রাজেশ্বরী ষড়ংগী-র পাঁচটি কবিতা
শব্দপ্রিয় পাখি
পারানি এমন হোক, মধুকণ্ঠ গান
শান্ত টেবিল জুড়ে পড়ে থাকে কিছু অভিমান
তোমার নক্ষত্র খুলে পুড়ে যাচ্ছে আগুনের দেশ
বিষন্ন ছাই,
প্রতি রাতে জেগে উঠি ম্লান-চক্ষু ভেঙে একা,
শোকহীন বিদীর্ণ গভীরে
ধীরে! তার অহংটুকু পোড়াতে দিও তুমি।
তবু আলোর আত্মহত্যা কখনও লিখিনি।
মুখের ভেতর জেগে ওঠে
পাখিদের প্রিয় কোনো দ্বীপ।
প্রতিটি শান্ত ভোর ঘুম ভাঙা মুগ্ধ সকাল।
ভেসে থাকা জলভার, শ্রাবণ প্রবন্ধে আঁকে লিপি
প্রতিটি শব্দপ্রিয় পাখি ফুটে ওঠে।
শ্বেতঅশ্ব
আয়ুর গমন কালে শ্বেতঅশ্ব নেমে এল ধীরে।
রাত্রির কোমল ডাক। তার চেয়ে নীচু তার স্বরের আকুল। যেন কোনো প্রমাদের পাশে চলে যাচ্ছে সলজ্জভ্রম। নদীর ক্রন্দন। আবেগি স্বরের গায়ে বেজে উঠছে ঢেউয়ের গোঙানি। এমন জন্মকালে কে ছড়াল ধূপের বিষাদ। মৃত্যু! আসন্ন নয়। তবু, দাঁড়াও নীরবে। ধুইয়ে দিও সোনার দু’খানি আলো। হাওয়া এসে এলোমেলো জড়াবে নিভৃতে।
মেঘের আদলে কোনো অপূর্ব আলোয় ভেঙে যাবে বাসনার গৃহ। খুলে পড়বে পুরোনো ফুলের থেকে এক একটি ঈষৎ গন্ধবেণী। নিঃসঙ্গ আলাপে পড়ে থাকবে আয়ুকক্ষ, মোহ ও কামনা।
তার চেয়ে কিঞ্চিৎ কষ্টগুলি ভেঙে দাও আগুনে আগুনে। মেঘের অন্য পারে শব্দ নামুক।
হরিণ বাতাস
দূরে কোনো অদৃশ্য মায়াভার বন্ধন গ্রন্থি থেকে বাজে।
অথচ নিখিলে বেজে ওঠে বাঁশি।
খুলে রাখা কথাভার, নীরবতা,
প্রতিটি শব্দবাক্য একা।
মৃতধ্বনি ফিরে ফিরে আসে
আর নীরবেই সরে যায় দূরে—
মেঘগন্ধ হরিণ বাতাসে।
ধারণ
শূন্যের মন্দিরে বসে আছি একা।
মাথা নোওয়ানোর ছলে স্পর্শ করছি মাটি।
আমার এই প্রজ্ঞারাঙা ভোর গ্রহণ করো ঈশ্বর। স্থলে জলে হরিণের মায়া। কোমরবন্ধন থেকে এক একটা তরুলতা জন্ম নিলে ফুলে ফলে রাঙা হয় মাটির কোমল বক্ষ।
সোনার আলো মেখে জেগে ওঠে মেঘের কর্ণকুন্তল। দেখ, বাগানের গায়ে ডেকে উঠছে প্রিয় ফুল। সোনাপাখির সংসারে তুমি নীলকণ্ঠের মধুওষ্ঠ।
শুধু একবার—
তোমার কামনা ধারণ করি, এসো।
বিভ্রম
আমার অতলখানি লিখে যাব ধীরে,
মরুশূন্য হাহাকার বালি
অন্য কোনো মোহনার ডাকে,
দেখেছি, ছায়ায় ভাসান লাগে
নদীর কলমে।
প্রিয় পুরুষের মনে
শোকজন্ম দিও না কখনও।
শরীরের ক্ষত খুলে রোপণ করেছি কিছু মোহপুষ্প আলো। তুমি তার সামান্য অতি, কথাহীন এক জোনাকিকে জ্বালো। স্তব্ধ হবে কিছু নীরবতা।
যদি না ফেরাতে পারো,
যদি, না ফেরাতে পারো পরমান্ন আয়ু
তবে তার শোকগাথা কাহিনি ভুলো না।
আলোগুলি খেলা করে আর জন্মের ভেতর বয় অনাগত প্রলাপের শিষ
ম-ম চিত্ত অতলে।