সিন্টু প্রধানের পাঁচটি কবিতা
পোশাক
তোমার চাদরটার সাথে আজ দেখা হয়েছিল। এই শীতের সকালে ওই একটা চাদর কতজনের গায়ে ঘুরছে তা আমার জানা নেই। জানা নেই ঠিক এই মুহূর্তে কতজন রোদে শুকোতে দিয়েছে চাদরটা। কেবল দেখা হয়ে যায়… তোমার পাজামাটার সাথে, ওড়নাটার সাথে, চাদরটার সাথে, অন্য অন্য শরীরে।
তোমার প্রতিটা চুড়িদার গোছানো আছে আমার মাথার ভিতর। তারা কখনো পুরনো হয় না। কেবল অনুমতি ছাড়াই রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে পড়ে। দেখা হয়ে যায়।
এখন ভীষণ ভয় লাগে সংস্কৃতি নিয়ে। যদি কালচার বদলে যায়! যদি সবাই বোরখা পরতে শুরু করে অথবা জিন্সপ্যান্ট-গেঞ্জি! তখন তোমার পোশাকগুলোর সাথে দেখা হবে না আর।
ভ্যালেন্টাইন ডে
পিছোতে থাকুন। তিন-চারটে বাগান পিছোনোর পর শেষ খেয়ে ফেলা কামরাঙাটির কথা ভাবুন,
আপনি বিগত সাত-আট বছর কামরাঙা খাননি আর।
আসলে কেন্দ্র সরকারের দু-কিলো চালের মতো সব কিছুই মাথা পিছু ধার্য্য করা থাকে। আপনি জীবনে ক’টা বিস্কুট খাবেন, ক’বার হোঁচট খাবেন, এমনকি কতবার কেস খাবেন…
এই ভেবে পুরোনো প্রেমিকার কথা ভাববেন না আর।
সেও এই প্রথমবার খোলা রাস্তায় আইসক্রিম খাচ্ছে। এই প্রথমবার মোবাইলে ছবি তুলে পাঠাচ্ছে কাউকে। আপনার এক বন্ধু স্যাটেলাইট হয়ে পৃথিবী পাহারা দেয়। আর এক বন্ধু নদীতে ব্যারেজ লাগানোর কাজ করে। আপনি অন্তত এবার গোয়েন্দাগিরিটা ছাড়ুন।
ভ্রমণ
কিছু কথা আছে
যেগুলো থাকতে নেই
থাকলে সেতু তৈরি হয়
ঋতু পরিবর্তন হয়
অতীত থেকে উঠে আসে ইবন বতুতা
আমি চাই না, সতী দেহখণ্ডের মতো আমারও শরীর ছড়িয়ে পড়ুক অখণ্ড ভারতের সীমানায়।
আমি চাই না প্রাত্যহিক জীবনের ঘুম নিয়ে ধ্যানের ভিতর জেগে উঠতে।
এইসব পরাবাস্তব সোনালি মোড়কে মোড়া সৈকতময় চোরাবালি
কেবল লোভ দেখায় কঙ্কালটি উদ্ধার করা হবে।
সেই লোভে ধরা পড়ে আমার ইহজন্ম কিছুতেই কঙ্কাল করব না,
কিছুতেই কঙ্কাল করব না।
কিছু কথা আছে, থাকবে না—
আবদ্ধ না করলে স্পিরিটের মতো উড়ে যাবে
স্বপ্নের মতো ভেঙে যাবে
ছেড়ে দিলে অন্য ঘাটে ঠেকে যাবে
নিরাশ্রয় বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবে
স্থিতি
চুপ করে মরে যেতে হয়,
লোকাল অথবা এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায়।
না হলে যেখানে নামার,
সেখানে তুমি নামতে পারবে না।
কেবল আর কিছুকাল বেঁচে থাকার আশায়,
সবাই অন্য অন্য জায়গায় ছড়িয়ে গেল।
যার যেখানে যাওয়ার কথা নয়,
তারা সেখানেই ঘুরছে, পাগলের মতো ঘুরছে।
বেলুন
বেলুন ফেটে যাওয়ার পর কিছু বাতাস ফিরে আসে ফুসফুসে। যা তুমি ভরে দিয়েছিলে। বাকিটা ছড়িয়ে পড়ে খোলা আশমানে।
এই ফিরে আসা ভীষণ তির্যক…
যেমন মোনালিসার ছবিকে ভৌতিক বলে মনে হবে এবং সেই ভূতের পাল্লায় পড়ে তুমি আর এই জগতে ফিরতে চাইছ না। মনে হবে পৃথিবীর সব জুয়া খেলা পাহাড়ের ঢালে হয় এবং কত জিতেছো তা জানতে সমস্ত হেরে যাওয়া লোককে খুঁজে বের করতে হবে।
বেলুন একটি অসাধারণ খেলনা, যা কিনা বুকের বাতাস খেয়ে বড়ো হয়। শক্ত করে ধরলে ফেটে যায়, হালকা করে ধরলে উড়ে যায়।
বেলুন কখনো হারায় না। কেবল ফেটে যায়, আর মাটিতে পড়ে থাকে মৃত চামড়া।