোনো মেলমিটিংয়ে জনগণ চেপে ধরায় আজকাল গাঁওবুড়া মিটিংয়েই যান না। শেষে হাজারটা সমস্যা থাকলেও রিছবাছা বারিকাকেই দায়ভার নিতে হয়। সভাসমিতিতেও যেতে হয় বারিকা রিছবাছাকে। গাঁওবুড়া দিনে দিনে এত অকর্মণ্য ও অলস হয়েছেন যা বলা না-বলা সমান কথা। ফলে পৃথিবীর যাবতীয় ঝুটঝামেলা যেন বারিকারই।
ছেলের ঘ্যানঘ্যানানি যত বাড়ছে স্ত্রীর গর্জনও ততই বেড়ে চলেছে। মোটকথা এটা প্রতিদিনের ঝামেলা। তরকারিটাও এখন একেবারে অখাদ্য শ্রেণিতে পড়ার মতো লাগছে।
—“মা, আরেকটু ভাত দাও না!” মেয়ে এবার বলে।
—“ভাত নেই, কখন থেকে খেয়েই চলেছিস, পেট ভরে নাই? রাক্ষসি না পিশাচি তুই! পেট না যেন নৌকা! উঠ, যা থালা বাসন, হাড়ি কড়া নিয়ে এগো।”
—“ইনিও আর কী, প্রতিদিন রণক্ষেত্র। মুখে মিষ্টি বুলি নেই বললেই চলে।” কবে থেকে যে মিষ্টি কথাগুলো হারিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। অথচ বারো তেরো বছর আগে ফলবতী আম বাগানের পরিচর্যার সময়, ধানের চারা তোলা ও বোনার সময়, খেত নিরানোর সময় কী মিষ্টি গলাই না ছিল এনার!
এখন দারিদ্রতা সব শুষে নিল মনে হয়। মুখ ফুটে বলে, “নে নে, মা আমার! আমার ভাগেরটা নে। আমি এমনিতে আর খেতাম না”, বলে তাঁর থালাটা মেয়ের দিকে ঠেলে দেন।
থালাটা এগিয়ে দিতেই তাঁর মনে তিন চারটে ভাবের উদয় দোলা দিয়ে যায়। প্রথমত অখাদ্য খাবার খাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া। দ্বিতীয়ত তাঁর পেট ভরে নাই। তৃতীয়তণ কন্যার প্রতি স্নেহ। এরপর যদি কথা কিছু বের হয় সেটা স্ত্রীর গর্জনের শব্দ। এই শব্দ পাড়ায় পাড়ায় শত সহস্র গু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারিত হবে। এই মহৎ কাজটা বৈঠকখানায় বসে থাকা তাঁর মেহাই চংকদঙই করে দেবেন। এরপর বড়বাড়ি থেকে বড়দা ডেকে পাঠাবেন, “তোর বউ, ছেলেমেয়েকে ভাল করে খাওয়াতে পরাতে পারে না, তুই জনগণের কাজ করতে যাস? আমি তোকে আগেই বলেছি, তুই পারবি না, অথচ তুই মানতে চাস না। এখন তোর বদনাম না শুনে অন্যের বদনাম শোনা যায় না। তুই কীভাবে এমন অপদার্থ, বোকা হলি রে!” মোট কথা যেখান থেকেই শুরু করুক না কেন ঝামেলাতেই শেষ হবে। মানুষের ঘরে হাঁসে সোনার ডিম পাড়লেও বারিকার ঘরে বিষ্ঠাই পারবে, ডিম আর পারবে না।
তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে বৈঠকখানায় আসেন বারিকা। চংকদংকে চেরেং পাতার বিড়ি টানতে দেখে একটু আশ্বস্ত হলেন। “অনেকক্ষণ বসে থাকতে হল হে, খারাপ ভেবো না, ভাত খেতে বসেছিলাম, বুঝলে।”
—“না, না, কেন খারাপ ভাববে, হে ফুমেন? মাছ-মাংস কিছু আছে নাকি? এটা জানলে ধারে বোতল একটা নিয়ে আসতাম, রিছবাছা।
—“কচু শাক ছিল হে! কোথায় পাব মাছ-মাংস। এমনকী মানথুও নেই, বুঝেছ?”
—“নেই, নেই বলে শুধু কাঁদুনি গাইছেন, আপনারা এমনিতে রংপি বংশেরই তো, তাই না?” চংকদঙের কথার ধরনটা ভালো না লাগলেও বর্তমানে বারিকার বলার মতো কিছু ছিল না। তাঁর ঘরে অভাবের কথাটা কেউ যখন ভাবতেই পারে না, চংকদং কেন আলাদা কিছু ভাববেন? সুতরাং তাঁর আর কিছু বলার ইচ্ছে হল না। সেও নীরবে চুরাং টানতে থাকেন।
ঘরের ভেতরে ছেলের ঘ্যানঘ্যানানি, স্ত্রীর গালাগালি মুখ বুজে সহ্য করতে হওয়ায় হাঁড়ি-কড়ার শব্দ, কন্যার ঝগড়া, সব মিলেমিশে এক অদ্ভুত ঐকতান তাঁর কানে বেজে ওঠে। চংকদঙের কান খাড়া করার ভাবগতিক দেখে সে ‘ফস্’ করে দেশলাই জ্বেলে বলে, “শুধু এখানেই না অন্য কোথাও যাবার জন্য বেরিয়েছেন?”
—“শুধু এখানেই এসেছি। সেদিনের কথাটা নিয়েই এক চক্কর ঘুরে গেলাম।”
—“সেক্রেটারি কী বললেন?”
—“আগের কথাটাই বললেন। গাঁওবুড়া আর অ্যাকাউন্টটেন্টের কাছেও হিসেব আছে, টাকাও আছে বলে আবার জানালেন।”
—“তিনি মিথ্যা প্রবোধ দিয়েছেন!” বারিকা ভাবেন। শিক্ষিত মানুষ বলে তাকেই সেক্রেটারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লাংপি ব্যাংকে তাঁর নামেই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এখন সব দায় বারিকার কাঁধে।
—“তাহলে গাঁওবুড়া কী বললেন?” চেরেংয়ের একগাল ধোঁয়া ছেড়ে তিনি জিজ্ঞেস করেন।
—“ঘরে নেই। কোথায় যেন পূজা সারতে গেছেন। গতকালই গেছেন মনে হয়।”
-“এখন কী করা যায়?” নিজেকেই যেন জিজ্ঞেস করেন তিনি।
—“আপনারই বলতে পারবেন। আমরা কীভাবে জানব?” চংকদঙের গলার স্বর আস্তে আস্তে সপ্তমে চড়ছে।
—“তাহলে সেক্রেটারি ঘরে আছেন কি?”
—“একসাথেই তো বেরিয়ে এলাম। নিলামের জমায়েতে যাবেন নাকি!”
—“আমি একা এখন কীভাবে কী করব?”
—“তোদের মাঝের এই ঠেলাঠেলিটাই অসহ্য লাগে।” এবার তাঁর কথার সুর বারিকাকে নাড়িয়ে দেয়।
—“কী ঠেলাঠেলির কথা হে?” আস্তে আস্তে বারিকার রাগটা আবার এসে যায়, “টাকাগুলো ব্যাংকে আছে, টাকা জমা বা ওঠানোর কাজটা গাঁওবুড়া আর সেক্রেটারিই করে, আপনি জানেন না? আমি শুধু হিসেবই রাখি, বুঝেছেন?”
—“গাঁওবুড়ার ওখানে গেলে সেক্রেটারি ও হিসেব রক্ষকের কথা বলেন। সেক্রেটারির ওখানে গেলে গাঁওবুড়া আর হিসেব রক্ষকের কথা বলেন। এখানে এলে আপনি গাঁওবুড়া আর সেক্রেটারির কথা বলেন। এসব কেমন কথা?” চংকদং এবার চেপে ধরে।
—“আমরা তো আলোচনার মাধ্যমেই সব করেছি। এখন একা আমাকে দুষলে কী হবে? বারে বারে মিটিং ডাকলেও তো মানুষ আসে না। আমি কী করতে পারি?”
—“অকাজের মিটিংয়ের কথা বাদ দিন। মোট কথা জনগণের টাকা তোরা কিছু একটা করেছিস?”
—“তোরা কথাটা বলবি না। আমি তো টাকা হাত দিয়ে ছুঁয়েই দেখিনি। জনগণের সামনে সর্বদা হিসেব দাখিল করি। আমাদের ব্যাংকে টাকা জমা আছে।”
—“আছে যদি প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না কেন? বিপদে আপদে লাগতে পারে ভেবে আমাদের না খেয়ে জমানো টাকা তোরা খেয়ে নিলি!”
—“এভাবে বলবি না তো। জনগণের সামনে ওদের ধরা উচিত। লাংপি ব্যাংকে গিয়ে গিয়ে দেখতে হয় খাতা-বইয়ে টাকা আছে না নেই।”
—“আপনাদেরই দেখা উচিৎ। আমরা চাষা মানুষেরা কী জানি! আমাদের জমানো টাকা ফেরত পেতে হবে, শুধু এটুকুই জানি।”
—“আপনারা মিটিংয়েও আসেন না, লাংপি ব্যাংকে গিয়ে হিসেবটাও দেখে আসেন না। এখন আমিই বা কী পরামর্শ দিতে পারি? আপনিও তো কোনোদিন মিটিংয়ে আসেননি!” রাগে বারিকা ঘেমে ওঠেন।
—“আমি একা না এলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। দুর্বল বলে সর্বদা আপনি আমাকেই দুষবেন?”
—“শুধু আপনার কথা বকি নাই। এভাবে জনগণের কষ্টের টাকা দু-একজনকে খেতে দেওয়া যায় না ভেবেই বলেছি।”
—“সেজন্য সবাইকে জমায়েতে আসা উচিৎ। একজোটে সবাইর হিসেব চাওয়া উচিৎ। পাওনা টাকা আদায় করতে হয়। এটাই বলতে চেয়েছি।” ভীষণ রাগ চেপে কথাগুলো খুব আস্তে আস্তে বলেন।
—“এভাবে চলবে না কিন্তু, জনগণের টাকা মেরে বসে থাকলে চলবে না।”
—“আমি তো সে-কথাই বলছি। যেই খাক না কেন, আমরা সবাই মিলে টাকা আদায় করব। এটা দু-একজনের কাজ নয়। আপনারাই বুঝতে পারেন না।”
—“আমরা কী বুঝতে পারি না হে, আমরা সবই বুঝি। আপনারাই জনগণকে ঠকিয়ে এসেছেন এতদিন।”
—“শুয়োরের বাচ্চা, স্ত্রীর গলা ফাটানো চিৎকারে আঁতকে উঠে বারিকা। ভাতের পাতে বসে ঘ্যানঘ্যান করবি না। আমরা মেয়েমানুষ হয়ে গতর ভেঙে মরি। বাপটা তো জনগণের চাকর। ছেলে-মেয়েদের খবর নেওয়ার সময় নেই। আমি মরলে খুব সুখ হবে না মানুষটার…”
বারিকা ঘরের ভেতরে ঢুকে ছেলের হাতে ধরে টেনেহিঁচড়ে উঠোনে এনে গোটাকয়েক কিল মারতেই পৃথিবীটা নিঝুম হয়ে গেল। ছেলে ফুঁপিয়েছে, কিন্তু শব্দ হয়নি, স্ত্রীর গালিগালাজের শব্দও নেই, কন্যাও হাঁড়ি-কড়া ছুঁড়ে ফেলেনি।
চংকদং আস্তে আস্তে উঠে রাস্তা ধরে। ‘আসি’ বলে একবার সৌজন্যের হাঁকটাও পাড়েননি।
মূল কারবি শব্দের অর্থ:
১) কালাংদাং – কারবিদের রান্নার পদ বিশেষ। এখানে তেল বা খারের ব্যবহার হয় না। শুকনো মাছ, তিল বাটা, আদা ও রসুন প্রধান উপকরণ।
২) মানথু – শুকনো মাছ।
৩) উমসেরেত – পশ্চিম কারবি আংলংয়ের পুরনো একটি গ্রাম।
৪) ফুমেন – শ্যালক বা শ্যালিকার পুত্র।
৫) চেরেং – শাল পাতায় মোড়ানো বিড়ি।
৬) রিছবাছা – সহকারী গাঁওবুড়া।
৭)তিমুং, রংপি… পুরুষতান্ত্রিক কারবি সমাজ পাঁচটি প্রধান গোষ্ঠী বা ‘কুর’ নিয়ে গঠিত। এই পাঁচটি প্রধান ‘কুর’— ইংতি (লিজাং), তেরাং (হানজাং), ইহিং (এজাং), টেরণ (ক্রোনজাং) এবং তিমুং (তুংজাং) আবার অনেকগুলি উপ-গোষ্ঠীতে বিভক্ত। ইহিং গোষ্ঠীরই একটি উপগোষ্ঠী ‘রংপি’।