আদিম বুদবুদ – মোজাফ্ফর হোসেন
আলতো করে কড়া নাড়ার শব্দ–কেউ একজন টোকা দেবে কি দেবে না মনের এই দোটানা থেকে ছুঁয়ে গেছে। পশ্চিমের দেয়ালে সেঁটে থাকা ঘড়িতে তখন তখন রাত ১২.৪২ মিনিট। কিছুক্ষণ আগে যখন মেয়েটি ‘গুট নাইট’ জানিয়ে গেল তখনও ঘড়ির কাটাগুলো এখানেই ছিল। আবার কি বলতে চায় মেয়েটি?
‘গুডনাইট জানাতে ভুলে গেছি। গুডনাইট বাবা।’ দরজা খুলতেই ঘরের ভেতর একপা রেখে কথাটি বলেই চলে গেল মিতু। কিছুক্ষণ আগে ঠিক এভাবেই এই কথাগুলো বলে গেছে ও। তবে কি ভুল করে আবার এলো; না-কি আমারই ভুল হচ্ছে? কিন্তু ভুল তো হওয়ার কথা নয়। তখন ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, সবসময় খালি পায়ে থাকিস কেন? ও কোনো উত্তর না করে চলে যায়। এবার আর ওর পায়ের দিকে তাকানো হয়নি। তবে কি সময় আমাকে পিছিয়ে আনলো?
‘কই, এসো। দরজায় দাঁড়িয়ে একা একা কার সঙ্গে কথা বলছ?’ ভেতর থেকে নীলু বলে।
শুয়েছি কতক্ষণ হবে মনে নেই। ঘুমটা মাত্রই এসেছে। দরজায় ফের কড়া নাড়ার শব্দ। ঘড়ির কাটা তখন কিছুটা এগিয়েছে। মশারির এককোণা উঁচু করে সাবধানে নামি। নীলু ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাঁটতে থাকি দরজার দিকে অনেকটা সময়। ঘরের দক্ষিণ কোণ থেকে উত্তরের সীমানা যেন কয়েক মাইল বিস্তৃত। পায়ের পাতা মেঝের সাথে আটকে আটকে যাচ্ছে। ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম, খুব করে যখন বৃষ্টি হত, খালি পায়ে এটেল মাটির কাদা চটকে চটকে আমরা স্কুলে যেতাম। আমি আর রহিম। পরে রহিম স্কুল ছেড়ে সবমৌসুমেই কাদা চটকানোর কাজ জুটিয়ে নিলো—কাদা চটকে চটকে গাঁয়ে গাঁয়ে কাঁচামাটির ঘর বানিয়ে বেড়াত। সে অনেক অনেক দিন আগের কথা! আজ আমি মেঝে থেকে ঐ এটেল মাটির গন্ধ পাচ্ছি। স্যাঁতসেঁতে-নোনতা গন্ধ, সাথে রহিমের শরীরের ঘ্রাণটাও মিশে আছে।
দরজা খুলেই দেখি খানিক দূরে মা দাঁড়িয়ে।
ওহ, মা! কিছু বলবে?
‘আমি বোধ হয়…!’ মা কথার মাঝখানে থেমে মনে করার চেষ্টা। পুরো বাক্যটা মা কখনই একবারে শেষ করতে পারে না।
তুমি সময় নিয়ে বলো। ওতো তাড়া নেই আমার। আমি জবাব দিই।
মা অনেকক্ষণ কোনো কথা বলেন না। আমিও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি।
‘না, কিছু না। এমনিই এসেছিলাম।’ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মা আমার দিকে মুখ করেই পেছনে সরে যেতে থাকলেন। একটা প্রাচীন নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নিলো তাকে।
আমি দরজা লাগিয়ে দিই।
‘তোমার কি হয়েছে বলো তো?’—নীলু বলল। ও ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। ঘুমাতে যাওয়াটা ওর কাছে পার্টিতে যাওয়ার মতই গুরুত্বপূর্ণ। কম করেও একঘণ্টা প্রস্তুতি চলবে আয়নার সামনে। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি— প্রায় প্রতিরাতেই।
আমার ঘুম ভাঙে ফের, কড়া নাড়ার শব্দে। খুবই অস্পষ্ট শব্দ, যেন স্বপ্নের ওপাশ থেকে ভেসে আসছে অস্তিত্বে। উঠে বসি। নীলু অঘোরে ঘুমাচ্ছে। সমস্ত পৃথিবীর সুখ এখন ওর নিঃশ্বাসের পথ ধরে একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে অতলে। এমনি করেই প্রতিনিয়ত সুখ হারাচ্ছে পৃথিবী। মশারির বাইরে এসে চোখটা ভালো করে ডলে নিই। ঘড়ির দিকে তাকাই, রাত ২টা ৩৬মিনিট। দক্ষিণের জানালা খোলা। বৃষ্টির ফোঁটার মতো জোছনা পোকা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। নাকি বৃষ্টিই হচ্ছে—সোনালী বৃষ্টি? ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে যাচ্ছে অনবরত। মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে শেয়াল। মাঝরাতে পুরো শহরটা যেন পরিপূর্ণ গ্রাম বনে যায়! এই শহরটা কোনো এক সময় গ্রাম ছিল, শেয়ালগুলো তখন থেকেই ডেকে আসছে। শেয়ালের ডাকের সাথে সাথে মাঝে মধ্যে আদিম মানুষের চিৎকারও শোনা যায়— আনন্দ কিংবা বেদনার। দিনের আলো ফুটলে ওরা ইট-পাথরের সাথে মিশে যায়। সবকিছু একাকার হয়ে যায় নীলুর শরীরের প্রতিটা ভাঁজে। আমি খুব আলতো করে দরজার দিকে পা বাড়াই। ঘরের ফার্নিচারগুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিই। ঠিক জায়গাতেই আছে বোধ হয়! মাঝেমধ্যে ওদের ফিসফাস শব্দ আমার গভীর ঘুম ভেদ করে আমাকে সেই বাল্যকালে নিয়ে যায়। ওদের চলাচলে আমি কদমফুলের গন্ধ পাই।
মা? এখনো ঘুমোও নি? দরজা খুলে মাকে দেখে আমি জিজ্ঞেস করি। মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে চেনার চেষ্টা করেন।
আমি তোমার ছেলে, কি যেন নামটা? আমি নিজের নাম মনে করার চেষ্টা করি।
‘তুই যখন আমার পেটে ছিলি, তখন তোর কোনো নাম ছিল না, বাবা!” মা বলেন।
কিছু বলবে মা? আমি জানতে চাই।
‘না, বাবা।’
এসেছো যে? তোমার কি শরীর খারাপ?
‘আমি কি যেন একটা রেখে গিয়েছি?’ মা উত্তর দেন।
তুমি আবার কি রেখে গেলে?
‘চশমা?’ মা আমাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করেন।
চশমা তো তোমার চোখেই আছে!
‘ওহ! তাহলে অন্য কিছু হবে; মনে করতে পারছি না।’
ভেতরে এসে দেখবে?
মা ছায়ার মতো নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, মাঝখানের দূরত্ব বাড়তে বাড়তে কয়েকশ’ বছর ছাড়িয়ে যায় যেন! আমি দাঁড়িয়ে থাকি সভ্যতার দিকে পিঠ দিয়ে ভবিষ্যৎ আর অতীত যেখানে অনন্তকাল ধরে বর্তমান সেই দিকে মুখ করে। মা কখন চলে যান, টের পাই না কিছুই।
দরজা বন্ধ করে বারান্দায় যাই। সিগারেট ধরাই। সিগারেটের ধোঁয়া কুণ্ডুলি পাকিয়ে অন্ধকারে মিশে যায়। আরও গাঢ়-ঘন হয়ে ওঠে অন্ধকার। আমার মতো ধোঁয়া জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে কারা যেন এই অন্ধকার তৈরি করে রোজ। কেউ একজন আদর করে তার নাম দিয়েছে রাত। খুব মিষ্টি একটা নাম! অন্য নাম হলে অন্ধকার এতো মধুর হত কি না সন্দেহ। আমি যখন বাল্যকালে ইরার সাথে প্রেম করতাম, তখন আমি ওকে ‘মন্থন’ বলে ডাকতাম। অকারণেই। শব্দটা আমি সমুদ্রের তলদেশ থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম। আমাদের বাড়ির পেছনের বদ্ধ-জলাশয়টি থেকেও হতে পারে। একদল জোনাকিপোকা টর্চ মেরে মেরে হন্তদন্ত হয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে। একটি এসে বসে আমার শার্টের বাঁ-কলারের ওপরে, কানের ঠিক ইঞ্চি তিনেক নিচে। হয়ত কিছু বলতে চায় আমাকে। বলতে চায়, নীলুর মতো ওরও সিগারেটের ধোঁয়া অসহ্য লাগে। কিন্তু ও কিছুই বলে না। নিঃশব্দে জিরিয়ে নেয় খানিকটা সময় তারপর আবার উড়ে যায় শূন্যে। বাকিরা আমার রুম তন্নতন্ন করে তল্লাসি করে, কয়েকটি ঢুকে যায় নীলুর পেটিকোটের ভিতরে, হয়ত আরও গভীরে— আজকাল মানুষকে বিশ্বাস করা খুব কঠিন, ওরাও সেটা জেনে গেছে হয়ত।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে আবারও ঘুম ভেঙে যায়। বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘড়ির দিতে তাকাতে আর ইচ্ছে করে না। বিরক্তির সাথে দরজার দিকে যাই।
‘মা, তুমি? এখনো ঘুমাও নি?’ বিরক্ত কিছুটা মুখেও ফুটে ওঠে।
‘ঘুম আসে না, বাবা।’ মা উত্তর করে।
আমার সকালে অফিস, মা। ভোরে উঠতে হবে। আমি শক্ত করে বলি।
‘ওহ।’ আর কথা না বলে মা পিছন দিকে পা বাড়ান। আমি এগিয়ে যাই খানিকটা। মাইলের পর মাইল।
মা, তোমার কি শরীর খারাপ? কি হয়েছে তোমার?
‘আমি কি যেন পাচ্ছি না খুঁজে!’ মা সরে যেতে যেতে বলেন।
কি, বলো মা? আমি তোমাকে খুঁজে দিচ্ছি। আমি চিৎকার দিয়ে বলি।
‘ঠিক মনে করতে পারছি না, বাবা।’ অন্ধকারের ওপাশ থেকে মা বলেন। মার পিছনে হাঁটতে হাঁটতে আমি সমুদ্র দেখে আসি। ছেলেবেলায় এমনি করে বাবার পেছনে পেছনে আমাদের দক্ষিণ শালিকের মাঠের বিল দেখে বেড়াতাম। একবার সার্কাসও দেখেছি। আর একবার অন্ধগলির মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। বাবার খোঁজে। বড় হয়ে জেনেছি, ওখানে মেয়েছেলে কেনা যেত ঘণ্টাচুক্তিতে। বাবা কি সেদিন কিনেছিলেন কাউকে? বাবা বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতাম। একদিন ভরদুপুরে তিনি আত্মহত্যা করেন। তাঁর বেঁচে থাকতে ভালো লাগছিল না— প্রায়ই আমাকে বলতেন সে-কথা। বড় হয়ে আমিও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। বাবার মতো কোন কারণ ছাড়াই। আমার মৃত্যু হয়েছিল কিনা মনে পড়ছে না।
খ
আজ আমার ফিরতে বেশ রাত হলো। প্রায়ই রাত হয়ে যায়। সরু গলি ধরে বেশ খানিকটা হাঁটতে হয়। আজ খুব বিচ্ছিরি অন্ধকার। মই বেয়ে ছাদে ওঠার মতো বেশ সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। ছোটবেলায় একবার মাকাল ফলের ভেতরে এমন অন্ধকার দেখেছিলাম। বাবা আমাকে আর মিতুকে বোকা বানানোর জন্য এনে দিয়েছিল ফলটি। আমাদের পাড়ার গোরস্থানে প্রচুর ফলতো এই ফল। মিতু আমার যমজ বোন। বাবা নাকি মাকে বলতেন, ‘আমাদের মেয়ে হলে নাম রাখবো মিতু আর ছেলে হলে মিথুন।’ আমরা দুজনেই হয়েছিলাম। আজ বিদ্যুৎ নেই কিংবা থাকলেও আমি তার অস্তিত্ব টের পাচ্ছি না। মাঝেমধ্যে আমি ভীষণ অন্ধকার দেখি চারপাশ। অন্ধকারে আমার বাড়ি খুঁজে পেতে খুব কষ্ট হয়। মনে হয় গলির সবগুলো বাড়িতে নীলু ড্রেসিং টেবিলে বসে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পদক্ষেপ গুনে গুনে অগ্রসর হই। ঠিক মনে করতে পারি না, কতটা এগোলে আমি গন্তব্য খুঁজে পাবো। অন্ধকারের শাড়ি পরে প্রতিটা বাড়ি ঘোমটা দিয়ে দিব্যি বসে আছে। অন্ধকারের দেবতা এরিবাসের সঙ্গে এখন তাদের মিলন ঘটবে, জন্ম হবে অনেকগুলো আলো এবং দিনের। আমি ঢুকে পড়ি একটাতে। নীলু ড্রেসিং টেবিলে বসা। নীলুই তো? নীলুর মতই সবকিছু শুধু ঘরের আসবাবগুলো একটু এলোমেলো। আমি বেশ ক্লান্ত। নীলুকে দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙলো দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে। উঠে বসি। নীলু কিংবা নীলুর মতো নারীটা অঘোরে ঘুমোচ্ছে। রাত ১টা ২৫মিনিট। ঘড়িটা আজ দেয়ালের উত্তর দিকে। কিংবা পশ্চিমের দেয়ালটাই উত্তর দিকে সরে গেছে। দরজায় হাত পড়তেই খুলে যায়। নীলু বোধ হয় লক করতে ভুলে গেছে। এই ভুলটা ওর খুব বেশি হয় না। আজ হয়েছে। দরজার ওপাশে খাঁ খাঁ শূন্যতা।
মা? আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলি। কোথাও কেউ নেই। অনেক সময় মা এভাবেই দরজায় টোকা দিয়ে চলে যান। আমি দাঁড়িয়ে থাকি অনেকক্ষণ। অন্যদিনকার মতই নিথর, নিশ্চুপ।
‘কী করছ ওখানে? এনিথিং রং?’ নীলুর কথায় চমকে উঠি।
কিছু না। এমনি। দরজাটা আঁটকে বারান্দায় গিয়ে বসি। সিগারেট ধরাই। সিগারেটের আলো জোনাকি পোকার মতো জ্বলে আর নেভে। জোনাকি পোকাগুলো আজ এতক্ষণে বিশ্রামে গেছে। শেয়ালগুলো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে কবেই। ঝিঁঝিঁপোকারা ডেকে চলেছে একটানা। ওরা ক্লান্ত হয় না সহজে। আরও একটা সিগারেট ধরাই। বারান্দার সামনে একটা গাছ আছে, বৃক্ষ জাতীয়। নাম জানি না। পৃথিবীর সমস্ত গাছ বলতে আমি এখন ওটাকেই বুঝি। যেমন নারী বলতে ইরা। গাছটি নিঃশ্বাস নেই বেশ জোরে জোরে। অনেকটা বাবার মতো করে। গাছটির ফাঁক-ফোকর দিয়ে খামচা খামচা আকাশ দেখা যায়। তারাগুলো মনে হয় ডালে-ডালে পাতায়-পাতায় ঝুলে আছে। আমি একবার মিতুকে বলেছিলাম— দেখ, আমাদের গাছটিতে কেমন তারা ধরেছে! মিতু আমার মেয়ে। ওর জন্ম হওয়ার কথাশুনে আগাম নাম রেখেছিলাম মিতু, আমার সমান বয়সী বোনটার নামে। বাবার মৃত্যুর পর ওকে একদিন গাঁয়ের জঙ্গল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একটা মাকাল ফল ছিল মুষ্টিবদ্ধ। বাবার অবর্তমানে ছোটচাচা আমাদের ভালোবেসে মাকাল ফল এনে দিতেন। মিতুকে সেদিন সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
জন্মের কয়েকদিন পর চলে গেল আমাদের মিতুও–অপুষ্টিতে। এমন অন্ধকারে বারান্দাতে বসলে মিতু এসে আমার পাশে বসে। ছোট-মিতু কিংবা বড়-মিতু। মিতু সেদিন আবদার করে বলেছিল, ‘আমাকে একটা তারা পেড়ে দেবে, বাবা?’
আজ ঘুটঘুটে অন্ধকার, আকাশের মেঘগুলো ছানাকাটা দুধের মতো বিগড়ে গেছে— কারা যেন চুরি করে নিয়ে গেছে তারাগুলো। থাকলে আজই একটা পেড়ে দিতাম মিতুকে। গলির মোড়ে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে কখন থেকেই। ওর কণ্ঠস্বর আমার সেই ছেলেবেলার কুকুরটির সাথে অবিকল মিলে যায়। ও অদৃশ্য চোরদের সন্ধান পেয়েছে বোধ হয়। নাকি ওই সাবাড় করেছে সবগুলো তারা? হালকা বাতাস বইছে, কারও নিঃশ্বাসের মতো থেমে থেমে। বাতাসে পোড়া মাটির গন্ধ — ভাপসা মাটি রোদে পুড়লে এমন গন্ধ হয়। আমাদের রান্নাঘর থেকে এরকম গন্ধ বের হতো। আমি নিঃশ্বাস টেনে মার হলুদ-মাখা শরীর থেকে গন্ধটা নিতাম। রান্নাঘরে ঘনঘন যাওয়া দেখে মা ধরে নিয়েছিলেন, আমি তাঁকে খুব ভালোবাসি। আসলে ভালোবাসতাম তখন ভিকুর মাকে, তার মাংসল বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভালো লাগতো। ভালোবাসতাম কলপাড়ের পেয়ারা গাছটিকে, গাছটির পেয়ারা আমার ভালো লাগতো। তারপর আরেকটু যখন বড় হলাম তখন ভালোবাসতাম ইরাকে, ইরার উদোম শরীর আমার ভালো লাগতো। মাকে এসবের বলা হয়নি কিছুই।
ঘুম ভেঙে যায় কড়া নাড়ার শব্দে। গাছটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠে দাঁড়াই। মিতু আমার পাশ থেকে উঠে গিয়ে ওর মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। শব্দ থেমেছে দেখে আবার চেয়ারটিতে এসে বসি।
আরও একবার কড়া নাড়ার শব্দ আসে।