ব্লাউজ – শোভন মণ্ডল
পারুল কম কথা বলে। একমনে কাজ করে যায়। কাঁচির খচখচ শব্দ আর সেলাই মেশিনের ঘূর্ণন দেখে বোঝা যায় তার তৎপরতা। তার হাত কথা বলে। সুধাদি কাপড়ের ছিট আর মাপগুলো দিয়ে যায়। পারুল একবার চোখ বুলিয়ে শুরু করে তার কাজ। অদ্ভুত দক্ষতা তার। নিমেষেই কাঁচি দিয়ে কাপড় কেটে মেশিনে সুতো লাগিয়ে পায়ে চাপ দিয়ে চাকা ঘোরাতে থাকে। কয়েক মিনিটে তৈরি হয়ে যায় আস্ত একটা ব্লাউজ। কত রকমের তার স্টাইল। ম্যাগি হাতা, ঘটিহাতা, লেসযুক্ত, নকসী কাটা ব্লাউজ। যেমন দেখতে সুন্দর তেমন তার ফিটিংস। সুধাদির গুমটি দোকান আজ একতলা সিমেন্টের ঝাঁ চকচকে। শুধুমাত্র পারুলের তৈরি ব্লাউজের কল্যানে তা সম্ভব হয়েছে। তার কাছে ব্লাউজ করানোর জন্য লাইন পড়ে যায় সদ্য যুবতী থেকে বয়স্ক মাসীপিসিদের। সবার মুখে মুখে ফেরে পারুলের ব্লাউজের কথা।
আগে ব্লাউজ ছাড়া সালোয়ার, চুড়িদার -এসবও করতো। কিন্তু এখন শুধু ব্লাউজই করে সে। সুধাদি ব্লাউজের মাপ নিয়ে তাকে দিলে সে একবার চোখ বুলিয়ে যেন দেখতে পায় পুরো নারীকে। মাপের নিখুঁত মেলবন্ধনে সেই অচেনা নারী যেন তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। পারুল দিব্যি দেখতে পায় তার দীর্ঘগ্রীবা, মোলায়েম ঘাড়, নিটোল সুউচ্চ স্তন, বুকের ত্রিকোণ খাঁজ। মেশিন চলতে থাকে। শিল্প যেন নিজেই এসে তাকে ধরা দেয়।
পারুল কম কথাবলা মহিলা। এটাই তার স্বভাব। কিন্তু গত কয়েকমাস আরও কমে গেছে কথা। শুধু কাজের মধ্যে ডুবে থাকে সে। ব্লাউজ সেলাই করতে করতে মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিজের স্তনের দিকে তাকায়। স্তন না বলে বুক বলাই ভালো। কোন চড়াই উতরাই নেই। শুধুই সমতল।
মাসখানেক আগে অপারেশন হয়েছে পারুলের। ব্রেস্ট ক্যানসার। রাখা যায়নি। দু’টো স্তনই বাদ দিতে হয়েছে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বুকের ওড়নাটা টেনে ধরে পারুল।
দারুন