ম্যাকবেথ একটা অসুখের নাম – সুমন চক্রবর্তী
২০১৩ তে মঞ্চস্থ কৌশিক সেনের স্বপ্নসন্ধানীর ‘ম্যাকবেথ’ নাটকটি আপাতভাবে রাজনৈতিক পালাবদল আর আশাভঙ্গের যন্ত্রণাকে মিলিয়ে দেওয়ার একটা স্থূল দাগের নান্দনিক প্রচেষ্টা বলে মনে হলেও নাটকটি খুব সুনির্দিষ্টভাবেই বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর সংস্কৃতিমনস্ক ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার একটি নাটুকে প্রয়াস ব্যতীত কিছু নয়। এ নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধলে কৌশিক আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন একজন বিপুল জনসমর্থনের বলে রাতারাতি ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার কারণে আদর্শচ্যুত হয়ে পড়েন। আদর্শচ্যুতির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে শিথিল হয় মানুষের সাথে যোগাযোগ। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার মাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয় সর্বনাশী আত্মপ্রত্যয়ের পারদ। আর এই ঊর্ধ্বমুখী সর্বনাশী আত্মপ্রত্যয়কেই গ্ৰীকরা বলতেন hubris। বিপুল জনসমর্থনের কারণে রাতারাতি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠে নৈতিক শিথিলতা ও আদর্শচ্যুতির শিকার এই মানুষটি কালের নিয়মে সাক্ষী হন peripeteia-র অর্থাৎ নিয়তির নির্মম পরিহাসের। নিয়তির পরিহাসের হাত ধরে নেমে আসে anagnorisis, অর্থাৎ প্রোটাগনিস্ট নির্মোহ দৃষ্টিতে ফেলে আসা অতীতের দিকে ফিরে তাকান, চেতনার ঊর্মিমুখর আলোকে নতুন করে নিজেকে করেন আবিষ্কার, অবতীর্ণ হন নিজের কৃতকর্মের নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়নে। এরপর তাঁকে ঠেলে দেওয়া হবে Catastrophe নামক ভয়ংকর পরিণতির দিকে আর তার মধ্য দিয়েই ত্বরান্বিত হবে তার অবশ্যম্ভাবী পতন। আর এই পতন শুধুমাত্র প্রোটাগনিস্টের ব্যক্তি চৌহদ্দির মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে না; অবশ্যম্ভাবী ফলশ্রুতি হিসেবে ক্ষয়িষ্ণুতার করালগ্ৰাস থেকে রক্ষা পাবে না দেশজ রুচিবোধ, তিল তিল করে গড়ে তোলা রাজনীতির শিষ্টাচার থেকে সংষ্কৃতি… শ্বাসরুদ্ধ হয়ে উঠবে মানবিক থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ক্রমশঃ হাঁপিয়ে ওঠা শরীরটা। এই ট্র্যাজেডিটাই মারাত্মক। এর পর পড়ে থাকে কেবল Catharsis। ক্যাথারসিস কি বা কার এই প্রসঙ্গে পরে আসছি। এরিস্টটল তাঁর পোয়েটিক্সে এই ভাবেই বিন্যাস করেছিলেন ট্রাজেডির বিভিন্ন ধাপ।
২০১৩ সালে মঞ্চস্থ স্বপ্নসন্ধানীর ম্যাকবেথ নাটকটিতে মূল নাটকের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সরে গিয়ে কৌশিক সেন তাঁর সৃষ্টিকে একই সাথে সমকালীন ও সার্বজনীন মাত্রা দান করতে গিয়ে এই ট্র্যাজেডিকে কেবলমাত্র ব্যক্তি ম্যাকবেথ বা লেডি ম্যাকবেথের ট্র্যাজেডির মধ্যে আটকে না রেখে বিষয়টাকে পচন ধরে যাওয়া একটা decadent সিস্টেম বা বন্দোবস্তের ট্র্যাজেডি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। কৌশিক সেন নাকি ম্যাকবেথ পড়ার সময় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কমিউনিস্ট রেজিমের অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার মর্মান্তিক প্রতিচ্ছায়াকে ছত্রে ছত্রে আবিস্কার করেছিলেন। কৌশিক সেন সেদিন বোধহয় দেখেও দেখেননি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে অবিরাম চলতে থাকে সিন্ডিকেট-সংঘর্ষে লোকক্ষয়, দেখেননি কাকদ্বীপে ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা দেবু-ঊষা দাসদের; মনে পড়েনি তাঁর অসউইচ, আলিগড়, মঅৎহোইসেন, মুজাফ্ফরনগর, পানামা, প্যালাস্টাইন,তেলেঙ্গানা, তেজপুর অথবা সেই একাকী পিয়ানিস্ট বা বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পায়জামাসের অসহায় শিশুটির অশ্রুসিক্ত মায়াময় মুখ। হয়তো না মনে পড়াটাই সুশীলোচিত রীতি অনুসারে বাঞ্ছনীয়, কাম্য।
জরুরি অবস্থা, সত্তরের দশক, নকশাল আন্দোলন পুরো পরিপ্রেক্ষিতটাকে মাথায় রেখে ডানকান-হত্যার দৃশ্যে ম্যকবেথের কথাকে এই ভাবে বঙ্গানুবাদ করেছিলেন উৎপল দত্ত, ‘এ কার হাত?… সপ্তসিন্ধুবারি কি পারবে হাত থেকে এ রক্তচিহ্ন মুছে ফেলতে? না! এই হাতই ঊর্মিমুখর সবুজ সমুদ্রকে করে দেবে লালে লাল।’ বহু পরে, নন্দীগ্রাম পর্বে রূপকার্থে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে রক্তের দাগ নিয়ে প্রায় এই ভাষাই উঠে এসেছিল অপর্ণা সেন, বোলান গাঙ্গুলী, জয় গোস্বামী, বিভাস চক্রবর্তী, সৌরীন ভট্টাচার্য, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর মত সর্বজনবিদিত বিদ্বজ্জনেদের আলোচনায়। মহানগরীর পথ ভরে উঠল মিছিলে… স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হ’ল মেঘ-মরু-প্রান্তর… দেওয়াল ভরে উঠল জাগরণের দেওয়াল লিখনে… গাঁথা হ’ল কাব্য, বাঁধা হল গান। নাগরিক কবিয়ালেরদল দিলেন এই চৌত্রিশ বছর সরকারে থাকা মধ্যমেধার দলটাকে উৎখাতের ডাক … সাড়াও দিলেন অনেকে। “পরিবর্তন চাই” ফ্লেক্সে ঢেকে গেল মহানগরীর মুখ।
ম্যাকবেথ আজ আর নিছক এক নামপদমাত্র নয়; সে আজ একটা এলেগোরিকাল রেফারেন্স ফ্রেম, জিঘাংসার স্ট্যান্ডিং মেটাফর বিশেষ। পৃথিবী আজ ভালো নেই, ভালো নেই তার নদী-নালা, পথঘাট থেকে মানুষের ভিতরে থাকা নিলাজ নীল বন্দর। গভীর থেকে গভীরতর অসুখে আচ্ছন্ন আজকের পৃথিবী। আর এই অসুখের নামই ম্যাকবেথ। ম্যাকবেথেরদল শুধুমাত্র ক্ষমতার স্বাদ পেয়েই হয়না যে ক্ষান্ত; করায়ত্ত করতে চায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। আর সে কারণেই তার হাতে রাজরক্ষী, ম্যালকম – ডোনাল্ডবেন, ব্যন্কো্ থেকে ম্যাকডাফের অসহায় স্ত্রী-পুত্র কেউই ছিলেন না নিরাপদ। নিরাপদ ছিলনা তাঁর শাসিত রাজ্যের সাধারণ মানুষ থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের স্তম্ভ থেকে শাখা প্রশাখা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। এই সর্বগ্রাসী প্রবৃত্তির অনেক উপমা আমাদের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু কেবল সেই ছায়ার সন্ধানটাই বড় কথা নয় – এমনকি সমসময়ের কোনও এক রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে ম্যাকবেথ-এর তুলনাটাও নয়। তুলনা বা তর্কযুদ্ধ চলতে থাকবে, চায়ের পেয়ালায় উঠবে তুফান, গবেষকের দল পাবেন নতুন তত্ত্ব থেকে অজানা তথ্যের সালুক সন্ধান, কিন্তু মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকা ওই ম্যাকবেথ সিন্ড্রোম – অসুখটার মূলে পৌঁছানো যাবে কি? থিসিসের পর থিসিস, চারুশিল্প, নাটক, সিনেমা কিংবা প্রযুক্তিবিজ্ঞানের কল্পনাতীত উন্নতি পৃথিবীর সেই গভীর ক্ষতে বাইরে থেকে প্রলেপ হয়তো দিয়েছে, কিন্তু অসুখের সেই বীজটায় পৌঁছতে পারেনি।
১৯৭৫ সালের ২৬ জুন ভারতে জরুরি অবস্থা জারি হয়। তার ঠিক তিন মাস পরে, ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ ওই ম্যাকবেথ-এর প্রথম অভিনয়। দু’বছর পরে উৎপল বাবু সে কথা স্পষ্ট বলেও ছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, “শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ যখন আমরা করলাম, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ-এর চেয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বেটার প্লে হতে পারে না।” জরুরি অবস্থাটা তাই কেবল কোনও রাষ্ট্রের ঘোষণা নয়, রক্তাক্ত সময়টা মানুষের মনেই। জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের পরও কত না অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে – সে কথা বলতে গেলে গল্পের নটে গাছ বোধহয় কোনও দিন মুড়োবে না।
ক্ষমতার ছোট ছোট বৃত্তে ছোট ছোট ম্যাকবেথ কিংবা ব্যান্কোর পদচারণা আজও বোধহয় শোনা যায় গলি থেকে রাজপথে। লেনক্স, রসদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনুর্বর পললের অ-সবুজ তটে… তারা ফেলে রেখে যায় না নিজেকে চিনিয়ে দেওয়া কোনো পদাঙ্ক…. লিপিবদ্ধ করে রেখে যান না বিবর্তমান উষরিত সমাজ ও রাজনীতির নিত্য নতুন ক্যালিডিওস্কোপিক পালা বদলের ধূসর পাণ্ডুলিপি । মঞ্চের দুর্জ্ঞেয় কোণ থেকে ভেসে আসে মুখহীন কন্ঠের অমোঘ উচ্চারণ – ‘বেশি রাত করে বেড়াতে যাওয়া কারুর পক্ষেই ঠিক নয় … ঠিক নয় সব কড়া নাড়ায় সাড়া দেওয়া।’ ম্যালকম ও ডোনাল্ডবেনরা পাড়ি দেন ক্ষমতাহীনতার অনাম্নী দেশে … প্রাপ্ত ভোটের শতাংশই হয়ে ওঠে তাদের একমাত্র পরিচয়। চলে যান নেপথ্যে… অশ্রুত থেকে যায় তাদের নেপথ্য ভাষণ… চেতনার কোনো এক স্তরে শতাংশ ইঙ্গিত করা একটি সংখ্যা ও পিতৃহন্তা – এ’দুই পরিচয় নিয়েই বেঁচে থাকেন তাঁরা। দশ বছরের অদৃশ্য লিউকোপ্লাস্ট ঠোঁটে সেঁটে দেওয়ার নিদেন হয় দেওয়া। গণমাধ্যমের এদের কথায় সরব হওয়া বারণ। এহেন হত্যা দেখে মহৎ ক্রোধে ম্যকবেথেরা কাঁপতে কাঁপতে খনন করে খুঁজে বের করবে কঙ্কালের স্তুপ, কিছু গেঞ্জি পরা কঙ্কালও সামিল হবে সেই স্তুপে। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার নেশায় মদমত্ত ম্যাকবেথ বিচারব্যবস্থার সহায়তায় কারুর কারুর নির্দিষ্ট কিছু থানা এলাকা অথবা জেলায় ঢোকার ওপর ফতোয়া করবে জারি। জীবদ্দশায় শুধুমাত্র ম্যাকবেথ বিরোধী পতাকা বাহক হওয়ার কারণে মৃত ব্যক্তিরা বঞ্চিত হন মৃত্যুর কারণে প্রাপ্য হওয়া ন্যূনতম সম্ভ্রমটুকু থেকে। ম্যাকবেথ বলেছিল, ক্ষমতা নয়, চাই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। দল বা ব্যক্তি, যে কোনও বৃত্তেই ভাষাটা বদলালেও চরিত্রটা একই আছে। এরই মাঝে ম্যাকবেথের পিঠ ঠেকবে দেওয়ালে, দীর্ঘদিন পাশে থাকা সহযোদ্ধা শিবির বদলানোর কারণে হয়ে উঠবে প্রতিপক্ষ। আর সাথে সাথে অভিযোগের নল রাজরক্ষী ও পিতৃহন্তা সন্তানদের থেকে ঘুরে নলের ডগায় দাঁড় করানো হবে সদ্য শিবির বদলানো প্রাক্তণ সহযোদ্ধারূপী ম্যাকডাফ ও তার পিতৃপুরুষদের দিকে। তখন সবচেয়ে বিপদে পড়েন রোদ চশমা পরা “পরিবর্তন চাই” পোস্টারে মুখ দেখানো মানুষগুলো – গরীবের গ্যারিক থেকে গরানহাটার গায়েন, পাটুলির পোয়েট থেকে পাম এভিনিউয়ের প্লে-এ্যাক্ট্রেস, বাগুইহাটির মেহেদী হাসান থেকে বরাহনগরের ব্যবকনরা বা নাথবতী আনাথবৎ নটীর দল। এরই মাঝে কৌশিক সেন বলে বসলেন – “….তার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেদিনের ওই ১৪টি মৃত্যু। ফলে, আমি মনে করি না, আমরা যারা ওই সময়ে নন্দীগ্রামের ভয়াবহ পরিণতিতে সামিল হয়েছিলাম, তারা সেসময়ে কোনও ভুল করেছিলাম। এ একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মত। এখন ভোটে জেতার জন্য রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে কী বলছেন, তার সঙ্গে সেদিন ওই মানুষগুলির মৃত্যুর কোনও সংযোগ নেই। আমরা সামিল হয়েছিলাম সেই ম্যাসাকারের বিরুদ্ধে। তার ফায়দাটা হয়তো কোনও দল নিয়েছিল, অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস নিয়েছিল। সেটা তো সমাজে সব সময় ঘটে। যে কোনও আন্দোলনের কোনও একটা ফল কোনও না কোনও পার্টি ভোগ করে। আমরা ছোটবেলা থেকে বরানগর-কাশীপুরের ম্যাসাকারের কথা শুনে এসেছি। তা, সেই বরানগর-কাশীপুরের ম্যাসাকারের ফায়দাটা তো বছরের পর বছর ধরে সিপিএম নিয়েছে। সিপিএমের অভিযোগের তির ছিল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, কংগ্রেসের গুন্ডারা এই ম্যাসাকারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরবর্তী কালে জানা গিয়েছিল, ওই ম্যাসাকারে সিপিএমের লোকজনও যুক্ত ছিল। তবে, এর ফলে আমাদের নাগরিক আন্দোলন কোনও ভাবে ব্যর্থ হয়ে যায় না।” প্রথমেই যে কথাটা বলার তা হ’ল চোদ্দটি মানুষের প্রাণনাশ ততটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক ততটাই তাৎপর্যপূর্ণ এটা জানা কার বা কাদের কলমের খোঁচায় লেখা হয়েছিল সুঠাম সেই চিত্রনাট্য। এই প্রসঙ্গে ব্যক্তি কৌশিক ব্যক্তিগত ভাবে কি মনে করেন, কতটা মনে করেন তা নিয়ে ভিন্ন পরিসরে আলোচনা করা যাবে। দুই, সত্য অনেকটা, মোজার দুর্গন্ধ, গর্ভধারণ বা অবৈধ প্রেমের মত, খুব বেশি দিন চেপে রাখা যায় না। জানতে চাইলে কি খুব ভুল করা হবে সের দরে না লিটারে তারা সেদিন বেচেছিল (সচেতনভাবেই ‘তাঁরা’ লিখলাম না) তাদের দ্রব অবস্থায় থাকা মেরুদন্ড, বিবেক, চেতনা সব কিছু? প্যাকেজে বিক্রি হয়েছিল এই নব্য Voltaire, Rousseau -র দল – Buy 1 Get All। সেদিন হয়তো সুশীল ব্র্যান্ডের কেষ্ট-বিষ্টুদের বুক,পিঠ অস্তিত্ব জুড়ে নতুন তৈরি ফ্ল্যাটের বিজ্ঞাপনের মত লেখা ছিল Ready to Move অবোধ্য সাংকেতিক কোনো হরফে। তিন,কাশীপুর বরাহনগর অঞ্চলের হত্যাকাণ্ডের সিপিএমের একাংশ যুক্ত ছিল এই তথ্য কৌশিকবাবুরা পেলেন কোথা থেকে? কোন্ তথ্য প্রমাণের ওপর দাঁড়িয়ে তাদের এই দাবী? তিন, থিন এ্যারারুট বিস্কুটের মত ভঙ্গুর আনন্দবাজার, বর্তমান বা বিক্রি হয়ে যাওয়া পত্রিকার কাটিং কিন্তু আইনগ্ৰাহ্য কোনো প্রামাণ্য নথি নয় – একথা মাথায় রাখতে হবে। ওনারা আজ পর্যন্ত কখনও জবাব চেয়েছেন – সরকারী অর্থে তৈরি করা কাশীপুর বরাহনগর অঞ্চলের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে যে কমিশন করা হয়েছিল তার রিপোর্ট আজও কেনো বিধানসভায় পেশ করা গেল না? ওনাদের কেউ কখনও জিজ্ঞাসা করেছেন সরকারী অর্থে তৈরি করা ছেচল্লিশটি কমিশনের রিপোর্টগুলো কোথায় গেল? অপর্ণা সেন, বোলান গাঙ্গুলী, জয় গোস্বামী, বিভাস চক্রবর্তী, সৌরীন ভট্টাচার্য, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তরা জেনে রাখবেন নিউরেমবার্গের বিচার কিন্তু শুধুমাত্র নিউরেমবার্গেই হয়না, পৃথিবীর সর্বত্র হয় যেখানে যখন হামলার শিকারকেই হামলাকারী বলে দেগে দেওয়া হয়েছে, যেখানে রাতের অন্ধকারে মানুষের ওপর জান্তব আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে সেখানেই বসেছে নিউরেমবার্গের বিচারসভা। সুশীলেরা মনে রাখবেন বির্নামের জঙ্গল শুধু দান্সিনানেই নেমে আসে না, জঙ্গলমহলের বলিরেখা আঁকা মুখগুলোর কিন্ত নেমে আসে বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ অথবা মোহরকুঞ্জের ঘন্টাখানেকের অনুষ্ঠানে।
এর আগে এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে Catharsis বিষয়ে পরে আসবো। Catharsis সম্পর্কে এরিস্টটল বলেছিলেন এটি হ’ল – a mixed feeling of pity and fear – অর্থাৎ ভয় এবং করুণার এক মিশ্র অনুভূতি। ভয়ের অনুভূতিটা তোলা থাক অপর্ণা সেন, বোলান গাঙ্গুলী, জয় গোস্বামী, বিভাস চক্রবর্তী, সৌরীন ভট্টাচার্য, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তদের ভোগ করার জন্য আর এদেরকে করুণার পাত্র হিসেবে আজীবন দেখার দায়টা না হয় আমরাই ঘাড় পেতে নিলাম।