দৌড় – রমা সাহা
দিন দু’য়েকও হয়নি, সারাটা দিন না খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছিল সুরাব। আজও বোধহয় তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। দিনমজুর রহিমুদ্দি আর আমিনার একমাত্র ছেলেটা পাড়ার স্কুলেরই ক্লাস ফাইভের ছাত্র। নুন আনতে ফ্যান ফুরোয় যে ঘরে, দৌড় সেখানে বিলাসিতা। তবুও দারিদ্রের বিরুদ্ধে সুরাব ছুটে যায় সবুজ ট্র্যাক ধরে। ফুটো টিন আর দর্মার ঘরের একপাশ জুড়ে ছেলেটা যেন ট্রফি আর মেডেলের চাষ করেছে ।
অভাব আর দক্ষতা যে একে অপরের সতীন, সেটা আমিনা জানে বিলক্ষণ। তাই স্কুল কামাই করে ট্রফি জিতে বাড়ি ফিরতেই সুরাব পুরস্কার হিসেবে পায় মায়ের প্রহার আর দিন তিনেকের অনাহার । আজও একটা প্রতিযোগিতা জিতে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা হয়ে গেছে। তবে মা আর মারেনি আজ। রহিমুদ্দি বিছানায় পড়ে প্রবল জ্বর নিয়ে, আমিনা গেছে তাই পাশের পাড়ায় ডাক্তার ডাকতে।
অবশেষে মুকুল ডাক্তার এলেন বটে, কিন্তু ওষুধ কেনার টাকা তখনও অমিল । মুশকিল কালে আসান হল সুরাবের ট্রফিগুলো। নিজের সমস্ত প্রাপ্তিকে ভাঙাচোরায় বেচে সে এনে দিল বাবার ওষুধ। পরদিন সকালে আবারও ছুটে গেল রেসের মাঠে।
রহিমুদ্দি এখন কিছুটা সুস্থ। ছুটতে শুরু করল সুরাব। কিন্তু অনাহারক্লিষ্ট শরীরটা আজ আর সায় দিল না। দৌড় তবুও থামায়নি সে। চিতার গনগনে আগুন পেরিয়ে ও ছুটে চলেছে আল্লাহ্-র পিস, হেভেনের দিকে।