আশ্রয় – শাশ্বত নিপ্পন

শেয়ার করুন


এমন শুনশান নিস্তব্ধতা লক্ষ্মী মাস্টার জীবনে কোনোদিন দেখেনি। গোরস্থানে অথবা শ্মশানেও একধরনের শব্দ থাকে; যা থাকে অশ্রুত। কিন্তু দুপুর গড়ানোর আগেই মেহেরপুর জনমানবশূন্য, খাঁ খাঁ করছে চারধার। শুধু মাঝে-মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসছে দু-একটা গুলির শব্দ আর শকুনের উল্লাসধ্বনি। আর এ সবকিছুর মধ্যেই ওরা আসছে। ওদের মাথায় জলপাই রঙের হেলমেট, পায়ে বুট, হাতে অস্ত্র, চকচকে। মাথার ওপর মে মাসের গনগনে সূর্য। সূর্যের ঝাঁঝালো রোদে ওদের খাকি পোশাক ভিজে উঠেছে অনেক আগেই। ওদের ফর্সা আপেলের মতো মুখমন্ডল রক্তজবার মতো লাল হয়ে উঠেছে। ওদের পা উঠছে-নামছে একসঙ্গে। একচুলও এদিক-ওদিক হচ্ছে না। শব্দও উঠছে একটা। মেহেরপুরের সুড়কি বিছানো রাস্তায় ওদের বুটজুতোর ঘর্ষণে লালচে ধুলোর আস্তরণ উড়ছে ওদের ঘিরে। ওদের দৃষ্টি স্থির। লক্ষ্মী মাস্টার বিস্ময়ভরা চোখে দৃশ্যটি দেখতে থাকে। শৃঙ্খলার মধ্যে একধরনের ভালোলাগা লুকিয়ে থাকে। লক্ষ্মী মাস্টার চিন্তা করেন এই সৈনিকগুলোর কারো বাড়ি লাহোরে, কারো হয়তো বেলুচিস্তানে, কারো হয়তো পেশোয়ারের কোনো নিভৃত পল্লীতে। এরা একে অন্যকে ভালো মতো চেনেও না। কিন্তু কী অদ্ভুত ঐক্য ওদের মধ্যে। সৈনিকদের মার্চ থেকে শব্দ হচ্ছে আর উড়ছে লালচে ধুলো। হঠাৎই লক্ষ্মী মাস্টারের নাকে এসে লাগে মৃত্যুর গন্ধ। পচা মাংসের গন্ধ। তার মনে হল যমদূত স্বয়ং তার দল নিয়ে এগিয়ে আসছে এই আতঙ্কিত জনপদে। মুহূর্তে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় লক্ষ্মী মাস্টারের শিরদাঁড়া বেয়ে। এই গরমকালেও তার গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। বয়সের ভারে ঝুলে যাওয়া চামড়াতেই পদ্মফুলের ডাঁটার মতো গুটিগুটি কাঁটা তৈরি হয়। তার নিঃশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হয়। লক্ষ্মী মাস্টার আলগোছে কলাঝাড়ের আড়াল থেকে সরে যায় বাড়ির মধ্যে, আরও আড়ালে।

লক্ষ্মীপদ হালদার কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা না করেও ‘মাস্টার’ নামেই বেশি পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে সে এই নিরীহ মেহেরপুরে একটা কীর্তনের দল পরিচালনা করে আসছে।এলাকার ছেলে-ছোকড়াদের নিয়ে প্রতি সন্ধ্যায় স্থানীয় নায়েব বাড়ির মন্দিরে বসে যায় লক্ষ্মী মাস্টার। ‘হারমোনিয়াম মাস্টার’ লক্ষ্মীপদ পরম যত্নে ওদের কীর্তন শেখায়। সুরে-তালে ভুল হলে মাঝে-মধ্যে শুধরে দেয়। আর মিটিমিটি হাসে। তার হাসির সঙ্গে জর্দার মাদকলাগা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। কালেভদ্রে বিভিন্ন জায়গায় এই গানের দল নিয়েও যায় সে। নিপাট পরিপাটি চুলের রাগ-ক্ষোভহীন লোকটির বন্ধুর সংখ্যা কম থাকলেও এ তল্লাটে তার কোনো শত্রু নেই, এটা সবাই বিশ্বাস করে। তারপরও লক্ষ্মী মাস্টারের আত্মীয়রা তাকে বারবার বলেছে, ‘জাতি-ধর্মের ওপর ভিত্তি করে যে দেশ, সেখানে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে কি থাকতে পারে?’ স্বভাবসুলভভাবে কথাগুলো লক্ষ্মী মাস্টার শুধুই শুনেছে, তর্ক করেনি কখনোই। দেশত্যাগ করেনি। যদিও স্ত্রী বিয়োগের পর, মায়ের ‘অস্থি’ গঙ্গার জলে ভাসানোর পর মাস্টারের মেয়ে দীপিকা রানী বহরমপুরেই থেকে গেছে তার বড়দির কাছে। পূর্ব পাকিস্তানে আর ফিরে আসেনি। সে কারণে, লক্ষ্মী মাস্টারকেই তার চারদিকে অপার একাকীত্ব নিয়ে এই বাস্তুভিটেটাকে আগলাতে হয়। তাছাড়া এ অঞ্চলের মিঞা সাহেব, আব্দুর সবুর মিঞা দেখা হলেই বলেন, ‘কী, মেয়েরা কি ফিরল?

’‘না।’

‘ফিরবে না আর। এ দেশে হেঁদুরা তো ভালোই আছে। তারপরও ‘হেঁদু’রা ওদেশে খালিপেটে থেকেও আনন্দ পায়, কেন যে পায় কে জানে!’

‘হুঁ।’

‘তোমার তো কোনো অসুবিধা নেই মাস্টার। শুধু একটু বুঝে চলবা, যখন-তখন ওই ঢোল-ডাগর নিয়ে হরিবোল হরিবোল না করলেই হল।’ বলেই দরাজকণ্ঠে আন্তরিকভাবে হেসে ওঠেন সবুর মিঞা। এসবের মধ্যে লক্ষ্মীপদ বুঝেই চলে এসেছে। দেশত্যাগের কথা ভাবেনি কোনোদিন। তাছাড়া সে যাবেই বা কোথায়! এটাই তো তার দেশ। তার বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষের দেশ।সৈন্যদলটি থেমে যায় নায়েব বাড়ির মন্দিরটার পাশে। লক্ষ্মী মাস্টারের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে। মুহূর্তের মধ্যে কোনো এক অদৃশ্য থেকে বেরিয়ে আসে তিন-চারজন বাঙালি যুবক। ওদের হাতেও অস্ত্র, খাকি জামা, ঘাড়ে গুলির বেল্ট আর পরনে বাহারি লুঙ্গি। ছেলেগুলো লক্ষ্মী মাস্টারের মুখচেনা। এই আশপাশেই ওদের বাড়ি, কারো হয়তো বা পাশের গ্রামে। ওদের মধ্যে যে ছেলেটা কসাইয়ের কাজ করে তার সঙ্গে একজন তাগড়া সৈন্য সংক্ষেপে কী যেন বলল, তারপর মন্দিরটা ঘিরে ফেলল। তারপর গুলি। গুলির শব্দে শুনশান এই জনপদে যেন শব্দ ফিরে এল। খানিক দূরের ফুলহীন শিমুলগাছে ঝিমুতে থাকা ভয়ালদর্শন শকুনগুলো হঠাৎ সচেতন হয়ে ওঠে। অজানা আশঙ্কায় একে অন্যকে ঠুকরে দেয়।

ইতোমধ্যে বাঙালি ছেলেগুলো মন্দিরের ভেতরে ঢুকেছে। ভাঙছে রাধা-কৃষ্ণের পাথরের মূর্তি। দানবাক্স, দেবীর গলা থেকে ছিঁড়ে নিচ্ছে সোনার গহনাগুলো, ভাঙছে হারমোনিয়াম, খোল, পঞ্চপ্রদীপ আর বিগ্রহের হাত-পা-মাথা। শক্ত কিছু দিয়ে খোদাই করছে দেবীর পাথরের স্তন পৈশাচিক উল্লাসে। তারপর আগুন। মে মাসের উত্তপ্ত গমের নাড়ার মতো শব্দ করে জ্বলে উঠে সে আগুনের পাশে সমস্বরে যুবকগুলো চিৎকার করে ওঠে।

‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’ ওদের কণ্ঠস্বর বন্দুকের আওয়াজের মতোই কর্কশ শোনায়।মুহূর্তে সৈন্যরা মন্দিরের আশপাশের বাড়ি ঘিরে ফেলল। তারপর বাঙালি যুবকগুলোকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমেই ঢুকল সাধন ঘোষের বাড়ি, তারপর সুবল রায়, যম্ভু রায়, কাশেম আলি আর নিতাইয়ের বাড়ি।এরা প্রায় সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল বর্ডার পার হয়ে ওপারে পালিয়ে যাওয়ার। ইতোমধ্যে পরিবারের সমস্ত মেয়েগুলোকে পার করেছে রাতের আঁধারে। তারপরও সাতপুরুষের ভিটে আগলে পড়ে ছিল কেউ কেউ এখনো, যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল এরা। লক্ষ্মী মাস্টার তার বাড়ির পেছনে নোংরা ফেলার স্থান থেকে কলাঝাড়ের ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে এই নারকীয় তান্ডব। কাশেম আলির পরের বাড়িটা তার। এখন মনে হচ্ছে তার আত্মীয়রা হয়তো মিথ্যা বলেনি। জীবনে কখনো একটা ফড়িং প্রজাপতির পাখা ছেঁড়েনি নিজ হাতে, অথচ এখনো প্রতিদিন তাকেই দেখতে হচ্ছে মৃত্যু-লাশ। বিকৃত লাশ। এই তো গত পরশু সকালে পুজোর ফুল তুলতে গিয়ে লক্ষ্মী মাস্টার দেখল, একটা হোঁৎকা কুকুর আয়েশ করে একটা কচি হাত চিবুুচ্ছে। হাতের আগায় পাঁচটি কচি আঙুল। আর ফুল তোলা হয়নি তার। দৌড়ে বাড়ি ফিরেছে সে। বাড়ি এসেই বমি! লাশ এখন গোটা মেহেরপুর জুড়েই। আতঙ্ক, মৃত্যুর গন্ধ আর গুলির শব্দের মধ্যে কাটছে প্রতিটা মুহূর্ত। মনে হয় কেউ তার হাত-পা বেঁধে ফেলে গেছে নরকে। নরক! চারপাশেই নরক। আর নারকীয় তান্ডব।

সাধন, নিতাই, যম্ভু, কাশেমদের সঙ্গে ধরা পড়েছে কাশেমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। আট মাস চলছে সালেহার। সাত বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথমবারের মতো অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে সে। ওদের এক লাইনে দাঁড় করিয়েছে বাঙালি যুবকগুলো। চকচকে সূর্যের মধ্যে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ওরা। ওদের কারো ঠোঁট কাটা, কারো হাঁটু দিয়ে রক্ত ঝরছে, কারো মুখ কুচকে আছে অসহনীয় যন্ত্রণায়। তবু নড়ছে না ওরা কেউ। শুধু দাঁড়াতে পারছে না সালেহা। বাঁকা হয়ে যাচ্ছে সে। ওর বুকের কাপড় খুলে পড়ছে বারবার, সৈন্যগুলো লোভী নেকড়ের মতো তাকিয়ে থাকে সালেহার সুডৌল বুকের দিকে। সৈন্যদের মধ্যে একজন কর্তা সৈনিক এগিয়ে এসে কাশেম আলিকে উর্দু আর আধো বাংলায় প্রশ্ন করে।

‘তোম মালাউন হো?

’‘না জনাব, আমি একজন মুসলমান। নবী করিম (সা.) আমার নবী;

‘তোম জো বাঙালা হো?’

‘না স্যার আমি ওসব জানি না, আমি রিকশা চালাই।’

সৈনিকটি তার চুলের গোছা ধরতেই বাঙালি যুবকের একজন কাশেমের পেটে রাইফেলের বাঁট দিয়ে সজোরে একটা গুঁতা দিল। কাশেম আলি ‘হুক’ করে শব্দ করে বসতে গিয়েও পারল না। ওর মুখ দিয়ে খানিক লালা গড়িয়ে পড়ল। আর তখনই সালেহা চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠে।

‘ও কৌন হ্যায়?’

‘আ-মা-র বি-বি।’

‘বহুত খুবসুরত বিবি হ্যায় তোমারা!’

‘স্যার আপ হামারা মা-বাপ। আমি হিন্দু নেহি গো স্যার। আমার বউটা অসুস্থ স্যার, ওকে ছেড়ে দাও হুজুর…’

তাগড়া সৈন্যটি ধীরে ধীরে সালেহার দিকে এগিয়ে যায়। সালেহা প্রাণপণে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। লক্ষ্মী মাস্টার বিস্ময়ভরা চোখে লক্ষ করে সালেহা তার ভারী শরীর রক্ষা না করে প্রাণপণে সে তার পরিপুষ্ট কাঁঠালের মতো পেটটাকে রক্ষা করতে চাচ্ছে, ঠিক যেমন চতুর চিলের আক্রমণ থেকে মুরগি তার ছানাগুলোকে আগলে রাখতে চায়। সৈন্যটার শরীর ভিজে উঠেছে এপ্রিল মাসের সূর্যের প্রখরতায়। তার গোঁফ ভিজে উঠেছে, চওড়া জুলফি বেয়ে নামছে ঘাম। সে হেলমেটটা খুলে ফেলে। তারপর হিংস্র পশুর ক্ষীপ্রতায় খামচে ধরে সালেহার বুক। মুহূর্তে সালেহাকে দিগম্বর করে ফেলে সে। মাথার ওপর তখন চৈত্রের আকাশ, জনহীন মেহেরপুরের রাস্তায় একটা শেয়াল উঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় মুহূর্তেই।

নগ্ন পরস্ত্রী কোনোদিন দ্যাখেনি লক্ষ্মী মাস্টার। তার ওপর অন্তঃসত্ত্বা। উলঙ্গ অন্তঃসত্ত্বা নারীর এই কুৎসিত বীভৎস দৃশ্য আর দেখতে পারে না লক্ষ্মী মাস্টার। তার মনে হয়, সন্তানসম্ভবা এক দ্রৌপদীকে ভগবানের তৈরি খোলা আকাশের নিচে একদল দুঃশাসন বিবস্ত্র করছে। লক্ষ্মী মাস্টার চোখ বুজে প্রাণপণে তার আরাধ্য দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ডাকতে থাকে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর লজ্জা নিবারণ করতে এগিয়ে এসেছিলেন।

কতটা সময় লক্ষ্মী মাস্টার কৃষ্ণ নাম করেছেন মনে নেই, কিন্তু তার চৈতন্য ফেরে গগনবিদারী আর্তচিৎকারে। চোখ খুলে লক্ষ্মীপদ হালদার বুঝতে পারল, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অতি সাধারণ এক মুসলমান দ্রৌপদীকে বাঁচাতে আসেননি। বিবস্ত্র সালেহা নিথর পড়ে আছে। তার নিম্নাঙ্গ রক্তে ভেসে যাচ্ছে; সালেহার পেট পূর্বের অবস্থায় নেই। মিশে গেছে পিঠের সঙ্গে। শুধু তার চোখ দু’টো খোলা। সে চোখে কোনো রাগ-ক্ষোভ নেই, আছে শুধু সন্তানকে রক্ষা করতে না পারার যন্ত্রণা। কর্তা সৈন্যটি বিজয়ের তৃপ্তি নিয়ে বলে, ‘শালে গাদ্দার বাঙ্গালি… এসব শালে কো গোলি মার দো…’

মুহূর্তে অন্য সৈনিকদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে সাধন, কাশেমরা সারা দিনের কর্মক্লান্ত ক্ষুধার্ত শিশুর মতো শুয়ে পড়ে এলোমেলোভাবে। শুধু মৃত্যুর পরও কাশেম আলির হাত-পা দু’একবার ঝাঁকি দিয়ে ওঠে এক অজানা ক্ষোভে। ঠিক তক্ষুনি জনমানবহীন মেহেরপুরের ওপর দিয়ে একঝলক গরম বাতাস বয়ে যায়, সেই বাতাসে কোথা থেকে একটা কড়ইফুল উড়ে এসে নগ্ন সালেহার নিশ্চুপ ক্লান্ত মুখটার ওপর পড়ে। হঠাৎই লক্ষ্মী মাস্টারের মনে হয়, এ যেন বাস্তব নয়, স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন। এত নৃশংসতা কি জাগতিক সংসারে সম্ভব! এ নিশ্চয় দুঃস্বপ্ন। ঠিক সেই মুহূর্তেই কে যেন, লক্ষ্মী মাস্টারের কানে কানে বলে ওঠে, ‘লক্ষ্মী, তুই পালা! দৌড় দে, পালা লক্ষ্মী। ওরা রাক্ষস, পালা লক্ষ্মী।’

চাবি দেওয়া পুতুলের মতো উঠে দাঁড়ায় লক্ষ্মী মাস্টার। আর তখনই তার মনে হয়, এতক্ষণ সে মৃত্যুর বৃত্তে লুকিয়ে ছিল। অতি সন্তর্পণে বাড়ির আবর্জনা থেকে উঠে, মেঠো পায়খানার পাশ দিয়ে দৌড় দেয়। লক্ষ্য একটাই, বড় রাস্তায় উঠতে হবে, পালাতে হবে এই নরক ছেড়ে, দূরে! এই পিশাচদের থেকে অনেক অনেক দূরে…

একসময় লক্ষ্মী মাস্টার খুব ভালো দৌড়াতে পারত। সে দৌড়াত তার পাঁচ বছরের বড়দিদি সুধার পেছন পেছন। দু’টো বেণী দু’দিকে ঝুলিয়ে সুধা দৌড়াত হরিণীর মতো। লক্ষ্য থাকত বোস বাড়ির তেঁতুলগাছ, বৈশাখী ঝড়ের শেষে হাঁদুবাবুর আমবাগান, বর্ষার প্রথমে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া পাঠশালার কদমগাছ। আর লক্ষ্য থাকত অগণিত শাপলায় ঢাকা ভৈরব নদ। পেছনে নিরন্তর ছুটত লক্ষ্মী শিশু খরগোশের মতো। কখনোই দিদিকে ছুঁতে পারত না সে। তারপরও ছোটা থামত না তার কিছুতেই। আনন্দে মাতাল হয়ে লক্ষ্মী ছুটত দিদির পেছনে পেছনে। পাঠশালার কদমতলা ঘুরে ভৈরবের তীরঘেঁষে ছুটছে সুধা, আর পেছনে লক্ষ্মী। শিশু খরগোশের মতো। তখন ভৈরবের বুকজুড়ে সাদা মানিক শাপলা ফুটে আছে শুক্লা দ্বাদশীর তারাখচিত আকাশের মতো। সুধা হঠাৎ থামে খেয়ালি হরিণীর মতো, ‘অ্যাই লক্ষ্মী শাপলা নিবি?’

হাঁফধরা গলায় লক্ষ্মী বলে, ‘দে না দিদি চারটে ফুল তুলে।’

‘আচ্ছা দাঁড়া, স্থির হ। জলে নামবিনি কিন্তু।’

লক্ষ্মী ভৈরবের পাড়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। ওর দৃষ্টি থাকে ভৈরবের জলে। দিদি নেমে যায়, কিন্তু ওঠে না। দিদি ডুব দেয় কিন্তু ওঠে না। বিকেলশেষে গোধূলী এসে ভৈরবের পাড়কে রহস্যময় করে তোলে। দিদি ওঠে না। হঠাৎই লক্ষ্মীর কানে কে যেন শিস দিয়ে বলে যায়, ‘লক্ষ্মী, বিপদ, পালা। দৌড় দে, দে দৌড়।’ চকিতে লক্ষ্মী উঠে দাঁড়ায়। দৌড় দেয়। বাড়িতে খবর দেয়। ‘দিদি ভৈরবের জলে নেমেছে গো অনেকক্ষণ হচ্ছে…’ফুলের কথা বেমালুম চেপে যায় লক্ষ্মী এই ছোট বয়সেই। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নিধু হালদারের জলে সুধাময়ী উঠে আসে। ততক্ষণে তার বাম চোখটা খুবলে দিয়েছে ভৈরবের রাক্ষুসে মাছগুলো। শত শত লোক জড়ো হয় নদীর পাড়ে। বিধিকেই দায়ী করে তারা। সুধাময়ীর শক্ত হয়ে যাওয়া ডান হাতের মুঠিতে একগুচ্ছ শাপলা দেখে তারা বুঝে নেয়, ফুল মেয়েটার খুব প্রিয় ছিল।আজ অনেকদিন পর লক্ষ্মী মাস্টারের কানে কে যেন শিস কেটে তীব্রস্বরে বলে ওঠে, ‘লক্ষ্মী, বিপদ! পালা! দৌড় দে, দে দৌড়…’

লক্ষ্মী মাস্টার গনগনে সূর্য মাথায় নিয়ে ছুটতে ছুটতে বড় রাস্তায় এসে পৌঁছাল। দুপুর গড়াতে শুরু করেছে বিকেলের দিকে। তার এই ৬৫ বছর বয়সে যতটুকু দ্রুত দৌড়ানো সম্ভব সে দৌড়াচ্ছে। তার জর্দার ধকল সহ্য করা ফুসফুস হাঁপরের মতো উঠছে-নামছে। রাস্তাটা সাপের মতো বাঁক নিয়েছে সামনে, তারপর ফরাজীয়া মসজিদের গা-ঘেঁষে মিশেছে কাথুলী সড়কের সঙ্গে। লক্ষ্মী দৌড়াচ্ছে প্রাণপণে কাথুলী সড়ক লক্ষ্য করে।

দৌড়াচ্ছে ওরাও। ঠিক দৌড় নয়। ওরা মার্চ করছে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাচ্ছে ওরা মৃত্যু আর পৈশাচিকতার পয়গাম নিয়ে। ওদের বুটের ঘর্ষণে জনমানবহীন এই মেহেরপুরের নিষ্প্রাণ রাস্তা থেকে ধুলো উড়ছে ক্রমাগত। ওরা লক্ষ্মী মাস্টারের মতো অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেনি। ওরা যতই মার্চ করছে ততই ওদের চোখ হিংস্র নেকড়ের মতো আরও জ্বলজ্বলে হয়ে উঠছে।

এদের দেখলেই বোঝা যায়, এরা চাইছে এ দেশের প্রতিটা ইঞ্চি মাটি পুড়িয়ে কয়লা বানাতে; আর তার জন্য দেশের মাটি নয়, ওদের লক্ষ্য এ দেশের নিরীহ মানুষ।

রাস্তাটা যেখানে পাহাড়ি নদীর মতো বাঁক নিয়ে মসজিদের গা-ঘেঁষে চলে গেছে, লক্ষ্মী মাস্টার সেই বাঁকটায় থমকে দাঁড়াল। দাঁড়াতে বাধ্য হলো সে। সামনেই মসজিদের পেশ ইমাম ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেব। যিনি চোস্ত উর্দু বলতে পারেন। পাকিস্তানি সৈনিকদের দোভাষীর কাজ করেন আর অখন্ড পাকিস্তানের জন্য এবাদত বন্দেগি করে সময় কাটান। অজু শেষ করে আজান দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। তার দাড়ির মাঝে আটকে থাকা অজুর পানি চকচকে রোদে মুক্তোদানার মতো ঝিলিক দিচ্ছে। ইমাম সাহেব উদাস দৃষ্টিতে পশ্চিমের আকাশটা দেখছেন। আকাশে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। একরাশ কালো ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে উঠে যাচ্ছে কোনো অজানায়। আর তার পাশেই একদল শকুন উড়ছে ব্যস্ত ভঙ্গিতে। ইমাম সাহেব এই অশুভ দৃশ্য দেখে মজা পাচ্ছেন কিনা তা এতদূর থেকে বুঝতে পারছে না লক্ষ্মীপদ হালদার। তার মনে হয় ইমাম ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেব তার দিকেই চেয়ে আছেন। হাঁড়িকাঠে গলা রাখা পশুর মতো অসহায় হয়ে পড়ে লক্ষ্মীপদ। আবার সে সেই দুর্গন্ধটা পায়; মৃত্যুর গন্ধ, লাশের গন্ধ, পচা লাশের উৎকট গন্ধ…

হঠাৎই দূরে কোথাও একটা শেল বা গ্রেনেড ফাটে; সঙ্গে গুলির শব্দ। গুলির শব্দে সম্বিৎ ফিরে পায় লক্ষ্মীপদ হালদার, সচেতন হয়ে ওঠে মেহেরপুরের শাহাজী পাড়ার ফরাজীয়া মসজিদের পেশ ইমাম ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেবও। এখনো যিনি সোনার পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত। নিজের অজান্তেই আবার দৌড় শুরু করে লক্ষ্মীপদ প্রাণপণে। তার খাটো জীর্ণ ধুতি দৌড়ের তীব্রতায় তিরতির করে কাঁপে।পেছনের বুট জুতোর শব্দ আরো স্পষ্ট হয়েছে। ছন্দোবদ্ধ শব্দটি লক্ষ্মী মাস্টারের বুকের মধ্যে প্রবলভাবে আঘাত করছে। দিক হারানো হতবিহ্বল গরুর বাছুরের মতো লক্ষ্মী এলোমেলো পায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ইমাম সাহেবের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। তার চোখে-মুখে এক অসহায় আকুতি! আর ফুসফুসে হাজার হাপরের শব্দ…

মুহূর্ত কেটে যায়, লক্ষ মুহূর্ত। লক্ষ্মী মাস্টার আবার সেই পচা দুর্গন্ধটা পায়। ফাঁসির আসামিকে যেমন কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসির পূর্বে তওবা করায় ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেব সেরকম ভঙ্গিতে লক্ষ্মীপদ হালদারের সামনে দাঁড়ালেন। এই মুহূর্তে ইমাম সাহেবের মুখটা বড়ই কুৎসিত মনে হচ্ছে। নীরবতা ভেঙে উদ্বেগমাখা গলায় ইমাম মো. আবদুল মুত্তালেব বলে ওঠেন,‘একি মাস্টার, এভাবে দৌড়ে তো তুমি ওদের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না; ওরা তো ধরে ফেলবে! তাছাড়া তুমি যেদিকে যাচ্ছো সেখানে কোনো আশ্রয় নেই।’ মার্চের শব্দ আরো এগিয়ে আসে। কাথুলী সড়কের ওপর দিয়ে একটা জলপাই রঙের ভারী গাড়ি ধীরগতিতে এসে থামে। যেন ওঁৎ পেতে থাকা আতঙ্ক। গাড়ির সামনে একজন সৈনিক একটা অটোমেটিক অস্ত্র উঁচিয়ে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। একটু আগপিছ চিন্তা করে, ইমাম সাহেব সামান্য উদাস হয়ে যান। বিড়বিড় করে বলেন, ‘হে খোদা, এ তোমার কোন পরীক্ষা খোদা!’ তারপর তার ধবধবে পাঞ্জাবির পকেট থেকে টুপিটা দ্রুততার সঙ্গে বের করে মাথায় পরে নেন ইমাম আবদুল মুত্তালেব এবং বলে ওঠেন,

‘আমি আজ পর্যন্ত কোনো বেধর্মী কাফেরকে এই পবিত্র ঘরে ঢুকতে দেইনি। কিন্তু আজ! হে খোদা, আমায় মাফ করো, খোদা। মানুষটির জীবন রক্ষা করো খোদা!’

তারপর ইমাম ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেব ছুটে এসে লক্ষ্মী মাস্টারের দু’কাঁধ ধরে শঙ্কিত কণ্ঠে বলেন,

“দাদা, তুমি মসজিদের ভেতর ‘মিম্বারের’ কাছে গিয়ে জান বাঁচাও; এদিকটা আমি দেখছি।” লক্ষ্মী মাস্টার লক্ষ করল, ইমাম সাহেব এই প্রথম তাকে ‘দাদা’ সম্বোধন করল। মাথাটা তার এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে, দু’চোখ বুজে আসতে চায় ভীষণ আলস্যে। ইমাম এবার ধমক দিয়ে বলেন,

‘দাদা, পালাও। দৌড় দাও, দৌড়…’

‘কোথায়?’

‘মসজিদের মধ্যে, মিম্বারের কাছে গিয়ে জান বাঁচাও।’

বুটের শব্দ তখন বেশ কাছে এসে পৌঁছেছে। লক্ষ্মী মাস্টার মসজিদের গেট লক্ষ করে দৌড় দেয় স্বার্থপরের মতো। মসজিদে ঢোকার মুহূর্তে তার মনে হয় মিম্বার কী? জীবনে কোনোদিন মসজিদে ঢোকেনি লক্ষ্মীপদ। আজ ঢুকেছে। জীবন বাঁচাতে। লক্ষ্মীর ঠাকুমা বেঁচে থাকলে এ ক্ষেত্রেও কি তাকে চান করে নিজ বাড়িতে ঢুকতে হতো? লক্ষ্মী ভাবতে থাকে।

মসজিদের ভেতরটা খুবই নিস্তব্ধ আর সুশীতল। চারপাশে পরিবত্রতা ছড়ানো। কিন্তু মিম্বার কোনটি? লক্ষ্মী মাস্টার লক্ষ করে, যেখানে ইমাম সাহেব দাঁড়ান তার পাশের স্থানটি অপেক্ষাকৃত অধিক আলো ছায়াতে ঢাকা। সে ওখানে পবিত্র গ্রন্থগুলোর পাশে মাথা গুজে উবু হয়ে বসে পড়ে। তার মনে হয়, আশপাশের পবিত্রতা তার জীবনের চারপাশে এক রক্ষাব্যুহ রচনা করেছে। কোথাও কোনো শব্দ নেই। শুধু লক্ষ্মী মাস্টারের বুকে লক্ষ হাপরের দামামা। পুরনো জীর্ণ ফুসফুস দুটো বিদ্রোহ করতে চাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। হঠাৎ তার মনে হয়, আসার সময় ইমাম সাহেবকে ‘আদাব’ বলে আসেনি সে। লজ্জায় আর অপমানে কুঁকড়ে যায় লক্ষ্মীপদ।

সৈনিকগুলো মসজিদের প্রবেশপথেই থামল। ওদের মধ্যে কর্তা সৈনিকটা হাসিমুখে ইমাম সাহেবের দিকে এগিয়ে গেল, যেন কতদিনের বন্ধুত্ব ওদের দু’জনার। সৈনিক ইংরেজি কথা শুরু করলেও উর্দুতে ফিরে আসে মুহূর্তে। ওদের কথোপকথনটা বাংলা করলে নিম্নরূপে দাঁড়ায়-

‘তুমি কে? এখানে কী করো?’

আমি এই মসজিদের পেশ ইমাম; আসরের ওয়াক্ত হচ্ছে, আজানের অপেক্ষায় আছি।’

‘তোমার খাতনা হয়েছে?’

‘আমি এই মসজিদের পেশ ইমাম!’

‘তুমি জয় বাংলা?’

‘আসতাগফেরুল্লাহ! আমি পাকিস্তানের একজন সাচ্চা খাদেম।’

‘এখানে কোনো জয় বাংলা, মালাউন আশ্রয় নিয়েছে?’

‘গোস্তাখি মাফ; এ আল্লাহর ঘর, এখানে কোনো বেধর্মীর স্থান নেই।’ 

সৈনিকটি কথা না বাড়িয়ে মসজিদের দিকে পা বাড়ায়, বাকিরা তাকে অনুসরণ করে। সৈনিকটি বলে, ‘মার্চ ইনসাইড অব দ্য মস্ক।’ বাকিরা মার্চ শুরু করে। উল্টেপাল্টে দেয় মসজিদের জমাটবাঁধা পবিত্রতা। একজন এসে কর্তা সৈনিকটিকে বলে, ‘ওকে স্যার, ইঁহাপর কোই নেহি হে, স্যার।’

আর তখনই লক্ষ্মী মাস্টারের ঊনষাট বছর বয়স্ক ফুসফুস প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে বসে।

খক্ খক্ কেশে ওঠে লক্ষ্মী মাস্টার।

দৈত্যের মতো সৈন্যটি সমস্ত রক্ষাকবজ ছিন্ন করে এক হাতে মাস্টারের টুঁটি ধরে খাড়া করে ফেলে ‘মিম্বারের’ পাশ থেকে মসজিদের মাঝখানেই দাঁড় করিয়ে গুলি করল। গুলির শব্দ মসজিদের চার দেওয়ালে বাধা পেয়ে তীব্র প্রতিধ্বনি তোলে। সে প্রতিধ্বনি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়ে ভাঙা কাচের টুকরোর মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে শান্ত হয়। আবার নিস্তব্ধতা গ্রাস করে চারপাশকে। খেতে না পাওয়া শীর্ণ সাপের মতো হিল হিল করে রক্তের ধারা গড়িয়ে সামান্য দূর এগিয়ে যায়। অন্যদিকে, ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেব বিড়বিড় করে বলেন, ‘ইনা লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন।’পাহাড় জয়ের তৃপ্তি নিয়ে, মসজিদ থেকে বেরিয়ে লাল পিঁপড়ের সারির মতো সৈনিকগুলো কাথুলী সড়কে থেমে থাকা জলপাই রঙের গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। তখন তপ্ত দুপুর ক্রমেই ক্লান্ত হয়ে আসছে। পাকিস্তানি সৈনিকগুলোর লম্বা ছায়া পড়ছে মেহেরপুরের ধুলো ঢাকা খোয়া ওঠা রাস্তায়। কিছুদূর এগিয়ে এসে দলটি থমকে দাঁড়ায়। কর্তা সৈনিকটি চোখের ইশারা করতেই আরো দু’জন সৈনিক ক্ষীপ্রতার সঙ্গে ঘুরে আসে এবং এই জনমানবহীন রক্তাক্ত মসজিদের পেশ ইমাম ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেবকে ধরে। সৈনিকদের মধ্যে একজন চিৎকার করে বলে,

‘তোম গাদ্দার হো, জো বাংলা-কা এজেন্ট হো…’ 

আবদুল মুত্তালেব দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘আমি মুসলমান’। সামান্য ভড়কে যায় কর্মক্লান্ত দু’জন সৈনিক। মুহূর্তেই অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে তারা। সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কর্তা সৈন্যটি উঁচু গলায় বলে ওঠে, ‘ডোন্ট ফায়ার; বুলেট ইজ মোর স্পেশিয়াস দ্যান ব্লাডি ব্যঙ্গালি লাইভস। চার্জ দ্য বেয়নেট।’

যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো পৈশাচিক উল্লাসে সৈনিক দু’জন ওদের অস্ত্রের মাথায় লাগানো ছোরা দিয়ে ইমাম ক্বারী মো. আবদুল মুত্তালেবের পেট, বুক, মুখ তরমুজ ফালি দেওয়ার মতো ফালা ফালা করে ফেলল।

প্রতি খোঁচায় উষ্ণ রক্তের ঝলক ছিটকে এসে ধুলোহীন মসজিদের উত্তপ্ত বারান্দায় এসে পড়ল। কিছু না বুঝেই একদল কাক আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠল, কা-কা-কা…

আজ অনেকদিন পর এই মসজিদ থেকে আসরের আজান ধ্বনিত হল না। ঠিক তেমনি দীর্ঘদিন পর নায়েব বাড়ির মন্দিরে সন্ধ্যাপ্রদীপও আর জ্বলল না।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *