পাঁচটি কবিতা – শাশ্বতী সরকার ও সৌম্যজিৎ রজক
শাশ্বতী সরকারের তিনটি কবিতা
যেন গান মনে থাকে
১)
আর দুঃখ নয়, মা ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছে ভাত
অন্নজল অভাবের দেশে ধানখেতে ফুটে উঠছে খুঁটি, বিদ্যুতের তার জুড়ে বসে আছে শালিকের জোড়
তুমি যেন গজে নয়, পাহাড় থেকে সোজা নদীর উপরে চেপে এলে
প্রকৃতই পর্বতদুহিতা এই শাদা জলধারা
২)
বিরাট রাজার বাড়ি। সৈরিন্ধ্রী এলোচুলে ঘোরে। কী আশা করেছিলে? শীতকাল — পাথরের দেশ, জল যতটা গরম হয়, ধোঁয়া ওঠে, সেরকম মোহনীয় কিছু?
কঙ্ক-র বাগানে কাজ। দোপাটি বসায়। আজ রাত্রে সেখানেই কীচকবধ পালা।
খলবলে রোদে অস্পষ্ট রঙ ঘাসের উপরে শুয়ে —আকাশে বেগুনি মেঘের মতো নরম কোনো মুখ আমাকে জাগিয়ে রাখে।
বলে, ওহে এইবার রেডিও চালাও —
চশমাটা আনি। ধীরে ধীরে ভুল খবরের পাশে
তোমাকে দেখেছি বিজ্ঞাপনে। হারিয়ে গিয়েছ। অন্য দেশ, ভিন্ন কোনো নামে। কেন সুন্দরই শ্রেষ্ঠ — সৈরিন্ধ্রীর অবজ্ঞার মতো… বলো, সুখের গল্প কতদূর যায়?
৩)
তখনও তো দুপুরের সোনাবালুরোদ
মর্মে জ্বলে অসি
খাপ খুলে পড়ে যায়
গীতবিতানের পদ
ভালোবাসাময় রোদ তবু ফুটেছে আবার…
ওই ছেলে, একা একা হেঁটে আসে— ওকে বোলো
আমি জানি ফুলচাষ, গোধূমের রঙ
গান শুনে এমনই পাগল — যেন না শুনেও তাকে
কোনো স্থান থেকে অভিনীত হতে দেখি…
বুড়ির চুলের মতো সাদা, কমাদাঁড়িহীন
সৌম্যজিৎ রজকের দুটি কবিতা
সেকরেড গেমস্
যে মরছে মরুক, ত্রিবেদীকে ঠিক বাঁচিয়ে দেবে ভগবান। এই বাজারেও তাই সে নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়ায় যেখানে-সেখানে। খাওয়াপরার ভাবনা নেই, হাসপাতালে বেড না পাওয়ার দুশ্চিন্তাও। ব্যবসার ব্রিফকেসে যারা রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বন্দি করতে পারে, মারী কি মড়ক যা আসে আসুক, তাদের ছেঁড়াও যায় না। যুগে যুগে এই গল্পে কাউকে না কাউকে ভগবান সাজানোই রীতি। যে মরে মরুক শেষ দৃশ্যে, যাতে সে প্রভুর গায়ে আঁচ না লাগতে দেয়!
তুমি গ্যালারিতে আছো
এই যে এত লোক
মুহূর্তে সংখ্যায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে
প্রতি মিনিটে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা
প্রতি ঘন্টায় নিখোঁজের
এই যে এত লাশ গাপ হয়ে যাচ্ছে নিমেষে
আর তুমি বলদের মতো যুক্তি খুঁজছ গণহত্যার
যুক্তি কি মাটির ততটা গভীরে প্রবেশ করতে পারে
যতদূর মিশে যেতে পারে মৃত মানুষের দেহ
এক হাতে জাদুদণ্ড, অন্য হাতে টুপি খুলে
রাষ্ট্র যেন এক দুরন্ত ম্যাজিশিয়ান, এখন যুক্তি খুঁজো না
এক হাতে জীবিত, মৃত মানুষের তালিকা অন্য হাতে
মঞ্চ আলো করে তার দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা দেখে
হাততালি দিয়ে যাও
অভিভূত দর্শকের মতো
শাশ্বতী সরকার মহাশয়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় কবিতা এবং সৌম্যজিৎ বাবুর দ্বিতীয় কবিতা ভালো লাগলো। কবিতায় পৌরাণিক চরিত্রের এই অদ্ভুত অবতারণা যেমন অবাক করে তেমনি সমকালকে তুলে ধরে বলে আমার মনে হয়েছে। শুভেচ্ছা