বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ১৪) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

বর্ষশেষের কলকাতা : কলকাতার ক্রিকেট (পর্ব ১৪) – সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

শেয়ার করুন

পর্ব ১৪

১৯৪৪-৪৫ মরশুম আরও সমস্যা নিয়ে শুরু হল। বাংলায় তখন দুর্ভিক্ষ চলছে চরম আকারে। এদিকে পুরোদস্তুর যুদ্ধের আবহাওয়া, জার্মানি হারছে, চীনে কুয়মিংটাং ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে লড়াই তখন চরমে।

৯ ডিসেম্বর বাংলা রঞ্জি খেলতে নামে যুক্ত প্রদেশের বিরুদ্ধে। তখন রেগি সিম্পসন সিন্ধ আর ডেনিস কম্পটন হোলকারের হয়ে রঞ্জি খেলছেন। কারণ ওঁরা যুদ্ধের কাজে ভারতে এসেছিলেন। জো হার্ডস্টাফ ও এসেছিলেন। বাংলা দলে ওঁকে ডাকা হলেও খেলেননি।
বাদল দত্ত (৫৮) ও প্রবীর সেন (৬৩)-এর ওপর ভর করে বাংলা ২৪৮ তোলে। এস এন গান্ধি ৯৭ রানে ৫ উইকেট ও এ মজীদ ২৫ রানে ৪ উইকেট নেন। জবাবে যুক্তপ্রদেশ পুঁটু চৌধুরী (৩/৪০)-র বোলিংয়ের সামনে ১৭৬-এ শেষ। বাংলা ১৫৭ করে দ্বিতীয় ইনিংসে। গান্ধি আবার ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন। কিন্তু পুঁটু আবার মারাত্মক বোলিং করলে (৫/৪৯) যুক্তপ্রদেশ ১৫৪ রানে অল আউট হয়ে হেরে যায়। ইডেনে সেবার একটাই রঞ্জি ম্যাচ হয়েছিল।

যুদ্ধের তহবিল জোগাড় করতে ইডেনে এরপর ১৬ ডিসেম্বর একটা প্রথম শ্রেণির খেলা হয়। তাতে বেঙ্গল গভর্নর (১৪৩ ও ৩১৫) হেরে যায় সার্ভিসেস (৪৭১)-এর বিরুদ্ধে। সার্ভিসেস দলের ক্রানন প্রথম ইনিংসে ৫২ রানে ৭ উইকেট ও জাজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০ রানে ৪ উইকেট নেন। সার্ভিসেসের হার্ডস্টাফ ১৫৩, কম্পটন ১০৯, রেগি সিম্পসন ৬৮ করেন। গভর্নর দলের নির্মল চ্যাটার্জী দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৫ করেন ও পুঁটু চৌধুরী ১০৪ রানে ৫ উইকেট নেন।

৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৪ দেড় দিনের ম্যাচে (শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর) বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ে (১২৬) হেরে যায় স্পোর্টিং ইউনিয়নের দ্বিতীয় দল (১৪৪)-এর বিরুদ্ধে। স্পোর্টিং-এর এন মিত্র ৫৩ রানে ৫ উইকেট ও এ দাশগুপ্ত ২৯ রানে ৫ উইকেট পান। রেলের এন সেনগুপ্ত ৭৪ রানে ৭ উইকেট নেন।

৩১ ডিসেম্বর ক্যাবলস (১৪৭) হেরে যায় এরিয়ানস্ (২০২/৬)-এর কাছে। ক্যাবলসের লংফিল্ড ৪০ করেন। এস বসু ১৭ রানে ৪টি ও এ দত্ত ৩২ রানে ৪ উইকেট পান এরিয়ানস্-এর হয়ে। এরিয়ানস্-এর জি ভট্টাচার্য্য ৪৪ করেন।

ওইদিন টাউন (২৬৪/৫) হারায় পোর্ট কমিশনারকে (১৫৫)। টাউন-এর এস ভট্টাচার্য ১৬৮ করেন। পোর্ট-এর জে হল অপরাজিত ৫৫ করেন ও আর ঘোষ ৮৮ রানে ৮ উইকেট নেন।

ওইদিন অন্য ম্যাচে মোহনবাগান (২২০) ও ভবানীপুর (৮৪/৫) ম্যাচ ড্র হয়। মোহনবাগানের এ হাজরা ৫৭ করেন। পি দে ২৯ রানে ৩ উইকেট পান।

এদিকে ইস্টবেঙ্গল (১৮২) হারিয়ে দেয় বেঙ্গল ক্রিকেট ক্লাব (৬৭)-কে। ইস্টবেঙ্গলের জে দাশগুপ্ত ৬৩ ও এস মিত্র ৪৮ করেন। এস দাস বেঙ্গল ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ৭০ রানে ৭ উইকেট নেন। ইস্টবেঙ্গলের ওয়াই সি পাল ২৫ রানে ৫ উইকেট ও জে পাল ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন।

এদিকে পয়লা জানুয়ারি থেকে মোহনবাগান মাঠে (আজকের ইডেনের ঠিক উলটো দিকে খোলা মাঠ) জে এন বসু দ্বাদশ ও সি এস নাইডু দ্বাদশ ম্যাচ হয় জমাটি।
সিংহলের দুই তারকা কিংবদন্তী ক্রিকেটার জয়বিক্রমে (১২৩) ও সদাশিবম (৮০) দারুণ ব্যাট করেন। অমরেন্দ্রনাথ সেন করেন ৫৪। সি এস নাইডু ১৩৫ রানে ৮ উইকেট নিলেও জে এন বসুর দল তোলে ৪৩৭। জবাবে নাইডুর দল সারভাতের ৯৮ ও ভায়ার ৮৪ রানের ওপর ভর করে ৩২১ তোলে। শুঁটে ১৩২ রানে, সেন ৪৪ রানে ও জয়বিক্রমে ৩৩ রানে ৩ উইকেট পান। এরপর নাইডু (৭/৫৯) ও সারভাতে (৪/৫৯) বিধ্বংসী বোলিং করলে জে এন বসুর দল ১৬৮ রানে অল আউট হয়ে যায়। ২৮৫ করলে জিতবে এই অবস্থায় বেধড়ক পিটিয়ে রান তুলে আরও ব্যাটিং করে নাইডুর দল তোলে ৫ উইকেটে ৫২৫। মুস্তাক ১০৯, সারভাতে ১৩৩ ও বাউসাহেব ১৮৬ করেন।
১ জানুয়ারি, ১৯৪৫। ক্রিকেট ক্লাব অফ বেঙ্গল (১৮৯) বনাম সার্ভিসেস-এর ম্যাচ ড্র হল। বারো জনের দলের এই খেলায় সার্ভিসেস-এর বারবার ৩৬ রানে ৫ উইকেট পায়। সিসিবি-এর এস বসু ৪৮ রানে ৫ উইকেট পান। পি চ্যাটার্জীও ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন।

ওইদিন অপর খেলায় ইস্টবেঙ্গল (১৮৮/৯) হারায় ক্যাবলস (৯০)-কে। ইস্টবেঙ্গলের এস বসু ৬৯, ক্যাবলসের কেন্ড্রু ৫৯ রানে ৪ উইকেট নেন। লংফিল্ড (২৫) আর জে গল (৪৬) ছাড়া ক্যাবলসের কেউ দাঁড়াতে পারেনি।

অন্য খেলায় সেদিন ভবানীপুর (২০০/৮) বিশাল রান তুললেও ম্যাডানের ১০৭ পার্সি (২১৬/৪) কে অতি সহজেই জিতিয়ে দেয়। ভবানীপুরের ডি চ্যাটার্জী (৭০) দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন। ভবানীপুরের দ্বিতীয় দল (১০৪/৭) ওইদিন অরোরা (১৭২/৯)-র বিরুদ্ধে ড্র করে। ভবানীপুরের ডি সেন ৫৭ রানে ৫ উইকেট পান।

বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলকে (১১৮) অতি সহজেই সেই দিন মহামেডান (১৩৫/৫) হারিয়ে দেয়। মহামেডানের এস মামুদ (৪/৪৩) আর এ হামিদ খান (৫/৩০) দারুণ বল করেন।

শিবপুর (১৬৯) তালতলার (২২৩/৯) কাছে হেরে গেল মূলত এস দত্তের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য (৯৩ ও ৬/৪৬)। শিবপুরের এ দাশগুপ্তও (৬৭ ও ৫/৬৩) দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যানস করেন।

ওইসময় বেঙ্গল জিমখানা লীগ চলছিল। বাণী নিকেতন (৬৬) মারওয়ারি (৭১/৩)-র কাছে হেরে গেল। এস পাল ১৯ রানে ৪ উইকেট নেন।

সেই সময় যুদ্ধের কারণে অন্তত দুটো ঘটনা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক, খবরের কাগজে বেশি খেলার স্কোর পাওয়া যেত না। দুই, একই কারণে মাঠে পিচ দুর্বল হয়ে গিয়ে বোলারদের সুবিধা বেশি হয়ে যায়।

৪ জানুয়ারি সিটি কলেজ আর আশুতোষ কলেজের মধ্যে একটি ম্যাচের স্কোরে দেখা যাচ্ছে সিটি মাত্র ৯৯ করেছিল। আশুতোষ কলেজের হয়ে প্রবীর সেন (উইকেট কিপার, মাঝে মাঝে বল করতেন) ২৬ রানে পাঁচ উইকেট পান। পুণ্যব্রত দত্ত ২৬ রানে ৩ উইকেট পান। কিন্তু জে ব্যানার্জী (৬/২৯) ও এইচ মিত্র (২/৪) দারুণ বল করায় আশুতোষ ৯২ রানে অল আউট হয়ে যায়।

ওইদিন অপর ম্যাচে ইয়ং এসি (১২৫) হেরে যায় তালতলার কাছে (১৩১/৯)। ইয়ং এসির এ রায় ৫৪ করেন। তালতলার ডি ঘোষ ১৩ রানে ৪ উইকেট পান, ডি চ্যাটার্জী ২৫ রানে ৩ উইকেট পান। তালতলার বি ঘোষ ৮৭ করেন। ইয়ং এসির সি রায় প্রচুর লড়েও (৪/৪২) দলকে জেতাতে পারেননি।

৫ জানুয়ারি এক অভিনব ম্যাচ খেলা হয়। বিদ্যাসাগর তৎকালীন ক্রিকেটার বনাম বিদ্যাসাগর প্রাক্তনী। সারদারঞ্জন রায়ের অসাধারণ চেষ্টায় বিদ্যাসাগর কলেজ অসাধারণ ক্রিকেটারদের তৈরি করেছিল। ফলে প্রাক্তনীদের হয়ে হেমাঙ্গ বসু, ক্যাবলা দত্ত, বেচু দত্তরায়, প্রফেসর শৈলজা রায়, প্রভৃতি বড়ো বড়ো খেলোয়াড়রা খেলতে নামলে প্রাক্তনীরা ২১২ তোলে। জবাবে তৎকালীন ছাত্ররা ৮ উইকেটে ১৭০ রানের পর খেলা শেষ হয়ে যায়। শিশির মুস্তাফি ৪৫ ও এস ভট্টাচার্য্য অপরাজিত ৫৯ করেন।

৭-৯ জানুয়ারি মরশুমের শেষ বড়ো ম্যাচ হয় ইডেনে। মেজর জেনারেল স্টুয়ার্ট ইলেভেন (১৩৬ ও ৩১৫)-কে সহজেই হারায় বেঙ্গল গভর্নর (২২৮ ও ২২৬/৪)। প্রথম ইনিংসে গভর্নর দলের সি এস নাইডু (৬/৭৭) ও লালা অমরনাথ (৪/৩০) দাঁড়াতেই দেয়নি বিপক্ষকে। এরপর বাউসাহেব ৯২ ও সদাশিবম ৫৬ করেন। গিরিধারী স্টুয়ার্টের দলের হয়ে ৬০ রানে ৮ উইকেট নেন। স্টুয়ার্টের দলের হয়ে কম্পটন ১২৩ ও হার্ডস্টাফ ৭৩ করেন। মানকড় ৮৮ রানে ৫ উইকেট পান। এরপর মুস্তাক আলী অপরাজিত ৮৬ করে গভর্নর দলকে জিতিয়ে দেন।

১৯৪৫-৪৬ সালের মরশুম মারাত্মক সমস্যার মধ্য দিয়ে শুরু হল। বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষ পর্বে। ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল হিটলার আত্মহত্যা করলেন, আর ১৯ মে শুরু হয়ে গেল ভিকট্রি টেস্ট সিরিজ। রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্স আর অস্ট্রেলিয়ান ইম্পিরিয়াল ফোর্স মিলে তৈরি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস। একটি মিলিটারি ইউনিট হিসেবে স্ট্যান সিসমের নেতৃত্বে ও ক্রিকেট দল হিসেবে লিন্ডসে হ্যাসেটের নেতৃত্বে দলটি ইংল্যান্ডে ৫টি বেসরকারি (যার তিনটি লর্ডসে) টেস্ট খেলে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড একপ্রকার ভয়ে এগুলিকে টেস্ট স্বীকৃতি দেয়নি। তাঁদের ধারণা ছিল দলটি দুর্বল। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রায় সম্পূর্ণ টেস্ট দলের বিরুদ্ধে (ওয়ালী হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন) ২-২ ম্যাচে সিরিজ ড্র করে এরা। কেবল হ্যাসেট টেস্ট খেলোয়াড় ছিলেন। এই দলের কিথ মিলার পরে টেস্ট খেলেন। এমনকি গ্রাহাম উইলিয়ামের মতো খেলোয়াড়ও ছিলেন দলে যিনি জার্মানদের যুদ্ধবন্দি ছিলেন ও মাত্র একসপ্তাহ আগে মুক্তি পেয়েছিলেন, যুদ্ধের পূর্বের ওজন থেকে ৩১ কে জি কম নিয়ে।

কিন্তু খেলার মাঠে এহেন সাফল্য অর্জন করার পর বোর্ডের নির্দেশে অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস দল এল ভারত ও সিংহল সফরে। এখান থেকে দেশে ফিরে আরও কিছু ম্যাচ খেলে তবে ছুটি। পরে এদের কিছু খেলোয়াড় এমনও বলেছিলেন ক্রিকেট খেলার নাম শুনলে এঁদের মাথায় খুন চেপে যেত।

যাই হোক, সে অন্য গল্প। আমরা একটু অন্য জিনিস দেখি। জাপানের আত্মসমর্পনের পরেই নেতাজীর অন্তর্ধান এবং তাকে নিয়ে অজস্র জটিলতা যখন সৃষ্টি হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস দল ভারতে এল তখনই। তখন আজাদ হিন্দ ফৌজের সামরিক নেতাদের শাস্তি নিয়ে লাল কেল্লায় বিচার চলছে। তাই নিয়ে সারা ভারত উত্তাল। ভারতে এসে কয়েকটা ম্যাচ সার্ভিসেস দল খেলল। আব্দুল হাফিজ (পরে ভারতের হয়ে টেস্ট খেলেন ও পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন হন), রুসি মোদীরা রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছিলেন, উলটো দিকে হ্যাসেট ও।

অতঃপর দলটির আগমন ঘটল কলকাতায়। প্লেনে আসার সময় রীতিমতো বজ্রপাত এড়িয়ে আসতে হল। এটাই কি শহরের ভবিষ্যতের আগাম বার্তা ছিল?

২১ নভেম্বর থেকে ইডেনে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ম্যাচ। সি কে নাইডু ক্যাপ্টেন, দলে আছেন মুস্তাক আলী, সি এস নাইডু, ডেনিস কম্পটন, শুঁটে ব্যানার্জী, পুঁটু চৌধুরী, নির্মল চ্যাটার্জী, বাবাসাহেব নিম্বলকার এর মতো খেলোয়াড়রা।
এদিকে কলকাতা শহরে বাম ছাত্রনেতারা সেদিন ‘আজাদ হিন্দ দিবস’-এর ডাক দিল। ঠিক হল ওয়েলিংটন স্কোয়ারে (সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার)-জমায়েত হবে। সময় বিকেল তিনটে।

অক্টোবর মাসের শেষে কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠ ছিল নরম। বাবুঘাটের হাওয়া আর নভেম্বর মাসের শিশিরে ভেজা পিচে সকাল ১১ টা বেজে ১৮ মিনিটের মাথায় অস্ট্রেলিয়া দল ব্যাট করতে নামল। হাইকোর্ট প্রান্ত থেকে শুঁটে ব্যানার্জী আর ময়দান প্রান্ত থেকে নিম্বলকার বল শুরু করলেন। তখন BPSF নেতারা সর্বত্র প্রস্তুতি নিচ্ছেন জমায়েত করার।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই হোয়াইটিংটন শুঁটের বলে কট & বোল্ড (০)। দল ০ রানে ১ উইকেট। নামলেন পেটিফোর্ড। নেমেই লেগ গ্ল্যান্স করে চার। নিম্বলকার এর তিন নম্বর ওভারে ওয়ার্কসন ড্রাইভ ও স্কোয়ার কাট করে দুটো চার মারতেই সি কে আনলেন পুঁটুকে। ওভারের তিন নম্বর বলে পেটিফোর্ড বোল্ড (৯)। বলটি ছিল প্রায় অফ ব্রেক। অস্ট্রেলিয়া সার্ভিসেস ২৭ রানে ২ উইকেট। নামলেন লিন্ডসে হ্যাসেট। প্রথম বলে ২। পুঁটুর বোলিং তখন ১-০-২-১।

প্রথম ৩৫ মিনিটে ৩৫ হল। হ্যাসেট তখন লেগে হুক করে চার। তারপর একই ওভারে স্টেপ আউট করে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে চার, হুক করে চার। দল ৪৯/২। শুঁটের জায়গায় এলেন সি এস নাইডু। তখন শুঁটের বোলিং গড় ৭-১-১৭-১। সি এস এর প্রথম ওভার মেডেন। পুঁটুর বলে হ্যাসেট একটা দুই নিতে দলের রান দাঁড়াল ৫১। ঘড়িতে তখন ১টা ১২। কলকাতা পুলিশ তখন ভিড় কত হতে পারে সে সব নিয়ে ভাবছে।

কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পরপর তিনটি উইকেট গেল। প্রথমে হ্যাসেট হুক করতে গিয়ে মুশতাকের হাতে ক্যাচ দিলেন (২৫,৩×৪,৩৭ মিনিট)। বোলার পুঁটু। দল ৫৭/৩। এরপর গেলেন ওয়ার্কসন (২৫) কট & বোল্ড। দল ৬০/৪। পেপার এসেই আউট সি এস এর বলে। ৬০/৫।
নামলেন ক্রিস্টোফানী। তখন মুস্তাক একটু বিশ্রাম নিতে বাইরে গেলেন; ফিল্ডিং করতে নামলেন জে এন ভায়া। ক্রিস্টোফানী এসে পুঁটুর বল লেগে হুক করে চার মারলেন। পরের ওভারে সি এস এর বলে চার মারলেন। পরের বলেই বোল্ড (১০)। অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস ৭২ রানে ৬ উইকেট।

সি এস নাইডু তখন বিপদজনক হয়ে উঠেছেন। ৪-১-৮-৩। এইসময় দুটো এক্সট্রা রান হল, মিলার সি এস এর বলে চার মারেন। দল ৭৯। পরের বলে এল বি ডব্লু-এর আবেদন। আম্পায়ার নাকচ করলেন। ৮৫ মিনিটে ৮২ রান হল। পুঁটুর নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ডিপ কভারে নিম্বলকার এর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন উইলিয়াম (৩)। দলের রান তখন ৮৫/৭। প্রাইস ব্যাট করতে এলেন। পুঁটু ও নীরোদ চৌধুরীর বোলিং গড় তখন ৯-১-৩১-৩।

পরের ওভারে সি এসের বলে বোল্ড হতে হতে বেঁচে গেলেন মিলার। ৯৫ রানের মাথায় সি কে আনলেন সারভাতে কে (পুঁটুর বদলে)। দুপুর একটা বেজে চার মিনিটের মাথায় সারভাতের বলে প্রাইস চার মেরে দলকে নিয়ে গেল ১০২/৭ এ।

সারভাতের পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে মিলার এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে বোল্ড হল (১৭)। অস্ট্রেলিয়া সার্ভিসেস ১০৭/৮।

রোপার্স এসেই এল বি ডব্লু হল (০)। দল ১০৭/৯। ৫ম বলে ব্রেমার বোল্ড। ১টা ১০ এ ইনিংস শেষ। প্রাইস ১৫ রান করে। সি এস, পুঁটু ও সারভাতে ৩ টে করে উইকেট পান। সারভাতে এদের মধ্যে ৮ রানে ৩ উইকেট পান। সেই সময় লাঞ্চ হল।

শুঁটে ও সারভাতে ওপেন করলেন (কয়েক মাস বাদে এরাই লাস্ট উইকেটে ২৪৯ করবে ভারতের হয়ে)। ইনিংসের দ্বিতীয় ও রোপারের প্রথম ওভারে একটা বাই চার হল। আর ৫ম বলে কাট করতে গিয়ে আউট হলেন সারভাতে (২)। দল ১ উইকেটে ৮।

কিন্তু এরপর নামলেন মুস্তাক। নেমে শুঁটেকে নিয়ে দ্রুত রান তুলতে লাগলেন। দুটো নো বল করে ফেলেছিলেন পেপার। হোয়াইটিংটনকে গ্ল্যান্স করে শুঁটে একটা চার মারলেন। ৪০ মিনিটের মাথায় পূর্বাঞ্চল ৫০-এ পৌঁছল। তখন ২টো ১০ মিনিট। ওয়েলিংটন স্কোয়ার এ ৫০০০ ছাত্র জমায়েত হয়েছে। ব্যাপক ব্রিটিশবিরোধী স্লোগান চলছে। পুলিশ এসে গেছে। BPSF এর পাবনা সম্মেলনের জন্য লেখা গান ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা’ গেয়ে চলেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। যাঁদের মধ্যে এই গানের সুরকার ও গীতিকার তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সলিল চৌধুরীও আছেন।

এইসময় শুঁটে ক্রিস্টোফানীর বলে স্টাম্প আউট হলেন ব্রেমারের হাতে (১১)। দল ৫০/২। মুস্তাক তখনও পিটিয়ে যাচ্ছে। ৫৫ মিনিটে ২ উইকেটে ৬৬। নেমেছিলেন কম্পটন। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির ফলে রান আউট হলেন (০)। ৬৬/৩। নামলেন সি কে। নেমেই দু’রান। এরপরেই ক্রিস্টোফানীর বল তুলে মারতে গিয়ে আউট হলেন মুস্তাক। থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে আউট। দল ৭০/৫। মুস্তাক ৪৬।

নামলেন সি এস। দুইভাই মিলে রান তুলতে লাগলেন। পেপারের বলে বড়ো নাইডু স্কোয়ার কাট করে চার। ৬৫ মিনিটে ৭৪/৫। সি এস মিড অফে বাউন্ডারি ক্রিস্টোফানীর বলে। সি এস ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেন হ্যাসেটের হাতে। পেপারের বলে সি কে চার মারলেন। লেট কাট এবার। ইডেনে ১০,০০০ এর বেশি দর্শক উল্লসিত। সি এসের একটা ড্রাইভ (ক্রিস্টোফানীর বলে) কোনোরকমে বাঁচালেন বাউন্ডারি থেকে উইলিয়ামস। ৯৫ রানের মাথায় প্রাইস বল করতে এল। ক্রিস্টোফানীর বলে পরপর দুটো চার মারলেন সবেসম। দল ৮২ মিনিটে ১০৬/৫। তখন তিনটে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ শুরু করল ওয়েলিংটনে।

৮৫ মিনিটেই বিপক্ষের রান টপকে গেল পূর্বাঞ্চল। এরপরেই সি এস এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেন (১০৭/৬)। প্রাইসের বলে তিনি আউট হন ২৪ করে(৪×৪)। নামলেন নির্মল চ্যাটার্জী।

১১৭ রানের মাথায় ক্রিস্টোফানীর বল তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের ধারে রোপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন সি কে । তিনিও ক্রিস্টোফানীর বলে আউট হলেন ২৫ রান করে।

প্রাইসের বলে হুক করে চার মারলেন নির্মল চ্যাটার্জী। ফালসরকার এরপরেই ক্রিস্টোফানীর বলে হুক করতে গিয়ে হিট উইকেট (০)। ১১৮/৮।

পার্থসারথী নেমে ৩ রান করলেন। টি-এর সময় পূর্বাঞ্চল ১২১/৮।

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২