জুড়েঙ্গে লড়েঙ্গে জিতেঙ্গে, কিন্তু জুড়ব কেমনে? – জিতেন নন্দী

জুড়েঙ্গে লড়েঙ্গে জিতেঙ্গে, কিন্তু জুড়ব কেমনে? – জিতেন নন্দী

শেয়ার করুন


ছোটোবেলায় দেখেছি কোনো পরবে বাজার থেকে ফুল বা মালা কেনার চল ছিল না। এমনকি আমাদের দেশের বাড়িতে বিয়ের মালাবদলের মালাটাও পাড়ায় ঘুরে ঘুরে ফুল জড়ো করে এনে গেঁথে নেওয়া হত। বাজারের গোরের মালার একরকম সৌন্দর্য, আর সেই বহু রঙের ফুল জুড়ে জুড়ে গাঁথা মালার ছিল আর একরকম সৌন্দর্য। সবটাই ছিল বাড়ির দিদিদের জোড়বার কেরামতি।

আজ এক ভিন্ন সময়ে ভিন্ন পটভূমিতে জোড়বার প্রসঙ্গ এসেছে: জুড়ব, লড়ব আর তবেই তো জিতব। কিন্তু জুড়ব কেমনে?

গতকাল সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন ভারতের রাজধানী দিল্লির রাজপথের ওপর একজন কৃষকের মৃত্যু হল। তখন দিল্লির লালকেল্লায় সাধারণতন্ত্রের উদ্‌যাপন সারা হয়ে গেছে; সাঙ্গ হয়েছে স্বাধীন ভারতের শৌর্য-বীর্য-পরাক্রম প্রদর্শনের রুটিন কুচকাওয়াজ, আবেগময় ভাষণ। তার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজপথে লুটিয়ে পড়লেন তরুণ কৃষক নভনীত সিং হুন্দাল। উত্তরাখণ্ডের বাজপুর থেকে সোজা গাজীপুর সীমান্ত হয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে এসেছিলেন দিল্লির এই সমাবেশে। তাঁর মতো বহু কৃষক ট্রাক্টর চালিয়ে লাল কেল্লার দিকে যাচ্ছিল। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস আর জলকামান দিয়ে তাদের আটকাতে চেষ্টা করেছিল। নভনীতের পরিচিত আংরেজ সিং মিডিয়ার কাছে জানায় যে ওঁর মাথায় গুলি লেগেছিল। তাতেই বেসামাল হয়ে গিয়ে ট্রাক্টর পালটি খেয়ে ওঁর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ অবশ্য সেকথা অস্বীকার করেছে। আংরেজ সিং আরও জানিয়েছে, সদ্য বিয়ে করেছিল নভনীত।
ছবিতে দেখেছি, ওঁর মৃতদেহের কাছেই আর এক যুবক স্লোগান দিতে দিতে কাঁদছেন। তিনি এসেছেন উত্তরপ্রদেশ থেকে আর নভনীত এসেছিলেন উত্তরাখণ্ড থেকে। আরও অনেক যুবক নভনীতের পতাকায় মোড়া নিথর দেহটার চারপাশে দাঁড়িয়ে বসে কাঁদছিল। আর একজন উত্তরপ্রদেশের এই যুবককে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন, সম্ভবত তিনি হরিয়ানার মানুষ। এইভাবে জুড়ে যাচ্ছিল পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের চাষি, যুবক আর প্রতিবাদী মানুষ।

কিন্তু চোখের জল ফেলা দূরে থাক, ওইদিন একই সময়ে মহেশতলায় আমাদের পাড়ার ওপর দিয়ে উল্লাস করতে করতে চলেছিল প্রায় চল্লিশ ফুট লম্বা এক জাতীয় পতাকা নিয়ে কিছু যুবক। তাদের মুখে ছিল স্লোগান ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’। আমি আর শোভন পাশ দিয়ে সাইকেলে চেপে যাচ্ছিলাম। শুনে তো থ বনে গেছি! আরও অবাক হলাম, দিল্লির লালকেল্লার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ ধ্বনিতে এই মিছিল বের হয়ে গেল কীভাবে? ধাক্কা খাওয়ার আরও বাকি ছিল।

মহেশতলা-মেটিয়াবুরুজের লিট্‌ল ম্যাগাজিন গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে আমরা কয়েকজন মিলে কৃষক-শহিদদের একটা ছবিতে মালা দিচ্ছি, এমন সময় উলটোদিকের অটো স্ট্যান্ড থেকে ভেসে এল একটা মন্তব্য : ‘জাতীয় পতাকা নামিয়ে একটা গেরুয়া না কী রঙের পতাকা তুলে দিল লালকেল্লায়। কী চলছে এসব? দিল্লি পুলিশ কি লালকেল্লাকে প্রোটেক্ট করতে পারছে না। এরপর তো এখানে পাকিস্তানের পতাকা লাগিয়ে দেবে!’ বুঝলাম, আমার বা আমাদের উদ্দেশেই এই কথাগুলো। কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়েছে লালকেল্লা থেকে, আপনি দেখেছেন?’

— হ্যাঁ এবিপি আনন্দ-এ দেখেছি। সব চ্যানেলেই দেখাচ্ছে।

— তাই নাকি? আমি ত সবে এনডি টিভি লাইভ দেখে এলাম। লালকেল্লার মাথায় তো জাতীয় পতাকা উড়ছে দেখলাম। হ্যাঁ সামনের দিকে একটা পোস্টে কৃষক আন্দোলনের একটা পতাকা উঠিয়েছে বটে। কিন্তু জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়েছে, এমন তো দেখলাম না।’

কথা আর বেশি এগোল না। তবে দুজনে মোবাইল নাম্বার দেওয়া-নেওয়া করলাম। ঠিক হল, আবার দুজনেই ভালো করে টিভিতে দেখে মোবাইলে কথা বলব।
বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় ভালো করে স্টার আনন্দ দেখলাম। দিল্লির খবর বলতে একটাই ছবি, লালকেল্লার সামনে একটা ভিড়। আর লালকেল্লার সামনের র‍্যামপ্যাডের বাঁদিকে একটা খালি পোস্ট বেয়ে একজন উঠছে, হাতে কৃষক আন্দোলনের একটা পতাকা, সেটা পোস্টের মাথায় লাগিয়ে দিচ্ছে সে। আর বারবার এবিপি আনন্দ বলছে, ‘জাতীয় পতাকা লাগানোর খুঁটিতে কৃষকদের পতাকা তুলে দেওয়া হল’… ‘দিল্লিতে ধুন্ধুমার’… ইত্যাদি।
রাত সাড়ে আটটার সময় সেই অটোচালকের সঙ্গে কথা হল মোবাইলে। আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কি কখনও দিল্লিতে গেছেন? লালকেল্লা দেখেছেন?’

— হ্যাঁ।

— আপনি নিশ্চয় দেখেছেন যে লালকেল্লার তিনটে গম্বুজ। মাঝখানের সবচেয়ে বড়ো গম্বুজের মাথায় জাতীয় পতাকা থাকে। কই সেটা তো দিব্যি পতপত করে উড়ছে। আচ্ছা, বাঁদিকের যে পোস্টে কৃষকদের পতাকা লাগানো হল, সেখান থেকে কি জাতীয় পতাকা নামানো হয়েছে?

— না সেটা দেখিনি।

— তাই তো। ওই পোস্টে তো কোনো পতাকাই ছিল না। আর যদি তোলার কথা থাকত, তাহলে তো বেলা বারোটার মধ্যেই তোলা হত। (যদিও ২৬ জানুয়ারির অনুষ্ঠান হয় দিল্লির রাজপথে, লালকেল্লায় নয়। লালকেল্লার পতাকা উত্তোলন ও অনুষ্ঠান হয় ১৫ আগস্ট।)

— তা ঠিক। কিন্তু ওখানেই বা কৃষকদের পতাকা কেন তোলা হবে? সেটা কি ঠিক?…

ঠিক-বেঠিকের হিসেব-নিকেশের পরেও কিছু বুঝে নেওয়ার থাকে। ওই অটোচালকের পাশে কথাবার্তায় এগিয়ে এসেছিল আরও বেশ কয়েকজন অটোচালক। এরা যে সবাই বিজেপি-সমর্থক, তা নয়। অটোর রুট আর লাইন পেতে এদের অনেক সময় শাসক দলের সঙ্গেও ভাব রাখতে হয়। কিন্তু এরা কেউই দিল্লির এই আন্দোলনের সঙ্গে এতটুকুও নিজেদের জুড়তে পারেনি, সহমর্মিতা তো দূরের কথা।

বিশাল দেশ আমাদের ভারতবর্ষ। বহু বিচিত্র এর জীবনধারা। পাহাড়-সমতল-অরণ্য-মরুপ্রান্তর, কত বৈচিত্র্যময়। মেঘালয়ের সঙ্গে মিজোরামের মিল নেই, তামিলনাড়ুর সঙ্গে কেরালার মিল নেই। একই ভাবে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষি-সংস্কৃতির সঙ্গে মিল নেই পশ্চিমবাংলা-উড়িষ্যা-বিহারের। কত পৃথক পৃথক অর্থনৈতিক জীবনধারা এদেশে সমান্তরালভাবে বয়ে চলে।

বরাবর দেখা গেছে, গণআন্দোলনগুলোতেও এদেশের সকল প্রান্ত একভাবে সাড়া দেয়নি। এখনকার তিন কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলনেও সেই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে তার বিপরীতমুখী একটা জোড়বার প্রক্রিয়াও চলছে—শুধু সাংগঠনিক চেষ্টায় নয়, সমাজের অন্তর্লীন এক ফল্গু ধারার মতো।

আমরা চিরকাল জেনে এসেছি, সাংগঠনিক ভাবেই আন্দোলনকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ করতে হয়। তার জন্য ‘দল’ লাগে, ‘সঠিক রাজনীতি’ লাগে, উপযুক্ত ‘নেতৃত্ব’ লাগে। কিন্তু ভারতের বুকে এই অভুতপূর্ব কৃষক আন্দোলন চলছে কোনো পার্টির নেতৃত্বে নয়, কোনো একগুচ্ছ পার্টির যৌথ নেতৃত্বেও নয়। ‘সংযুক্ত কিষান মোর্চা’ তৈরি হয়েছে নীচুতলার কৃষকদের নতুন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে।

লকডাউনের মধ্যে সংসদ এবং রাজ্যসভায় আলোচনা না করে তড়িঘড়ি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আইন পাশ হয়ে গেল গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে। প্রসঙ্গত এই তিনটে আইনের বিষয়বস্তু নিয়ে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমল থেকেই এগোনোর একটা প্রক্রিয়া চলছিল। ১.সরকারি মান্ডির পাশাপাশি কর্পোরেট মজুতদারির ব্যবস্থাকে আইনানুগ করা; ২.চাষির সঙ্গে চুক্তি করে চাষের ফসলের ওপর কর্পোরেট কোম্পানির দখল কায়েম করা; এবং ৩.অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করে আলু, ডাল, তেল, তিলের মতো পণ্যকে আগেকার আইনের আওতা থেকে বার করে এনে অবাধে মজুত করার আজাদি দেওয়া বড়ো কোম্পানিদের—এই হল তিনটে নতুন আইনের মোদ্দা কথা। রিলায়েন্স, পতঞ্জলি, ওয়ালমার্ট্র-এর মতো কোম্পানিরা অনেকদিন ধরেই সরকারগুলোর কাছে এই আবদার করে আসছিল। নরেন্দ্র মোদি সরকার কোনোরকম কালক্ষেপ না করে তাদের আবদারকে পূরণ করলেন। এতখানি বেপরোয়া হয়ে এই কাজটা করলেন যে দেশের চালু সাংবিধানিক প্রক্রিয়াটাও মানলেন না। সেপ্টেম্বর মাসের একটা রবিবারে পাশ হয়ে গেল তিনটে বিল। বিরোধী দলগুলো নিয়মরক্ষার মতো করে একটা প্রতিবাদ অবশ্য করেছিল।

কিন্তু উত্তর ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষিসমাজ বুঝতে পারছিল যে বিরোধী দলগুলোকে দিয়ে মোদি সরকারের এই বেপরোয়া একরোখা মনোভাবকে আটকানো যাবে না। তাই তারা জুন-জুলাই মাস থেকেই তাদের গ্রাম, গ্রামের কাছে রেললাইনের ওপর বসে প্রতিবাদ শুরু করল। কিন্তু অবাক ঘটনা হল, সমস্ত মিডিয়া এই আন্দোলনকে খবরে স্থান দিল না। অগত্যা সাত মাস পর কৃষকেরা দিল্লির দিকে রওনা হল। দিল্লিতে ঢোকার মুখে দিল্লি পুলিশ চাষিদের জলকামান আর কাঁদানে গ্যাস দিয়ে আটকাতে চাইল। চাষিরাও নাছোড়বান্দা। তারা দিল্লির সীমান্তেই বসে পড়ল লাগাতার প্রতিবাদ-জমায়েতে। কৃষক-জমায়েতের এই চেহারাটা দেখে কৃষক-নেতারাও টের পেল যে নিজেদের মনমর্জিমাফিক চললে পাততাড়ি গোটাতে হবে। এইভাবেই এল কৃষকদের গণতন্ত্র। চার শতাধিক সংগঠনকে প্রত্যেক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে। এই অভ্যাস আমাদের দেশের পার্টি-পলিটিক্সে ছিল না। এবার তার শুরুয়াত হল।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশের চাষিরা এইভাবে নিজেদের জুড়লেন।

চাষিদের দ্বিতীয় দাবি হল, সমস্ত ফসলের ওপর সারা দেশে সর্বনিম্ন সহায়ক মূল্য (Minimum Support Price, MSP) ঘোষণা করা এবং তার আইনি প্রক্রিয়া চালু করা। কিন্তু আমাদের দেশের বাণিজ্যিক সংবাদপত্র আর টিভি চ্যানেলগুলো এই দাবিগুলোকে যথাযথভাবে তুলে ধরেনি। পশ্চিমবাংলায় বেশিরভাগ চাষির হয় নামমাত্র জমি কিংবা আদৌ চাষের জমিই নেই। তারা অন্যের জমিতে বর্গা নিয়ে, ভাড়া নিয়ে, লিজ নিয়ে চাষ করে। নিজেদের ফসলের উপযুক্ত দামই তারা পায় না। কেজিতে এক টাকা বা দু-টাকায় যে আলু তারা ফড়ে বা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়, সেই আলু বাজারে একসময় পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর সরকারি সহায়ক মূল্যও সঠিক সময়ে ঘোষণা হয় না। সরকার চাষিদের কাছ থেকে ফসল কেনার কোনো পরিকাঠামোও তৈরি করেনি। আর সরকারি মান্ডি তো বর্ধমান বা হুগলি ছাড়া কোথাও দেখাই যায় না। তার ফলে এই নতুন আইনের পরিণাম তারা অনেকটাই বুঝতে পারছে না। মনের দিক থেকে কীভাবে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের জুড়বে? বামপন্থী দলগুলো যে এই আন্দোলনে নিজেদের কিছুটা জুড়ছে, তা অনেকটাই তাদের দলীয় স্বার্থ থেকে, আরও স্পষ্টভাবে বললে ভোটের স্বার্থ থেকে।

দেশের মানুষ এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তে, এক গ্রাম এক শহর থেকে অন্য গ্রাম-শহরে জুড়ে থাকে কীভাবে? জোড়বার অন্যতম মাধ্যম হল সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়া। রেডিও-টিভি-সংবাদপত্র এবং আধুনিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিয়ে এই মিডিয়া। মিডিয়া শব্দটার অর্থ হল মিডিয়েশন বা মধ্যস্থতার বাহক। খবরের কাগজ পড়তে পড়তে, রেডিও শুনতে শুনতে, টিভি দেখতে দেখতে আমরা খবরের জন্য অনেকটাই এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। যেমনটা হয়েছেন আমাদের বন্ধু অটোচালক। তিনি স্টার আনন্দে দেখলেন আর শুনলেন, ‘জাতীয় পতাকা লাগানোর খুঁটিতে কৃষকদের পতাকা তুলে দেওয়া হল’। ব্যস! তার সঙ্গে ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ ধ্বনি জুড়ে তার মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল। কী চলছে দেশটায়!

পাঠক, একবার ভেবে দেখুন, কী মারাত্মক কাজ মিডিয়া করল! একজন মানুষের জাতীয়তাবোধটাকে উশকে দেওয়ার জন্য সামান্য মিথ্যাকে এমনভাবে সত্যের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল যে একজন সাধারণ মানুষের জাতীয় চেতনা আর তার হিন্দু-মন মিলে মনটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল কৃষকদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে, মুসলমান সমাজের বিরুদ্ধে। মনের মধ্যে তো এমনিতেই রোজকার জীবনের রাগ, দুঃখ, হতাশা, ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা জমা হয়েই থাকে। তার সঙ্গে জুড়ে গেল একটা প্রোপাগান্ডা, একটা সর্বব্যাপ্ত প্রচার। সে দেখতে পেল না যে লালকেল্লার ওপর জাতীয় পতাকা একইভাবে উড়ছে। ভুলে গেল যে ২৬ জানুয়ারি লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন হয় না। অতএব তা নামিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এইভাবে আমাদের মধ্যস্থতাকারীদের বেইমানি আমাদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। দল আর পার্টি-পলিটিক্সও আর এক ধরনের মধ্যস্থতা। আমরা তো দিল্লিতে গিয়ে প্রত্যেকে শাসন করতে পারব না। আমরা ভোট দেব আর আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের হয়ে শাসন করবে। এইভাবে আমরা দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়েছি, নেতাদের ওপর নির্ভরশীল হয়েছি। তারপর যখন পদে পদে ঠকেছি, তখন পার্টি-পলিটিক্সের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়েছি।
আজকের এই কৃষক আন্দোলন মধ্যস্থতাকারী মিডিয়া, দল, নেতার ‘তন্ত্র’-এর জটাজাল থেকে বেরিয়ে আবার ‘আমরা সবাই রাজা’র ‘গণ’-এ আমাদের ফিরিয়ে নিতে চাইছে। এবারের ২৬ জানুয়ারি দিল্লির কৃষক অভিযান সেই ছবিকেই তুলে ধরেছে।

গণ’-এর একজন সামান্য সভ্য হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের কাছে প্রশ্ন এসেছেে: আমরা এই জনস্রোতে নিজেদের জুড়ব কেমনে?

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২