|

আবদুলরাজাক গুরনাহর সাক্ষাৎকার – অনুবাদ: মাইনুল ইসলাম মানিক

শেয়ার করুন

“অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু হিসেবে উত্তর-উপনিবেশবাদ ধারণা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় কারণ এটি আমাকে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে লেখালেখির মধ্যবর্তী পটভূমি অবলোকনের সুযোগ করে দেয়। আমি প্রাতিষ্ঠানিক ও লেখকের দ্বৈত ভূমিকায় কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না।”

আবদুলরাজাক গুরনাহর সাথে অনুপমা ও শ্রেয়া

অনুবাদ : মাইনুল ইসলাম মানিক

[ভূমিকা: আবদুলরাজাক গুরনাহ। জন্ম তানজানিয়ার জানজিবার প্রদেশে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন অনুপমা মোহন ও শ্রেয়া এম. দত্ত। সাক্ষাৎকারটি দুটি অংশে গ্রহণ করা হয়। গুরনাহ কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস। সাক্ষাৎকারে মোহন ও শ্রেয়া গুরনাহর ‘ইন্ডিয়ান ওশান’ নিয়ে সাধারণ কৌতূহলের ওপর ভিত্তি করে কিছু বিষয়-আশয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করেন। একই সাথে তারা উত্তর-উপনিবেশবাদের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাব্যতা এবং একবিংশ শতকের বিশ্বের কাছে প্রত্যাশার স্বরূপ উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করেন। সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলো গুরনাহকে শ্রেয়া ও মোহন কয়েক মাস ধরে ই-মেইলে প্রেরণ করেন।]

শ্রেয়া দত্ত: অধ্যাপক গুরনাহ, আপনার অনেক উপন্যাসের বিষয়বস্তু শরণার্থী সংশ্লিষ্ট এবং এই বিষয়টি আপনি ‘বাই দ্য সী’ উপন্যাসে বিভিন্নভাবে ইমিগ্রেশনের দৃশ্যাবলীতে উপস্থাপন করেছেন। Desertion উপন্যাসে শরণার্থী বিষয়ে আপনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা পাই বিশেষত যখন আমিন তার ভাই রশিদকে দুঃখবোধ ও গৃহকাতরতায় আবিষ্ট না হওয়ার এবং নিজের জীবনকে এসবের ঊর্ধ্বে উঠে বাইরের জগতে প্রবেশ করার উপদেশ দেন। এমনকি শরণার্থী হওয়ার বিষয়টি কৌশলগতভাবে শক্তি প্রয়োগের বিষয় না-হওয়া সত্ত্বেও উপনিবেশ-উত্তর এই আকাঙ্ক্ষাকে আপনি শুধু পছন্দের বিষয়ই নয়, নিগ্রহ করার বিষয়েও কীভাবে ইচ্ছে পোষণ করেন? বৈশ্বিক শরণার্থী প্রক্রিয়ার সাথে আপনি আপনার এই দর্শনকে কীভাবে সম্পৃক্ত করেন?

গুরনাহ: বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকেই ‘বাই দ্য সী’ উপন্যাসটি শরণার্থী সংশ্লিষ্ট। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সালেহ ওমর, জান ও এলেকে বিভিন্ন ঘটনা দ্বারা তাড়িত হয়েছেন। Desertion উপন্যাসটি লোকজনের পছন্দসংশ্লিষ্ট কিংবা পছন্দ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমিন যা কিছু ছেড়ে দিয়েছেন বা হারিয়েছেন, আমার মনে হয় না তা মোটেও শরণার্থী সংশ্লিষ্ট। তিনি তার নিজেকে বিশ্বস্ত হিসেবে নিশ্চিত করেছেন এবং নিজের আবাসস্থল ছেড়ে যাননি। তার ভাই রশিদকে দেয়া তার উপদেশ হচ্ছে মূলত একজন বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে তার বোধের নির্যাস এবং তার ভাইয়ের চাহিদা বৃদ্ধির নিরিখও। এই উপন্যাস দুটো হচ্ছে উপনিবেশবাদের পরিণতি বিষয়ে। আমার এই বিষয়টাই আপনার কাছে ‘শরণার্থীভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা’ বলে প্রতিভাত হয়েছে। উপনিবেশবাদের ভয়াবহতা তাদের জীবনে নেমে আসা সত্ত্বেও তাদের টিকে থাকার বিষয়-আশয় এবং সেসবের উপায় সম্পর্কেই মূলত এই দুটি উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে। 

অনুপমা মোহন : আপনার উপন্যাসকে যদি বিশ্বসাহিত্যের পরিবর্তে সমুদ্রসাহিত্য বলি, তাহলে কি আপনি অস্বস্তিবোধ করবেন? আপনি কি মনে করেন সমুদ্রসাহিত্য যা তুলে আনতে পারে, বিশ্বসাহিত্য তা শ্রেণিগতভাবে তুলে আনার ক্ষেত্রে যথার্থ নয়?

গুরনাহ : আমার অনুমান, ‘সমুদ্রসাহিত্য’ বলতে আমি যে উপকূলবর্তী সংস্কৃতির মধ্যবর্তী সংযোগের কথা বলেছি, আপনি সেটিকে বোঝাতে চেয়েছেন। আমি নিশ্চিত নই এই উপকূলবর্তী সংস্কৃতির সাহিত্য প্রকৃতপক্ষে ধরন বা শৈলী হিসেবে কতটা যথার্থ, খুব সম্ভবত এটি একটি সুবিন্যস্ত বর্ণনা বলা যেতে পারে। আমি যে বিষয়টা বোঝাতে চাচ্ছি, তা হল যদি বর্ণনার যৌক্তিকতা এই উপকূলবর্তী সংস্কৃতির সংযোগকে অপরিহার্য করে তোলে, তখন এই বিষয়টা আসতে পারে। সুতরাং সংস্কৃতি বা স্থানকে তুলে আনার চেয়ে বরং বর্ণনার প্রয়োজনে সেটি উঠে আসাটাই স্বাভাবিক। বিশ্বসাহিত্য বলতে তুলনামূলক সাহিত্যের একাডেমিক শৃঙ্খলাবোধকে ইউরোসেন্ট্রিক ঐতিহ্যের বাইরে সংস্থাপনের বোধকে আমি অতিক্রম করতে পারি না। ‘ওয়ার্ল্ড লিটারেচার ফ্রম দ্য গ্লোবাল সাউথ’ ধারণার প্রতি বর্তমানে এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে বলেই আমি সচেতনভাবে বিশ্বাস করি। লেখালেখির এই বিষয়টাকে আমি যখন আবেগের সাথে সহানুভূতি দেখাচ্ছি তখনও আমি নিশ্চিত নই, ‘ওয়ার্ল্ড লিটারেচার’ বিষয়টাতে ফেরাটা কেন জরুরি।

শ্রেয়া দত্ত : আপনার উপন্যাসসমূহ কমিক রিলিফের অনুপস্থিতির জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বলা যায়, আনন্দময় ও প্রফুল্লতার মুহূর্তও অনুপস্থিত। এটিকে অত্যাসন্ন হতাশাবোধ বা বিমূঢ় করা নিঃসঙ্গতার দৃশ্য দ্বারাও ছায়াচ্ছন্ন করা হয়নি। আপনি একমত? এই ধরনের নিঃসঙ্গতার প্রবণতা কি উপন্যাসের সুচিন্তিত বা কাঠামোগত শৈলী? 

গুরনাহ : আপনি যেটাকে কমিক রিলিফ বা হাস্যরসের মাধ্যমে দুঃখবোধ থেকে বের করে আনার কথা বলেছেন, আমার লেখায় তা অনুপস্থিত বলে আমি মনে করি না। সন্দেহ নেই, কমেডি বিষয়ে আপনার ধারণার সাথে আমার ধারণার ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ এবং ভাষাশৈলীর মধ্যেও হাস্যরস রয়েছে। বিষাদ ও নিঃসঙ্গতা দ্বারা ছায়াচ্ছন্ন হওয়ার বিষয়টিকে আমি মানুষের অস্তিত্বের স্বরূপ হিসেবেই দেখি। 

শ্রেয়া দত্ত : আপনার সর্বশেষ উপন্যাস ‘গ্র্যাভেল হার্ট’-এ সমুদ্র খুবই বিবর্ণ হয়ে ধরা দিয়েছে। এটিতে আপনি মূলত পারিবারিক ইতিহাস ও সম্পর্কের ভেতর মনোনিবেশ করেছেন। সলিমের বাবা মাসুদের সাথে তার সম্পর্ক উপন্যাসের গতিকে শাসন করে। তাছাড়া সলিম খুব অল্পতেই ঘরে ফিরে আসে। আপনার অধিকাংশ চরিত্রের ক্ষেত্রেই প্রায় কাছাকাছি ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। আপনি পারিবারিক ইতিহাসের সাথে সমুদ্রের ইতিহাসকে কীভাবে সমন্বয় করেন? মানে পাশাপাশি দুটো বিষয়কে কীভাবে এগিয়ে নেন? 

গুরনাহ : সলিম তার বাবার সাথে পুনরায় সম্পৃক্ত হতে ফিরে আসে। কিন্তু এই ফিরে আসাটা আমার সৃষ্টি করা অপরাপর চরিত্রের কাছাকাছি নয় মোটেও। Admiring Silence-এর কথক ফিরে আসে। Desertion-এর শেষদিকে রশিদ ফিরে আসার প্রায়শ্চিত্ত করে। চরিত্রগুলোর অভিজ্ঞতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এই ছেড়ে যাওয়া অথবা তাদের জীবনের বিচ্ছিন্নতা যা তাদের ফিরে আসাকে জটিল করে তোলে। শরণার্থীর ক্ষেত্রে এই ফিরে আসাটা যৌক্তিক কারণে বা সহিংসতার ভয়ে সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি হয়তো গ্র্যাভেল হার্ট-এর ব্যাপারেও একই কথা বলে থাকতে পারি। একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে সম্পর্কের খুব নিবিড়তাকে ক্ষমতা এবং তার সামর্থ্য দ্বারা বিকৃতকরণ সম্পর্কে বলে থাকতে পারি।

অনুপমা মোহন : কিছু চেনাজানা দিক থেকে আপনার লেখালেখি আমাকে কনরাডের কথা মনে করিয়ে দেয়। কনরাডের সমস্ত মনন ও শিল্পসত্তা জুড়ে একটি একক গল্পই ছিল। গল্পের পর গল্পে তিনি সেই একক গল্পটিকেই পরিশুদ্ধ করেছেন, শান দিয়েছেন। তার গল্পটি ছিল একজন পোড়ো মানুষের গল্প যিনি তার অতীত থেকে পালাতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হচ্ছেন। কনরাডের লেখালেখিতে পটভূমি নিছকই ঘটনাকেন্দ্রিক ছিল এবং এই বিষয়টিই পাঠককে সম্পূর্ণভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। আপনার গল্পও একইভাবে আমাকে এই ধারণা মনে করিয়ে দেয় যে সম্ভবত আপনার সকল লেখায় আপনি সত্যিকার অর্থেই একটি বিশেষ গল্পে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন যে গল্পটিকে আপনি বারবার পরিশুদ্ধ করতে চাচ্ছেন, আরও শুদ্ধ, আরও বিশেষায়িত করে তুলছেন, আপনার মনের ভেতর লালিত লক্ষ্য অর্জিত হওয়া পর্যন্ত শিল্পিত করে তুলছেন। এমন একটি চরিত্রায়ণে কি আপনি সন্তুষ্ট? উপন্যাসে আপনার বর্ণনাশৈলী কীভাবে বিস্তার লাভ করতে থাকে, বলবেন কি?

গুরনাহ : আমি জানি না আমার লেখায় একটা একক ভূতুড়ে গল্পই থাকে কি না আর সেই গল্পটিকেই আমি পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করছি কিনা। আমার মনে হয় আমার একের অধিক গল্প আছে। লোকজন যেসব পছন্দের ভেতর থাকতে চায় বা বেরিয়ে আসতে চায়, আমি তার ঊর্ধ্বে থাকতে চেয়েছি। আমি সে সম্পর্কেই পুনঃপুনঃ লেখার চেষ্টা করেছি এবং চেষ্টা করেছি ইউরোপে বসবাসের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে লিখতে। সুতরাং একটি বিষয়েই আমি লিখতে চেষ্টা করেছি: টিকে থাকা, বিচ্ছিন্ন হওয়া, স্থানচ্যুত হওয়া। আমার মনে হয়, এখানেই একটির অধিক গল্প রয়েছে এবং এই তিনের ভেতর হারানো, বেদনাবোধ ও পুনরুদ্ধারের আরও অনেক বিষয়-আশয় রয়েছে। আমার মনে হয় লোকজনের এসব অভিজ্ঞতার পরিপুষ্টতা নিয়েই আমি লিখি।

শ্রেয়া দত্ত : আপনার কিছু গদ্যে লেখক হয়ে ওঠার পথে আপনার জটিল অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে Writing & Place গদ্যের কথা বলা যেতে পারে। এই গদ্যে আপনি লিখেছেন, লেখালেখি এমন একটা জিনিস যেখানে পরিপূর্ণতার পরিবর্তে আপনি বারবার হোঁচট খেয়েছেন। আপনি যে সময় ইংল্যান্ডের উদ্দেশে বাড়ি ছেড়েছেন সে সময়ের কথা বলেছেন। নতুন একটি দেশে আপনার প্রাথমিক দিনগুলোর সাথে জানজিবারের বিবিধ চেতনার সাদৃশ্য নিয়ে লিখেছেন। Learning to Read প্রবন্ধে মালিন্দিতে আপনার বিলীনপ্রায় শৈশবের মিশ্র সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথা লিখেছেন। এই সাংস্কৃতিক প্রভাব এটিকে সংশয় ও জটিলতার দিকে চালিত করেছে। এর মানে এই যে, আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে লেখক হয়ে ওঠার আগেই একজন লেখক হিসেবে লেখালেখি শুরু করেছেন। লেখকত্বের পথে আপনার এই চেতনা কি এখনও বিরাজমান কিংবা অতীতের এই চেতনাকে কি এখনও পুনর্বিবেচনা করেন?

গুরনাহ : অতীতের চেতনা পুনর্বিবেচনার মধ্যে পড়ছে না। এটা মূলত এখনও আমার কাছে পর্যাপ্ত বর্ণনাই মনে হয় যেটিকে আপনি ‘লেখকত্বের পথে যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আমি সম্ভবত এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করছি না, বরং এটিকে আমি ‘লেখালেখিতে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া’ বলতে চাই। আমি মূলত অভিজ্ঞতা, আত্মজীবন ও সংস্কৃতির মিশেলের জটিলতাকে তুলে ধরার উপায় হিসেবেই লেখালেখির দুরূহ অভিযাত্রা নিয়ে লিখি।

শ্রেয়া দত্ত : আপনার সর্বশেষ উপন্যাস গ্র্যাভেল হার্ট সম্পর্কে কিছু বলবেন কি? এই এপিগ্রাফ আবু সাঈদ আহমাদ ইবন ঈসা-আল-খারাজ থেকে নেয়া যাতে বলা হয়েছে: ‘ভালোবাসার শুরুটা হচ্ছে আশীর্বাদের সংগ্রহশালা।’ আপনি এই এপিগ্রাফ দিয়ে শুরুর বিষয়টি কেন পছন্দ করলেন? এটা কি কোনোভাবে শেক্সপিয়রের Measure for Measure-এর সাথে সম্পৃক্ত? মানে উপন্যাসের শিরোনাম কি সেখান থেকেই এসেছে? আপনার কাজের ভেতর এই যোগসূত্রকে কীভাবে বিবেচনা করেন?

গুরনাহ : আমার মনে হয় এই এপিগ্রাফ যা উপন্যাসের মূল ধারণাকে ধারণ করে, সেটি উপন্যাসে তার নিজের কথাই বলছে। এই এপিগ্রাফ যে হেঁয়ালিপূর্ণ অনুজ্ঞাসূচক উপদেশ দেয়, সেটিকে আমার পছন্দ হয়েছে। এটিকে অধিক সম্প্রসারণ করতে গেলে এর অর্থ আরও সংকুচিত হয়ে পড়ে। কিছু দিক বিবেচনায় Measure for Measure একটি হেঁয়ালিপূর্ণ উপন্যাস। কিন্তু সর্বোপরি এটি আত্মতুষ্টির জন্যে ন্যায়পরায়ণধর্মী আড়ম্বরতার অপব্যবহার। এই বোধ থেকে বলা যায়, এটি সুফিবাদী হিতোপদেশের উলটো পার্শ্ব মানে একই মুদ্রার উলটো পিঠ যা এই উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমি এই উপন্যাসে আবির্ভূত হওয়া নিবিড়তাকে সম্পৃক্ততা ও সমঝোতার চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে কল্পনা করি।

অনুপমা মোহন : আপনি কি বিশেষ কোনো ঐতিহাসিক বিশ্লেষণকে লেখালেখির সময় বিবেচনায় রাখেন? যেমন ধরুন, জানজিবার বিপ্লব বা এর ফলাফল বা এ ধরনের কিছু? কিংবা আপনি কি স্মৃতি থেকে কিছু লিখেন বা অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার চেতনা থেকে? আপনার উপন্যাস বাস্তব চিত্রের চেয়ে বরং পূর্ব আফ্রিকার জীবনের অনুভূতি বলবেন কি?

গুরনাহ : আমার উন্যাসের পটভূমি যেটুকু স্থান দখল করে আছে তা জীবনভরই আমার কাছে গভীর আনন্দদায়ক বোধ হয়েছে। তাই একদিক থেকে বলা যায় আমি সব সময়ই পটভূমির এসব উপকরণকে বিবেচনা করি। বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে খতিয়ে দেখা বা বারবার সবিস্তারে পাঠ করা সবসময়ই প্রয়োজন। কিন্তু আমি শুধু সেসবই লিখি যা আমি জানি এবং যেসব বিষয়ে আমি সচেতন। আমি নিশ্চিত নই আপনার অবস্থান কেন ‘বাস্তব চিত্রের চেয়ে বরং পূর্ব আফ্রিকার জীবনের অনুভূতি’র বিষয়ে। আমার বরং মনে হয় উপন্যাস হচ্ছে এমন একটা প্রক্রিয়া যেন এখানে সবকিছুই সংমিশ্রিত বা সংশয়প্রবণ প্রক্রিয়া। আমার মনে হয় ফিকশনের ক্ষেত্রে এ দুটি বিষয়ের কোনোটিকেই পরিহার করে এগোনো যায় না। 

অনুপমা মোহন : সর্বশেষ প্রশ্ন। উপকূলীয় বা আঞ্চলিক বিষয়-আশয়কে আপনার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য দিয়েছেন। উত্তর-উপনিবেশের বিবেচনায় আপনার সাহিত্যকর্ম vis-à-vis-কে কীভাবে বিবেচনা করেন? আপনার পাণ্ডিত্যপূর্ণ মননশীল কাজ থেকে সৃজনশীল কর্মকে কীভাবে আলাদা করেন? নাইপলের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, তিনি ফুলটাইম লেখক হতে চান কারণ অন্যান্য পেশা তাকে লেখক হওয়ার পথে খুন করে ফেলবে। যাই হোক, আমি আশ্চর্য হই, আপনি প্রাতিষ্ঠানিক ও লেখালেখির দ্বৈত ভূমিকা কীভাবে সম্পাদন করেন?

গুরনাহ : অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু হিসেবে উত্তর-উপনিবেশবাদ ধারণা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় কারণ এটি আমাকে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে লেখালেখির মধ্যবর্তী পটভূমি অবলোকনের সুযোগ করে দেয়। আমি প্রাতিষ্ঠানিক ও লেখকের দ্বৈত ভূমিকায় কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না। এগুলো পরস্পর একেবারেই ভিন্নধর্মী কাজ এবং কখনও কখনও একটি আরেকটিকে সামান্য পরিমাণে সুবিধাও দেয়। 

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *