শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়ের পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

বসন্ত পূর্ণিমা

রোজ সকালকে বলছি আকাশের নামান্তর
আমার তোমার মাঝের এই এক তীব্র প্রত্যয়
এভাবে আমি ও তুমির সাংসারিক মিঠাতান
বলি মাতৃত্ব বুঝিয়ে দাও
বলে যাই দাম্পত্য কেন-না
বলা যায় না নীরবতা
হাক্লান্ত বসন্ত!
পূর্ণিমা খাচ্ছি এখন মাঝরাত
ক্ষুধা, অশ্রুর অস্তরাগ
এ বিচলন সময়ের হতদ্যম
মাংস রান্নার রংটা তিতকুটে
মাংস রান্নার স্বাদটা এমারল্ড
বদ্ধ উঠানে মঞ্চ আবির, দোলের যাত্রা
এত সোচ্চার! যেন নাভির উচ্চারণ
হাঁটু ভাঁজ করে ক্ষমা চাইছি পাহাড় আনত
পাহাড়িয়া কাঙ্খা মাগো পায়ের নিগূঢ়
আমাকে শিখিয়ে যায়
তুলসি ও কাঞ্চনের সান্ধ্যছায়া
এবার বুঝি সময় এলো, সমস্তটাই বলতে চাওয়া।

গেরস্থালি

সম্পৃক্ত হয়ে আসা ভোরের পাখিকুল
মেনেছি কি তবে মায়ের দূরাস্ত
সকালের আকাশ অভিমান রঙের
সকালের বাতাসে অভিমানী আতপ
উঠান ঝাঁটের সংকীর্তন
বড়ো ভয়ের আদলে গাছেরা নিরুত্তেজ
আমার শুধু অপারগ নামের নির্বাচিত
কী ভাবে রোদের আদল আঁকে তা তো জানি না
বিষাদ মাখা ব্রিজের সাতকাহন
তবু বলছি ভালোবাসার পূর্বাপর
ভুল বুঝতে পারার রং যেন আতপ গন্ধ
যোজনগন্ধা তোর ভোরের শীতলতা!
পাহাড়ি রাস্তার বাঁক ভাবছিলাম
ভাবছি বেশ মেঘেদের পিছুটান
সমঝোতা করে নেওয়া শব্দের আলেয়া
আজ সকালের দিব্যি
খিদা পেটে ঘুমের অন্তরঙ্গতা

অনুতাপ

নিখাদ চিলতে বিস্মরণ স্রোতের কুর্নিশ
আগামী আগামী বলছে কণ্ঠস্বর
আমার তো বিগত সফরগুলিতে সামিয়ানা
আমাদের ন্যাড়াপোড়া বসন্ত সন্ধ্যার বর্ণিলে
আবিরে নম্র জান, গত রাতের পূর্ণিমা রাক্ষস
অনুতপ্ত, একটা সময় ও তেহাই
আমার তাল মেলে না অথৈ নির্জনতার
আমার তাল মেলেনি রোদের আদল
এইভাবে আমি একটা জ্বলন্ত ভষ্মগান
বড়ো বেগতিক নিংড়ে দেখা হৃদয়ী দোঁহা
জান, তুমি এইভাবে হয়ে ওঠো মৃদুনয়না
কণ্ঠস্বরের নিখাত, শিখিয়ে দাও ভালোবাসা
মায়ের মতো দূরত্ব গুনে গুনে উন্মোচন
আঁকড়ে ধরার নাম যদি হয় নির্বাসন
আমাদের এক ইতিকথার কেন্দ্র পাহাড়ি
আমরা কি জানি ঢাল গুনে নামার অন্তরঙ্গতা!
অপেক্ষা নামের গাছটার গা-বেয়ে শুয়ে
শ্লথ চারণের প্রপাতে অম্লান গুলিয়ে ওঠা
রং, রং আর রং গুলছে বিষণ্ণতা।

উৎরাই

চিনে নিতে নিতে পথ হাঁটছে
উৎরাই বড়ো সন্দিহান ও মুখচোরা
উৎরাই কেমন হোঁচট ও ট্রামের সাঁঝবেলা
নিঝুম এবেলা প্রাচীন এক মাতৃকা শিখি
মুখ ফুটে বলা যায় কি মা হতে চাই না!
বিষাক্ত এক আখর জড়িয়ে ধরে নাভিমূলে
অক্ষর পাক খায় সমস্ত শরীরে, স্নায়ু সুখ
আজ বড়ো হতে চাইছে যেখানে যার অহঙ্কার
মৃত্যু শ্বাস শিরশিরে তোর কণ্ঠস্বরের পলাশ
শুকনো পাতার বাইরে হাঁটছে ধূ ধূ বসন্ত
আঘাতে তোকে কেমন দেখায়?
মলিন একটা রেখা আঁকলাম জাতিস্মর
তুমি ঠিক জেনে নিও, তোমাকে যতটা দৃশ্যত
আদরের কি কোনো মাঝপথ থাকে?
আদরের কি আদৌ কোনো পথের ঠিকানা!
একটা কাঙাল করা ভয় কেটে দিচ্ছে প্লাজান্টা
আর জন্ম দিচ্ছি, বিষাক্ত অক্ষর যত কুয়াশা
বলতে চাইছি ভালোবাসা, বলতে শেখাই জনশ্রুতি
পর্দার রং ওঠা এতাবৎ যেন উপত্যকা পাহাড়িয়া

শ্রুতি

সত্যিই কি তবে সামলে নিতে হয়, নক্ষত্রপাত
ও কেঁদে ফেলা। ভিক্ষার সময় দৃঢ় একটা
বিশ্বাস কাজ করে, পলাশ রঙের সূর্য
জঙ্গলের মাঝে চাপা হাসির আস্তিন
ঘুম জড়ানো চোখে পঙ‌্‌ক্তি খুবলে পায়ে-পায়ে
দ্বিতীয় প্রহর, রাত বাড়ার অন্তিমে শিহরণ
পাখির খাওয়ার হয়ে যাচ্ছে মেহগিনি ফল
পাখির চিবুকের রেখা ভেঙে মৌন শব্দেরা
মা ডাকের গভীর হতে সামলে রাখার ভঙ্গিমা
অন্ধ অভিসার চোখের গহীন ঘুমকাতুরে
দুপুরের হাওয়ায় ঋণ মিটিয়ে আঙুল
চূর্ণ কুন্তল, বড়ো ছোঁয়াচে দশমিকে আঁচড়
সুর তোলা বহুপ্রেমের দুচোখ, নিরাময়ে
গল্পের বাদ্য আমার শরীরে লেখে শ্রী
কপালের সাঁঝবেলা ঠোঁটের প্রদীপে আঁকি
আমার কি অপেক্ষার রং গিয়েছে বদলে!
আমার অপেক্ষায় সুর লাগে কি মা কড়ি মধ্যম?
অপারগ ছাইরঙা আকাশ তবু তো নির্বাক, লেহনে।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *