এখন রাজনীতির সময় নয় – সরোজ দরবার

শেয়ার করুন

আমাদের ওখানে এক বুড়ি ছিল জানো; সুধন্য মাস্টারের সঙ্গে দেখা হলেই ভারী ব্যস্তসমস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করত, হ্যাঁ হে মাস্টার, তা কিছু জানা গেল নাকি? 

অজপা মোবাইলে কাগজ দেখতে দেখতে চা খাচ্ছিল। দিনকয় হল কাগজ নেওয়া বন্ধ হয়েছে। বলা যায় না, কোন পথে ভাইরাস ঢুকে পড়ে, তার তো ঠিক নেই; অন্তত আশঙ্কা তেমনটাই। কথায় বলে সাবধানের মার নেই। পুরো বিষয়টায় অবশ্য খানিকটা ধন্দ আছে। কেউ কেউ বলছেন, কাগজের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় না। আবার, কেউ কেউ, যেমন প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তের পালটা একটা মত থাকে, সেভাবেই, বিভিন্ন গবেষণা ইত্যাদি দেখিয়ে বলছেন, ছড়ায়, দিব্যি ছড়ায়। এ যেন সেই, এগোলে রাম মারবে নইলে রাবণ! 

সাত-পাঁচ ভেবে, গৌতমের তীব্রতর আপত্তি নাকচ করেও শেষমেশ কাগজ-আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গৌতম হুমকি দিয়ে বলেছিল, এরপর যদি মিডিয়া ধসে যায়, কর্মীদের লে-অফ নোটিস ধরায়, তুমিও কিন্তু দায়ী থাকবে। আমাকে দোষ দিতে পারবে না বলে দিলাম। অজপা, খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়ে বা নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে বলেছিল, মার্কিন বোমা যখন যেখানে পড়ে, তার জন্যও তোমার-আমার খানিকটা দায় থেকে যায় বইকি! তোমার দেশেও যখন মিথ্যে অভিযোগে পিটিয়ে একজন মানুষের চামড়া তোলা হয়, কি, কেউ না-খেতে পেয়ে মরে, তার জন্যও করদাতা হিসেবে, ভোটদাতা হিসেবে আমাদের দায় তো থেকেই যায়। কী করতে পারি আমরা! বাহাত্তর বছরের দেশটা যে বদলে যাচ্ছে, তাতেও তোমার-আমার কনট্রিবিউশন আছে। খামখা এখন নিজেকে সাধু প্রমাণ করে কী লাভ! বরং সাধু সাবধান। 

গৌতম হেসেছিল। বিষণ্ন, ক্লিষ্ট; টাটকা অথচ ঝরে যাওয়া কুমড়োফুলের মতো সম্ভাবনাহীন, বেদনার্ত ছিল সে-হাসি। 

আর-একটা বিষয়েও অবশ্য খটকা আছে অজপার। এই ‘মোবাইলে কাগজ-দেখা’ কথাটা যেন কেমন-কেমন! হিসেবমতো বলতে হয়, ই-পেপার। কিন্তু জিভের সামনে কেবল ‘কাগজ’ কথাটাই নাচানাচি করে। এ-সব থাক। গৌতম হঠাৎ সাত সকালে দেশের বাড়ির গল্প তুলল দেখে খানিকটা অবাক হয় অজপা। তারপর বলে, জানা সত্ত্বেও- যেহেতু এ-গল্প সে বহুবার শুনেছে – বলে, কোন সুধন্য মাস্টার? সেই যার লেখা একবার কাগজে বেরিয়েছিল?

গৌতম চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বলে, নয়তো আর কে! সেই একবার কাগজে একটা লেখা ছাপা হয়েছিল বলে, বুড়ি ভাবত, সুধন্য মাস্টার জানে না, হেন জিনিস পৃথিবীতে নেই। 

অজপা মুচকি হাসে; বলে, বটেই তো! তা, জিজ্ঞাস্য ছিলটা কী?

সে ভারী অদ্ভুত। বুড়ির প্রশ্ন ছিল, তার কুমড়ো গাছে কবে ফুল আসবে? গাছ তো ফনফনিয়ে বড়ো হয়েছে; এখন কবে ফুল আসবে, এটুকু যদি জানা যায়, তাহলে খানিক নিশ্চিন্তি; কিন্তু প্রতিবারই সুধন্য তাকে হতাশ করে। বলে, না গো পিসি, কাগজে এ-ব্যাপারে কিছুই লেখেনি। আমিও কিছু জানি না। বুড়ি আর কী করে! জিভে চুকচুক শব্দ করতে-করতে চলে যেত। সুধন্য বলে, আজ আমারও খুব আশ্চর্য মনে হয় জানো! অজপা বলে, কী? এই যে, মানুষ এত খবর বলে দিতে পারে। এত পূর্বাভাস; কবে ঝড় আসবে, কোথায় আসবে, কত কিমি বেগে বইবে, কতক্ষণ বইবে… এত দুরূহ জিনিস বলে দিতে পারে, জানাতে পারে; অথচ গাছে কবে ফুল আসবে সেটুকু এখনও জানাতে পারে না।   

অজপা, এঁটো চায়ের কাপটা তুলতে তুলতে বলে, লকডাউন বাড়তে থাকলে, চিন্তাভাবনার হাল সব এরকমই হবে। এখন, বলে কিনা, তুমুল ঝড় আসছে; গোটা বাংলা আতঙ্কে কাঁপছে; এখন নাকি জানা দরকার যে কুমড়োগাছে ফুল আসবে কবে? 

গৌতম নিজের খালি চায়ের কাপটা অজপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, আহা! জানাতে হবে, তা তো বলছি না। বলছি যে, এখনও জানাতে পারে না; বা, জানানোর চেষ্টা করে না। কিংবা আগ্রহই দেখায় না।

অজপা রান্নাঘরের ভিতর থেকেই জবাব দেয়, সে তো কত কিছু নিয়েই মিডিয়ার এখন আগ্রহ নেই। তাদেরও তো প্রায়োরিটি আছে। ব্যাবসা আছে। 

গৌতম বারদুই নিজের মুখের ভিতর ‘প্রায়োরিটি’ শব্দটিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করে। তারপর ‘ব্যাবসা’ শব্দটিকে। যেন একসঙ্গে গালে দুটো লজেন্স ফেলে, জিভের কায়দায়, মুখের ভিতরেই ব্যাডমিন্টন কোর্ট পেতে দিব্যি খেলা চলছে। 

অজপা, রান্নাঘর থেকে ফিরে, শেষের ‘ব্যাবসা’ শব্দটাই শুনতে পেল। বলল, ব্যাবসাটাকে তো দেখতে হবে। নইলে চলবে কেমন করে!

গৌতম আর-কিছু বলে না। এই ক’দিন আগেই আনন্দ তেলতুম্বেকে গ্রেপ্তারের পর সে বেশ অবাক হয়েছিল। তা নিয়ে তেমন কোথাও কিছু বলা হচ্ছিল না। তারপর, একটা মেয়েকে, সে গর্ভবতী, তাকেও নাকি জেলে ভরা হয়েছে, এমনকি এই মহামারীর সময়েও; যেন মহামারীর থেকেও মেয়েটি রাষ্ট্রের কাছে বড়ো বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছিলেন, এমনটা তো ওয়ার জোনেও হয় না। সে-সব নিয়েও তেমন কিছু বলা হল না; তখন প্রতি মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর সংখ্যা যেন নতুন নতুন করে উদ্দীপন; কত মানুষ কর্মহীন হতে পারে, দুর্দশা ঠিক কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার আনুমানিক অবয়ব নিয়ে চর্চা হচ্ছে। মানুষ যত আতঙ্কিত হচ্ছিল, তত টিভির গায়ে সেঁটে বসছিল। টিভিও ক্রমাগত সে-সবই বলে চলেছিল, যাতে মানুষ সেঁটে থাকে। যেন সেই চুইং গাম চেবানোর মতো। চিবোচ্ছে বলেই জিভে-ঠোঁটে আটকে যাচ্ছে। আবার আটকে যাচ্ছে বলেই, ছাড়ানোর জন্য ফের চেবানো হচ্ছে; ভারী মজার ব্যাপার। তো, এসবের ফলে, যে-সব কথা হওয়ার ছিল, হওয়া জরুরি ছিল, তা কিছুতেই হয়ে উঠতে পারছিল না, তেমন করে। যেমন করে বললে, একটা বলা-কথা, শোনার মতো কথা হয়ে উঠতে পারে। অথচ মানুষ যাতে কথা শোনে, তার জন্য কত-না ব্যবস্থা। এই যদি বলা হত, অমুকের সঙ্গে আধার লিংক করো, সকলে তো বাধ্য হয়েই শুনত। না-শুনে পারত কি থাকতে!

তখনও গৌতম বিরক্তি প্রকাশ করেছিল; আর, অজপা বলেছিল, আরে ওদের ব্যাপার ওদেরই বুঝতে দাও। তা ছাড়া এত খবর যে দেখাবে, তার সময়ই বা কোথায়! সারাক্ষণই তো ব্যস্ত। সে-কথাটা মনে পড়তে গৌতম এখন একটু হেসে ফেলল; 

দেখে অজপা বলল, আবার কী হল! হাসির মতো কী বললাম? গৌতম বলে, আরে না না, সে-সব কিছু নয়; একটা পুরনো কথা মনে পড়ল।

অজপার চোখে প্রশ্ন। দেখে, গৌতম বলে, একজন লোক ছিল জানো। মানে, তখন ওরকম কিছু কিছু লোক থাকত পাড়ায়। যাদের তেমন কিছু কাজ ছিল না। অথচ সারাদিন বেজায় ব্যস্ত; –‘এই যে রতন, একটু গমটা ভাঙিয়ে এনে দেবে ভাই?’, ‘রতন ভাই, গোরুটাকে একদিন পাল দিইয়ে নিয়ে আসবে? বড্ড উতলা হয়েছে’, ‘বাবা রতন, কুসুমের বাড়ি আম-লিচু দিতে যাওয়া হবে, যাবি তো সঙ্গে?’ – প্রশ্নগুলো এরকম হলে, উত্তর প্রতিবার একই, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, রতন থাকতে চিন্তা নেই, তবে একটু ব্যস্ত কিনা! কালকের দিনটা যাক।’ এরকম করে, রতন বেশ কিছু কাজ করে; কিন্তু আবার অনেকগুলোই সে করে উঠতে পারে না। কারণ কাজের লিস্টি নিয়েই সে সারাদিন ব্যস্ত হয়ে থাকে। তারপর কোনটা কাজ, কোনটা আগে করবে, কোনটা করবে না, কোনটা না-করলেও হয় – সব গুলিয়ে যায় তার। শেষমেশ সে হয়তো, একটা গোটা দিনে খানিকটা শুকনো জ্বালুন বান্ডিল করে বেঁধে উঠতে পারে মাত্র। এর বেশি কিছু আর হয়ে ওঠে না। 

অজপা শোনে, তারপর হেসে বলে, আজ সকাল-সকাল কী হয়েছে বলতো? মান্ধাতার গল্প সব করছ বসে বসে? 

গৌতম বলে, আরে না না, এই একটার টানে আর-একটা মনে পড়ে যাচ্ছে। 

তা, বুড়ির কুমড়োফুলের গল্পটা কেন মনে পড়ল? সেটাই তো বললে না।

গৌতম তার মোবাইলটা ধরে, ফটাফট একটা লিংক ওপেন করে বলে, এই দেখো, বলছে, বইপড়া নিয়ে মানুষের কোনও আগ্রহ নেই। বইপাড়া নিয়েও তাই নিরুত্তাপ। 

অজপা ভুরু কুঁচকে বলে, এ তো ক-দিন আগেই কাগজের সম্পাদকীয়তে লিখেছে। আজ দেখছ! তা এখানে প্রশ্নটা কী? আনন্দ তেলতুম্বের গ্রেপ্তারির মতো কেন এটা নিয়েও বড়ো করে হইচই হচ্ছে না? 

হচ্ছে না, তা তো সত্যি। তোমার কি মনে হয় না, এই না-হওয়ার পিছনে, এই কথা না-বলার পিছনে, বই না-পড়ার একটা ভূমিকা থেকে যাচ্ছে? 

অজপা একটু বিরক্ত হয়; বলে, তুমি বড্ড সুতোয় সুতো জড়াচ্ছ। আসল কথাটা বলবে? 

গৌতম বলে, আসলে কী জানো, এরকম কোনও পূর্বাভাস হয় না, যা বলে দিতে পারে, মানুষ কবে কেন বই পড়বে, আর কবে থেকে পড়বে না!

ঝড়টা যে মারাত্মক আকার নেবে, তা আর-কিছুতে না বোঝা যাক, মিডিয়ার তৎপরতায় বোঝা যাচ্ছে; বিশেষত সঞ্চালকদের স্বরক্ষেপে। গৌতম ভাবে, এই স্বরক্ষেপ কী এক আশ্চর্য বিষয়; একই বাক্য শুধু এই কেরামতিতেই কেমন আলাদা মাত্রা বহন করে। একে কী বলা যায়! মিথিক্যাল রিমাইন্ডার! তা যদি ঠিক না-ও হয়, গৌতম নিশ্চিত, বাণীর ভিতর একরকমের স্পর্শ সঞ্চার করে দিতে পারে, এই স্বরক্ষেপ।

যেমন এই আগামী ঝড়ের পূর্বাভাস বা সাবধান-বাণী শুনতে টের পাচ্ছিল, এক পূর্ববর্তী ঝড়কে সে স্পর্শ করতে পারছে। সেদিনের বাতাসের শীতলতা টের পাচ্ছে। দুপুরের পর থেকে ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাস্তাকে টের পাচ্ছে। ঘরে ফিরতে চাওয়া ব্যস্তসমস্ত মানুষের চোখেমুখে লেগে থাকা উদ্বেগকে টের পাচ্ছে। সেবারও ব্যাপক ঝড়-জল হয়েছিল। সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল।

গৌতমদের একটা বহু পুরোনো নিমগাছ ভেঙে গিয়েছিল; লাল গুঁড়ি; সেই সমেত ভেঙে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল গাছটা। তবে পাকা কাঠ বলে গাছের পড়ে যাওয়াটা যেন তেমন করে গায়ে লাগছিল না কারও; তা ছাড়া বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়নি, সেটা ছিল বেশি স্বস্তির। ফলে আলোচনার ‘প্রায়োরিটি’ ঘুরে গিয়েছিল সেদিকেই। 

গৌতম কেবল জানত, এর মধ্যে দুটো ঘটনা নিঃশব্দে ঘটে যাচ্ছে। এই গাছটা নাকি তার ঠাকুরদাদা লাগিয়েছিল। উত্তরপুরুষের জন্য রেখে যাওয়া উপহার। ঠাকুরদাদাকে গৌতম দেখেনি; ছবি দেখেছে। এই গাছটাই তার কাছে ছিল ঠাকুরদাদার প্রতিনিধি। গাছটাকে ভেঙে পড়তে দেখে তার মনে হয়েছিল, যেন একটা আস্ত উপহার হারিয়ে গেল; দুটো পৃথিবীর অলক্ষ্য যোগাযোগ ছিঁড়ে গেল। অথচ তা নিয়ে তেমন ভেঙে-পড়ার কোনও চিহ্ন কোথাও নেই। যেন এসব যোগাযোগের তেমন মূল্য নেই, যা নিয়ে আলোচনা চলে। অথচ গাছের বদলে, এটাই সোনার আঙটি হলে, এবং, তা হারালে, পরিবেশ যে এরকমটা হত না, গৌতম নিশ্চিত।

আর-একটা গোপন ব্যাপার আছে। সম্ভবত, গৌতম ছাড়া আর দুজনই পৃথিবীতে জানত, যে, এই গাছটার একেবারে গোড়ার দিকে খুদে খুদে করে বাকলের উপর লেখা ছিল, এম যোগচিহ্ন পি। চট করে যাতে কারও চোখে না পড়ে, সেই কারণেই শিকড়ের কাছে লেখা। লিখেছিল প্রকাশদা। পাশের পাড়ায় থাকত সে। ঘুরতে ঘুরতে বিকেলে এদিকে আসত, ওই নিমগাছটার পাশেই একটুক্ষণ দাঁড়াত; ঠিক গৌতমদের দুটো বাড়ি পরে মনামীদিদের বাড়ির ছাদের দিকে তাকাবে বলে। মনামীদি বিকেলে চুল বেঁধে ছাদে এসে দাঁড়াত। 

মনামীদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ওর নামখানা সেই সময়ের নিরিখে যেমন স্মার্ট ছিল, তেমন ডাকসাইটে সুন্দরী ছিল, বাবার পয়সাও ছিল। বিয়েটাও হল জাঁকজমক করে। মনামীদি চলে গেল প্রথমে কলকাতা, তারপর বিদেশ। গ্রামের সেইসব দিনকালে মনামীদির বিয়ে এবং বিদেশযাত্রা বেশ বড়ো রকমের অভিনব ঘটনা ছিল। প্রকাশদা একটা মাস্টারির চাকরি নিয়ে আরও অজ কোনো একটা গ্রামে চলে গিয়েছিল। মনে হয়, দুজনেই একটা বৃত্তের পরিধির দিকে চলে যেতে চেয়েছিল। তাতে তাদের দূরত্ব অনেকটা বেড়েছিল। গৌতম ভাবে, তারা বোধহয় চেয়েছিল, পরিধি ধরে চলতে-চলতে কখনও তাদের আবার দেখা হয়ে যাবে। নিমগাছে ওই নাম-লেখা বিন্দুটি যেন তাদের কেন্দ্র। গাছ পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটাও গেল। তাহলে কি আর পরিধি থাকবে? আর কি ওদের দেখা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকল, নাকি দূরত্ব শুধু দূরত্বই হয়ে রয়ে গেল? অনতিক্রম্য। 

সেই গাছ পড়ার দিনে এসব ভাবাটা ‘প্রায়োরিটি’ ছিল না; সেদিন অজপা থাকলে, নিশ্চিত আজকের মতোই বিরক্ত হত। তবু গাছ তো পড়বেই। ঝড়ের কথা যা বলা হচ্ছে, তা হলে, কলকাতা শহরে পুরনো গাছের ছায়া হয়তো কেবল ধারণা হয়েই থেকে যাবে। 

কথাটা মনে হতেই গৌতমের একটা উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেল। অমর মিত্রের লেখা। সেখানে একজন কারখানার শ্রমিক, নিমফুলের গন্ধ পেত। যদিও গাছটা আর ছিল না। এককালে ছিল, তার কারখানার ভিতরেই। সে-কারখানার গেটেও তালা ঝুলেছে। গাছখানাকেও কেটে ফেলা হয়েছিল। তবু এক রাতে, ওই শ্রমিক তার বউকে জানিয়েছিল, সে পাচ্ছে নিমফুলের গন্ধ। আর কী আশ্চর্য, বউটিও পেয়েছিল সেই গন্ধ। যদিও বাস্তবিকই গাছটা ছিল না। ঝড়টার শেষে, এই মস্ত শহরটায় সমস্ত পুরোনো গাছের মেলে দেওয়া ছায়ার মায়াও হয়তো ওই নিমফুলের গন্ধের মতো হয়ে যাবে। 

কত-কত বিপর্যয় যে অপেক্ষা করছে! এর মধ্যে কোনটা ‘প্রায়োরিটি’ কে জানে! ভাবতে-ভাবতেই দেখে, ফোনটা বাজছে। পরমেশ কলিং…

( আগামী সংখ্যায় সমাপ্য )

শেয়ার করুন

Similar Posts

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *