দয়াময় মাহান্তীর পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

রাতের জামা

অন্ধকার, তুমি কেমন আছো?

জলের উপর কারা তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দিয়ে গেছে
ঢেউ তাকে ঠেলে সরিয়ে দিলে নির্লিপ্তির মুখ
ভেসে উঠে, রাতের ফুলে সাদা চাহনি
আনত হয় ভোরের স্পর্শে।

আলোকে খুবলে কালো গর্ত করে ইঁদুরেরা
ঢুকে পড়েছে, তুমি কি শিকারি ঈগল, মনখারাপ
তোমার? তোমার প্রশ্নের অনেক ঊর্ধ্বে
ভোকাট্টা ঘুড়ি উড়ে…

অন্ধকার, তোমার হৃদয়ে কার ছায়া পড়ে?

ভয়ের সংবাদ বৃক্ষ জেনেছে শরীরের ভাষায়, ঘুমন্ত ডিমগুলোকে কে জাগাবে এই আপদকালে?
বাকলের শ্বাসে পাখির আর্তনাদ কি লিপিবদ্ধ থাকে?
শূন্যের শিসে রাতের জামা মেতে উঠে নাচে।

অন্ধকার, তোমার অসুখের পাশে কে জাগে?

আত্মহত্যার শ্বাস/১

চিঠি আসছিল জন্মের পূর্ব হতে
মৃত্যুর পরও আসতেই থাকবে

আত্মহত্যার শ্বাস চেপে ধরে
আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে চাওয়া

বেঁচে থাকার অর্থ কী
জানতে চেয়ে আগুন ও জলের
যে ব্যবহার শেখা তার পাঠগুলি
অন্ধবিন্দুর ভবিষ্যতে আলো ফেলবে কি?

আমার ঘাড়ের কাছে মুখ রেখে
তুমি যাকে ভালোবাসা জানালে
ভূতগুলো কি তার সঙ্গে আমাকেও
তোমার প্রজন্মের কেউ বলে
স্বীকৃতি দেবে?

কী হবে বেঁচে যদি কেউ
না ভালোবাসে?

চিঠি আসতেই থাকবে,
আসতেই থাকবে, অনন্তকাল
সে চিঠি কোনোদিন পৌঁছাবে কি এসে?

মাছি

অগ্নিতেজ অন্তিমে, তবু আলো যেতে যেতে
একাকীত্বের খাঁচায় সোনার পাখির চোখ জ্বলে
অনস্তিত্বের পূজায় কী উপাচার লাগে জেনে
এমন পবিত্র হয়ে বসেছ কুশাসনে
দোল খায় চরাচর, যন্ত্রণা দুলে
শূন্যের ভিতর শূন্য ওঠে ফুলে
চেতনার মাছি খুন করে বসে আছি
কেউ নাই কাছাকাছি
এ জগৎ থেকে বহু দূরে সাবধানে ছিপ ফেলে
আমারই মতো একজোড়া চোখ নিয়ে
শয়তান কিংবা প্রেমিক বসে আছে

দিঘি

আবিরে ফুলের হত্যা লিপিবদ্ধ আছে:
এই দৃশ্য মেনে নিতে না-পারার অপরাধে
আমি দিঘি হয়ে শুয়ে আছি মাঠে;
প্রিয় মানুষের সঙ্গে খেলা সম্পূর্ণ হলে
রাঙা পা ধুয়ে নিও জলে।

আমিত্ব

তোমার অনেক বাসা পাখিরা ঠোঁটে করে
নিয়ে গেছে
ভালো তোমার অনেক ফুলের বাসায়
গন্ধ ছড়িয়েছে
আরও কত দিকে গড়িয়ে পড়েছে প্রেম
কোথায় কোথায় গড়াবে আগামী?

প্রশ্ন ফিরে আসে, আরুণি কি আমি?
কেন তবে আল হয়ে শুয়ে আছি
কে নিচ্ছে আমার পরীক্ষা?
উঠে দাঁড়াই, মনোযোগ খুলে তোমাকে
ছেড়ে দিই, এক একটা গর্তের ভিতর
ঢুকে চারটি কুঠুরি ভেদ করে চলে যাও…

উঠে দাঁড়াবার মুহূর্তে জানি
ঝরে যাবে বাকি জলটুকু
যে অনেক স্রোতে বয়ে চলেছে
তার আয়নায় নিজের মুখ ভেঙে যায়

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *