বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ১৩) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
পর্ব ১৩
১৯৪২-৪৩ মরশুম। ভারতের তথা বাংলার ইতিহাসে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সময়। একদিকে জাপানিরা বোমা ফেলছে। অন্যদিকে গ্রাম বাংলায় হাহাকার চলছে। চার্চিলের নীতি ডেকে এনেছে দুর্ভিক্ষ।
১২ ডিসেম্বর, ১৯৪২। বিহারের বিরুদ্ধে খেলতে নামে বাংলা। বিহার ২৭১ করে যা বাংলার বিরুদ্ধে তাঁদের তখনও অবধি সেরা স্কোর। শান্তি বাগচী ৭৫ ও বিজয় সেন ৫৬ করেন। পি ডি দত্ত ৩৮ রানে ৩ উইকেট ও কুচবিহারের মহারাজা (সেবার অধিনায়ক) ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন। জবাবে বাংলা তোলে ৩১২। নির্মল চ্যাটার্জি ১০৪, হার্ভে-জনস্টন ৮৭, কুচবিহার অপরাজিত ৭১ করেন। পুঁটু চৌধুরী (সেবার বিহারে) ১০০ রানে ৭ উইকেট নেন। এরপর বিহার ৯ উইকেটে ১৭৬ তোলে। ১৩৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে বাংলা ১২০/৩ তোলার পরে সময় শেষ হয়ে যায়। নির্মল চ্যাটার্জি অপরাজিত ৬৪ করেন। পুঁটু আবার ১৬ রানে ২ উইকেট নেন।
সেবার বিভিন্ন ঝামেলায় ক্লাব ম্যাচ কম হয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ বেশি হয় রিলিফ ফান্ডের জন্য। বেশিরভাগই সরাসরি বা ঘুর পথে যুদ্ধের সাহায্যের জন্য।
২৫ ডিসেম্বর রাতে জাপান কলকাতায় বোমা ফেলে। পরদিন সকালে পার্সি (১৮৬/৪) বনাম রেঞ্জার্স (১৪১/৮) ও বেরী সর্বাধিকারি একাদশ (৪১ ওভারে ২৬৭/৬) বনাম মণীন্দ্র দত্ত রায় (বেচু) একাদশ (৩১ ওভারে ১৯৬) ম্যাচ হয়।
পার্সিদের হয়ে এ দস্তুর ৪৬ ও খাম্বাট্টা ৫০ করেন। রেঞ্জার্সের ম্যান্ডেন অপরাজিত ৬৯ করেন। বেরী সর্বাধিকারি একাদশ এর হয়ে ধ্রুব দাস ১১৭, মর্গান ৭১ করেন এবং মনীন্দ্র দত্ত রায় (বেচু) একাদশ এর হয়ে নির্মল চ্যাটার্জি ৭২ করেন। মণীন্দ্র দত্ত রায় (বেচু) একাদশ এর হয়ে এম দাশগুপ্ত ৩৩ রানে ২টি ও মণীন্দ্র দত্ত রায় (বেচু) ৫৭ রানে ২টি উইকেট নেন। বেরী সর্বাধিকারি তাঁর দলের হয়ে ৯২ রানে ৬ উইকেট নেন।
২৭ ডিসেম্বর, কুচবিহার মহারাজা একাদশ (৩২ ওভারে ১৫১/৮) বনাম বেরী সরবাধিকারি (৩৭ ওভারে ১৪১) ম্যাচে বেরীর দল ১০ রানে হেরে যায়। কুচবিহারের হয়ে শিশির মুস্তাফি ৩২ রানে ৫ উইকেট পান।
ডালহৌসি (১৫২) ১৬ রানে রেঞ্জার্সকে হারিয়ে দেয়। যদিও রেঞ্জার্সের সেনেট বল হাতে ৩৯ রানে ৭ উইকেট পাওয়ার পর ব্যাট হাতে ৫১ রান করেন।
২৮ ডিসেম্বর বি গুপ্ত একাদশ (২১৮/৬) এর হয়ে ধ্রুব দাস আবার অপরাজিত ১০৬ করেন। জবাবে কমল ভট্টাচার্য ৫০ রানে ৬ উইকেট নিলে বেরীর দল ১৩৪ রানে অল আউট হয়ে যায়। কমল ব্যাট হাতেও ৪০ করেছিলেন।
২৯ ডিসেম্বর দুদিনের খেলায় এ কে সেন দ্বাদশ ২০৬ করে প্রথম ইনিংসে। মণীন্দ্র দত্ত রায় দ্বাদশের ডি ব্যানার্জি ৬ উইকেট নেন। জবাবে প্রথম দিনের শেষে মণীন্দ্র দত্ত রায় দ্বাদশের রান ছিল ১২১/৫। কিন্তু পরের দিনের কাগজের সন্ধান না পাওয়ায় খেলার ফলাফল বলতে পারলাম না।
নতুন বছরের প্রথম দিনে আর্মি (১১৮) কেবলসের (১২১) কাথে হেরে যায়। মের্ণার ৫ রানে ৪ উইকেট নেন আর্মির হয়ে। কেবলসের জ্যাকসন ৬৪ করেন।
পরের দিন গণেশ বসুর ৭৯ রানের সাহায্যে বেঙ্গল সি সি ২০৮/৫ তোলে। বেরী ৭৫ রানে ৪ উইকেট পান। জবাবে এস মিত্রের ৪৫ রানে ৬ উইকেট কালীঘাটকে ১২৬ রানে ফেলে দেয়।
কেবলস (১৩৫/৫) আবার আর্মিকে (৭৯) হারায়। কেবলসের বার্কার অপরাজিত ৬৮ ও কিডসন ৫০ করেন।
৩ জানুয়ারি, ডালহৌসি (১৯১/৮) ও কেবলসের (১৮৯/৭) ম্যাচ ড্র হয় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে। কেবলসের জ্যাকসন ৮৮ করেন। বিবি ডালহৌসির হয়ে ৪১ রানে ৬ উইকেট নেয়।
৪ জানুয়ারি, বাণীনিকেতন (৩৯) হেরে যায় যাদবপুর কলেজের (১১৬) কাছে। বর্তমানে এই দলটি হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বাণী নিকেতনের এম ভট্টাচার্য ১৫ রানে ৫ উইকেট পান।
তখন কলকাতায় লীগ না হলেও মুর্শিদাবাদে হত। বহরমপুর টাউন ক্লাব (১১৪) সেই লীগে ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন (৩৮) কে হারিয়ে দেয়। বহরমপুরের হয়ে সুশীল ভট্টাচার্য ৬৫ করেন। জি চ্যাটার্জি ফ্রেন্ডস এর হয়ে ৪৫ রানে ৫ উইকেট ও জগদীশ (৬/১৩) আর অরুণ বসু (৪/১৭) বহরমপুরের হয়ে বিধ্বংসী বোলিং করেন।
সেই বছর আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হয়েছিল ১৩ই ফেব্রুয়ারী বাংলার গভর্নর বনাম কুচবিহার মহারাজা একাদশের মধ্যে। বাংলার গভর্নর (২৮১ ও ২৪৬/৪ ডিঃ) হারিয়ে দেয় কুচবিহারের মহারাজার (২৩১ ও ১৪৭) দলকে। গভর্নর দলের সন্তোষ গাঙ্গুলী ৬২ ও ৯৮, কার্তিক বসু ৭২ (প্রথম ইনিংসে) ও সি কে নাইডু অপরাজিত ১১২ (দ্বিতীয় ইনিংসে) করেন। সি কে বল হাতেও (৪/৬৭ ও ৩/৩৭) সফল হন। মহারাজার দলের মুস্তাক আলী বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানে ৪ উইকেট নেন।
পরের মরশুম (১৯৪৩/৪৪) আরও সমস্যাবহুল। ব্ল্যাক আউট চলছে। যুদ্ধও চলছে। ডাকিনী যোগিনী-রা বাংলাকে শত পাকে বেঁধে ফেলে কুটিলের মন্ত্রে শোষণের যন্ত্রে শোষণ করে চলেছে।
এমন সময় ১৮ ডিসেম্বর (১৯৪৩) বাংলা নামল বিহারের বিরুদ্ধে খেলতে। কমল ভট্টাচার্য (৫/৫৭) বিধ্বংসী বোলিং করে বিহারের ৯ম উইকেট ১০০ রানের মাথায় ফেলে দিলেও কে ঘোষ (৪৫) ও প্যাটেল (অপরাজিত ৪৫) রানটাকে ১৫৯ এ নিয়ে যান।
জবাবে বাংলা নির্মল চ্যাটার্জী (৭৮), শিশির মুস্তাফি (৭৭) র জন্য ৩৫ রানে ৫ উইকেট থেকে ২৪৯ অবধি তোলে। পুঁটু এবারেও ৭৫ রানে ৬ উইকেট পান।
খেলা এখান থেকে ঘুরে যায়। শুঁটে ব্যানার্জি অপরাজিত ১০১ ও এস ঘোষ ৬৩ করলে বিহার ৭ উইকেটে ২৬১ করে। ১৭২ করলে জিতবে এই অবস্থায় পুঁটু (৪/৫২) ও পটলা বোস (৩/২৪) বাংলাকে শুইয়ে দেয়। কোনও রকমে ৮ উইকেটে ৮৮ তুলে বাংলা ম্যাচ ড্র করে প্রথম ইনিংসে লিড পায়।
এদিকে ক্লাব ক্রিকেট তখন জমজমাট। ৩১ ডিসেম্বর ৪টে, ১ জানুয়ারি ৮টা, ২ জানুয়ারি ৬টা, ৩ জানুয়ারি ৪টা, ৪ঠা ও ৫ জানুয়ারি ১ টা করে ম্যাচের খবর আছে। হয়তো সংখ্যা আরও বেশি।
৩১ ডিসেম্বর, তারা ভট্টাচার্যের অপরাজিত ৭৮ বেঙ্গল ওড়িশা আসাম রেলওয়ে কে ১৯৫/৫ তুলতে সাহায্য করে। জবাবে অনিল বসু (৪২) ও ডি ব্যানার্জি (৪৯) ভবানীপুরকে ১৩৮/৫ এ পৌঁছে দিলে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়।
অন্য খেলায় এ কে সেনের একাদশ (১৯৬) অতি সহজেই এম বসু একাদশ (৯৬)কে হারিয়ে দেয়। এ কে সেনের একাদশের হয়ে কুচবিহারের মহারাজা করেন ৬৬। বল হাতে পি ডি দত্ত ২৫ রানে ৬ উইকেট তুলে নেন।
জাজে’স কোর্ট (১০৩/৬) বনাম আলিপুর বার (৬৫/২) ম্যাচ ড্র হয়। জাজে’স কোর্টের হয়ে রাজেন ঘোষ ৫৫ করেন।
সিটি এসি (১২৮) ওই দিনই ভবানীপুরের দ্বিতীয় দলকে (৭৫) ৫৩ রানে হারিয়ে দেয়। সিটির সি খাঁ (৬/২৭) ও পি রায় (৪/২৬) অনবদ্য বোলিং করেন।
পয়লা জানুয়ারি প্রায় উৎসব লাগে ময়দানে। জনগণ তখন খাবার ও কেরোসিনের জন্য লাইন দিচ্ছে।
যাই হোক, কেবলস ১৯৬ করে (স্কট ৬৪)। আর্মির মিলার ৪৫ রানে ৪ উইকেট পান। জবাবে আর্মি ল্যাঙ্গফোর্ডের (৫/২২) বোলিংয়ের জন্য ১২৩ এর বেশি করতে পারেননি।
স্পোর্টিং ইউনিয়ন (১৯০/৯) জি চ্যাটার্জির ৬১ রানের ভালোই রান তোলে। আর গ্রীন ৭৬ রানে ৪ উইকেট নেন। জবাবে ডালহৌসি (১৮৬/৯) প্রায় জিতেই যাচ্ছিল। এন মিত্র ৪৬ রানে ৫ উইকেট নেন। স্যামসন অপরাজিত ৬২ করেন।
অরোরা (১৬৪) বনাম বি ও এ রেল (১৫২/৫) ম্যাচ ড্র হয়। রেলের এস দাস ৫৮ রানে ৫ উইকেট নেন। রেলের আব্দুল জব্বার অপরাজিত ৬১ করেন।
ভবানীপুর (১৮০) বনাম কালীঘাট (৯৮/৮) ম্যাচও ড্র হয়। কালীঘাটের বেরী সর্বাধিকারি ৮১ রানে ৬ উইকেট নেন।
পি গাঙ্গুলীর অপরাজিত ৭১ সত্ত্বেও এরিয়ানস (১৬৮) হেরে যায় টাউনের কাছে (১৭০/৫)। টাউনের পি সেন বল হাতে ৩৯ রানে ৬ উইকেট নেন। টাউনের কে এন রায় ৭২ ও কে দাস অপরাজিত ৫৭ করেন।
পি দত্তের ৯২, এ ব্যানার্জির ৫৭ রানের জন্য কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ ২০৬ তোলে এবং কলকাতা পুলিশকে (১৩৫) ৭১ রানে হারায়। এস ভট্টাচার্য পুলিশের হয়ে ৭৬ রানে ৬ উইকেট পেলেও কারমাইকেলের ডি চক্রবর্তী ৩৩ রানে ৫ উইকেট ও ডঃ এস ব্যানার্জি ১৩ রানে ৪ উইকেট নেন।
পার্সি (১০৯) কে ৪ উইকেটে হারায় বেঙ্গল সিসি (১৩৪)। জিতেও তাঁরা ব্যাট করেন। বেঙ্গল সিসির এস ব্যানার্জি ৩৪ রানে ৬ উইকেট পান। বেঙ্গল সিসির গণেশ বসু ৬৯ করেন। পার্সিদের খাম্বাট্টা ৬০ রানে ৫ উইকেট পান।
ওইদিনই মোহনবাগান ক্লাবে ফ্রেন্ডলি এক্সিবিশন ম্যাচে ডঃ এম এন বসু একাদশ ১১৭ করে প্রথমে ব্যাট করে। এম সেন (৬/৩০) ও খৈতান (৪/১৬) পান। জবাবে মিস্টার এস এন ব্যানার্জি একাদশ ১৬৯ তোলে। ৬ উইকেটে জিতে যাওয়ার পরেও তাঁরা ব্যাট করছিলেন। মন্টু ব্যানার্জী ৫৭ করেন, হরিপদ ব্যানার্জি ৩২ রানে ৪ উইকেট পান।
২ জানুয়ারি টাউন (৭৮) খুব লড়াই করে হারায় ডালহৌসি (৭৫)কে। কুপার ২৪ রানে ৭ উইকেট নিয়ে টাউনের কোমর ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু পি সেন (৬/১৯) ডালহৌসিকে রুখে দেয়।
এদিকে খোকন সেনের ১০৬ ও পি ডি দত্তের ৫৭ কালীঘাট কে (২১৩/৭) বড় রান তুলতে সাহায্য করে। পার্সি (১৩৬/৯) কোনক্রমে ম্যাচ ড্র করে। টাংরি অপরাজিত ৫৯ করে পার্সিকে বাঁচায়। পি দত্তের বোলিং (৫/৩৮) পার্সি খেলতেই পারেনি।
রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি (১১৪) সিটি এসি (১১৯) -র বিরুদ্ধে হেরে যায় শুধু চাঁদ খাঁ এর জন্য। ব্যাট হাতে ৩৬ ও বল হাতে ৩০ রানে ৭ উইকেট পান। নেভির ব্রাউন ব্যাট হাতে ৪১ করেন।
ভবানীপুর (২৩৯/৫) তুলে মহারাষ্ট্র জিমখানাকে (১৪৫) ৯৪ রানে হারিয়ে দেয়। কৌশিক জীমখানার হয়ে অপরাজিত ৬১ করেন।
সেই সময় কলকাতায় জিমখানা লীগ হত। ইউনিয়ন স্পোটিং (৯৩) সেই লীগে বেঙ্গল সিসির (২৩২/৯) কাছে ৮ উইকেটে হারে। বেঙ্গল সিসি জেতার পরেও ব্যাট করে। বেঙ্গল সিসির গণেশ বসু ১০৩ করেন ও এস ব্যানার্জি ৩৯ রানে ৭ উইকেট নেন।
লীগের অন্য ম্যাচে ন্যাশনাল এসি (৯৫) গ্রিয়ার (৯১)কে হারিয়ে দেয়। গ্রিয়ারের এন দাস ৩১ রানে ৬ টি ও ন্যাশনাল এর এস দাস ৩৫ রানে ৭ উইকেট পান।
৩ জানুয়ারি মারোয়ারী (৬২) কে সালখিয়া ফ্রেন্ডস (১১৫/৬) ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয়। জয়ের পরেও তাঁরা ব্যাট করেন। সালখিয়ার বসাক ৩৩ রানে ৫ উইকেট নেয়।
অন্য খেলায় ম্যাকিঞ্জ (১৩৬/৫) হাইকোর্ট (৮৩) ৫৩ রানে হারায়। ম্যাকিঞ্জের সি ঘোষ ৬০ করেন ও বল হাতে ১৯ রানে ৪ উইকেট নেয়।
রেঞ্জার্স (১৫৩) হেরে যায় কেবলসের (২১৬/৮)। রেঞ্জার্সের ডব্লিউ ম্যান্ডেন ৫৪ করেন। কেবলসের ল্যাংফোর্ড ৩২ রানে ৭ উইকেট নেন। কেবলসের হয়ে লংফিল্ড ৫৫ করেন। সুইনি ৬৬ রানে ৫ উইকেট পায়।
বার্নপুর পাগসলের ৭৭ এর ওপর নির্ভর করে ৮ উইকেটে ২০৪ করে। ভবানীপুর ৫ উইকেটে ১৫৮ তোলার পরে ম্যাচ ড্র। টার্নার ৪৯ রানে ৪ উইকেট পান বার্নপুরের হয়ে।
৪ জানুয়ারি বাজোরিয়ার ১০০ (২২×৪) মারওয়ারি (১৮৭/৯) কে ভদ্রসভ্য রান তুলতে সাহায্য করে। জবাবে বাজোরিয়া ৯ রানে ৩ উইকেট নিলে প্রভাত মেমোরিয়াল ৪৪ রানে শেষ হয়ে যায়।
৫ জানুয়ারি টুয়েন্টি এইট নামে একটি দল ইডেনে ১৩৬ তোলে। বিপক্ষ দল অ্যান্টিলোপসের ব্যারন ৪৯ রানে ৫ উইকেট পান। অ্যান্টিলোপস ৮ উইকেটে ১১৪ তোলার পরে ম্যাচ ড্র। মার্টিন করেন ৪৩। টুয়েন্টি এইট দলের রিচার্ডসন ৪৯ রানে ৪ উইকেট পান।
রঞ্জিতে সেবার বাংলা ইডেনে আরও দুটো ম্যাচ খেলে। ৭-৯ জানুয়ারি, ১৯৪৪ — বনাম হোলকার। পি সেনের ১৪২, নির্মল চ্যাটার্জির ৭৯, অশোক চ্যাটার্জির ৪৭ বাংলকে ৩৮৭ অবধি নিয়ে যায়। হোলকারের ইশতিয়াক আলি (মুস্তাক আলির ভাই) ৪৬ রানে ৪ উইকেট পান। জবাবে হোলকার কমল ভট্টাচার্যের (৬/২৬) দূর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ১৩৮ রানে শেষ। কেবল মুস্তাক ৩৩ করেন। ফলো অন খেয়ে তাঁরা তোলেন ২৬৬। মুস্তাক ৭০ ও বাউ সাহেব নিম্বলকর ৫৭ করেন। বাংলা জয়ের প্রয়োজনীয় রান (২১) বিনা উইকেটে তুলে ১০ উইকেটে জয়ী হয়।
১৯-২১ জানুয়ারি, বাংলা আব্দুল জব্বারের ৮০, কমল ভট্টাচার্যের ৬৭ রানের ওপর ভর করে ২৩৫ তোলে। এজি রাম সিং ১০৪ রানে ৭ উইকেট পান। জবাবে মন্টু ব্যানার্জির ঝোড়ো বোলিং (৫/২৭) মাদ্রাজ কে ১০২ রানে ফেলে দেয়। রাম সিং কেবল ৩৬ করেন। এরপর নির্মল চ্যাটার্জির ১১২, অশোক চ্যাটার্জির ৫৩ বাংলাকে ২৬৬ রানে নিয়ে যায়। রাম সিং আবার ৯০ রানে ৭ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য লক্ষ্য ৪০০ তাড়া করে মাদ্রাজ ২৬৫ রানে শেষ। কমল ভট্টাচার্য জীবনের সেরা বোলিং (৭/৮৩) করেন। গোপালন ৭৬, রিচার্ডসন ৬২ করেন। বাংলা ফাইনালে বোম্বেতে বোম্বের বিরুদ্ধে খেলে হেরে যায়।
সেবার ৩০ জানুয়ারি মেয়র’স অফ ক্যালকাটা ফান্ডের ম্যাচ হয় ইডেনে। দুদিনের ম্যাচ। বাংলা বনাম অবশিষ্ট ভারত। বাংলা মাত্র ১১৬ করে। সি এস নাইডু ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন। সি লাল নেন ২১ রানে ৩ উইকেট। জবাবে অবশিষ্ট ভারত প্রথম দিনের শেষে ৫৩/৩ তোলার পরে প্রথম দিনের খেলা শেষ হয়। দ্বিতীয় দিনের খেলা আর হয়নি।
কবি বলেছিলেন ‘মহামারী তে মরি না আমরা/ মারী নিয়ে করি ঘর’। বিশ্বযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ চলাকালীন ক্রিকেট ম্যাচের বহর সেই কথা আরেকবার প্রমাণ করল।