হোমস — অনুবাদ, বঙ্গীকরণ ও অন্যান্য – দীপ্তজিৎ
১৮৮৭ সাল। বিটনস ক্রিসমাস অ্যানুয়ালে প্রকাশিত হল একটি গোয়েন্দা উপন্যাস — “A Study in Scarlet”। লিখলেন স্যার আর্থার কনান ডয়েল। সেই উপন্যাসে ডা. জন ওয়াটসনের সঙ্গে ঘর ভাগাভাগি করে থাকা সেই চিমড়ে, লম্বা, অথচ তুখোড় বুদ্ধিধারী ভদ্রলোকের সঙ্গে প্রথম আলাপ হল পাঠকের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই উপন্যাসটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। লেখকও এই আধপাগলা গোয়েন্দাকে নিয়ে একটু বিরক্ত ছিলেন। বেশ কিছু অন্যান্য লেখালিখির পর ‘লিপিনকট’ পত্রিকার অনুরোধে তিনি আবার এই গোয়েন্দাকে নিয়ে বসলেন। লেখা হল “The Sign of Four”। আশ্চর্যজনকভাবে এই উপন্যাসটি হু হু করে জনপ্রিয় হয়ে গেল। ডয়েল ভেবেছিলেন যে আর লিখবেন না এই গোয়েন্দাকে নিয়ে। কিন্তু রাখে হরি, মারে কে? স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ নিউনেসের জোরাজুরিতেই ডয়েল কিছু ছোটগল্প লিখলেন। তারপর ঘটনার ঘনঘটা পেরিয়ে মোট ছাপ্পান্নটি ছোটগল্প ও চারটি উপন্যাসের নায়ক হিসেবে সারা বিশ্বের পাঠকের মধ্যেই পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিলেন যিনি, তাঁর নাম শার্লক হোমস।
বিভিন্ন হোমস কাহিনী লেখার পেছনে বিভিন্ন আকর্ষণীয় গল্প রয়েছে। তবে এই নিয়ে বহু লোক বহুবার আলোচনা করেছেন, সুতরাং তা নিয়ে কথা বললে অকারণ স্থান সংকুলান সমস্যা হতে পারে। কাজেই, আমরা বরঞ্চ সরাসরি চলে আসি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরে হোমসের কী পরিণতি হল, তার আলোচনায়।
শার্লক হোমস যে পাঠকের মননে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন, সে কথা ডয়েলের জীবদ্দশাতেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সব পাঠকই যে ইংরেজি ভাষা বোঝে, এমন তো নয়! কাজেই, শুরু হল অনুবাদের কাজ। গত একশ’ চৌত্রিশ বছরে সারা বিশ্বে মোট নিরানব্বইটি ভাষায় শার্লক হোমসের অনুবাদ হয়েছে। বলাই বাহুল্য, তার মধ্যে আমাদের বাংলা ভাষাতেও রয়েছে বেশ কয়েকটি অনুবাদ।
প্রথম শার্লক হোমস কাহিনীর অনুবাদ করেছিলেন কুলদারঞ্জন রায়। “Hound of the Baskervilles” উপন্যাস অবলম্বনে তাঁর অনুবাদটির নাম হয়েছিল “বাস্কারভিল কুক্কুর”। স্ট্র্যান্ড পত্রিকায় হোমসের অলঙ্করণ শিল্পী সিডনি প্যাগেটের অলঙ্করণই ব্যবহৃত হয়েছিল এই বইতে। এর পরে তিনি কোনান ডয়েলের স্ত্রীয়ের অনুমতি নিয়ে আরও একটি বই অনুবাদ করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন “শার্লক হোমসের বিচিত্র কীর্ত্তি-কথা”। শোনা যায়, “The Adventures of Sherlock Holmes” গল্প সংকলনেরও অনুবাদ তিনি করেছিলেন। তবে, তা বর্তমানে কোথাও পাওয়া যায় না।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বহু পাঠক শার্লক হোমসের অনুবাদ খোঁজেন। তখন নানা বিদগ্ধ পাঠকের আলোচনায় প্রয়াত অদ্রীশ বর্ধন, মণীন্দ্র দত্ত, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনুবাদকদের নাম উঠে এলেও এঁরাই একমাত্র বাংলায় শার্লক হোমসের অনুবাদক নন। এঁরা ছাড়াও আরও বহু লোক, বহুবার বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে শার্লক হোমসের নানা কাহিনী অনুবাদ করেছেন। কোনো প্রকাশক প্রকাশ করেছেন সমগ্র, কোনো প্রকাশক প্রকাশ করেছেন কিছু বাছাই গল্পের সংকলন। এমনকি, তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন জটিল ব্যাপার বর্তমান সময়ের পাঠকের অনুধাবন করতে সমস্যা হতে পারে, এই আন্দাজ করে সটীক শার্লক হোমসের অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। শ্রীবর্ধনের অনুবাদের সঙ্গে এই টীকাগুলি যোগ করেছিলেন প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ও সৌমেন পাল।
টীকাকরণের কথা যখন উঠলই, তবে এই ফাঁকে একটা কথা বলে রাখা ভালো। ইংরেজি ভাষাতেও শার্লক হোমসের সটীক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথমবার তা করেন উইলিয়াম ব্যারিং গুল্ড ও পরবর্তীকালে করেন লেসলি ক্লিঙ্গার। ব্যারিং গুল্ডের সংস্করণটি এখন দুর্লভ, একই সঙ্গে দুর্মূল্যও বটে। লেসলি ক্লিঙ্গারের সটীক সংস্করণও অবশ্য দামের দিক দিয়ে মোটেই সস্তা নয়।
যাই হোক, বর্তমানে আর খুব বেশি অনুসন্ধিৎসু কাউকে শার্লক হোমসের কাহিনী অনুবাদ করতে দেখা যায় না। হয়তো, একই কাজ বারবার হচ্ছে বলেই আর কেউ বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন না! কিন্তু ভারতে হোমস কাহিনীর অনুবাদের চেয়েও যা বেশি আশ্চর্যজনক, তা হল হোমসের বঙ্গীকরণ এবং সরাসরি হোমস কাহিনীর নাম না রেখে তার চলচ্চিত্রায়ণ। সেই নিয়েই এই প্রবন্ধের মূল আলোচনা।
বিংশ শতকের একদম শুরুতেই এই বঙ্গীকরণের প্রথম সূত্রপাত ঘটালেন জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস লেখক পাঁচকড়ি দে। হ্যাঁ, ইনি তিনিই, যিনি বাংলা সাহিত্যে প্রথম এবং শেষবার শ্বশুর-জামাই গোয়েন্দা জুটিকে হাজির করেছিলেন ‘মায়াবিনী’ সহ বেশ কিছু কাহিনীতে। তবে সেই দেবেন্দ্রবিজয়-অরিন্দম জুটি ছাড়াও আরও একটি বাঙালি গোয়েন্দা জুটি ছিল পাঁচকড়ি দে মহাশয়ের। তাঁদের নাম গোবিন্দরাম আদিত্য ও ডাক্তার বসু। বলাই বাহুল্য, গোবিন্দরাম হলেন শার্লক হোমসের প্রতিভূ এবং ডাক্তার বসু হলেন কাহিনী কথক ডাক্তার ওয়াটসন। উপন্যাসের নামই ছিল “গোবিন্দরাম”। এর আগে দেবেন্দ্রবিজয়ের চেহারার বিবরণ ও হাবভাবে শার্লক হোমসের ছায়া লক্ষ্য করা গেলেও পুরোপুরি হোমসের ছাঁচে ফেলেই তৈরি হয়েছিল গোবিন্দরাম। এই কাহিনীর প্রেক্ষাপট ছিল লাহোর। যদি শার্লক হোমসকে গোবিন্দরাম বানিয়ে তার ভারতীয়করণ করতেই হত, তাহলে হিসেব অনুযায়ী লন্ডন বদলে হওয়ার কথা ছিল কলকাতা। কিন্তু তা লাহোর হওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি। হয়তো নামকরণ সংক্রান্ত মিল রাখতেই এই শহরের পত্তন করা। সুধী পাঠককে মনে রাখতে হবে, তখনও ভারতবর্ষ অবিভক্ত, কাজেই লাহোর ছিল ভারতের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রের একটি। তবে শার্লক হোমস সহ সব চরিত্রদের (উদাহরণস্বরূপ, লেস্ট্রেড হয়ে যান সূরযমল, গ্রেগসন হয়ে যান রাম সিং) নাম ও ঘটনাস্থল বদলেই ক্ষান্ত হননি শ্রীদে। আরও কিছু প্রয়োজনীয় বদল তিনি এই কাহিনীতে করেন। যে কোনো শার্লক হোমস ভক্ত মাত্রেই এ কথা জানা যে তাঁর শখের বাদ্যযন্ত্র ছিল বেহালা। এক্ষেত্রে পাঁচকড়ি দে গোবিন্দরামকে সেতারের অনুরাগী হিসেবে তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও, একটা সর্বজনবিদিত নামও তিনি দিয়েছিলেন এই ‘কন্সালটিং ডিটেকটিভ’ ভদ্রলোককে — ‘গোবিন দারোগা’।
এখানেই শেষ নয়, ‘গোবিন্দরাম’ উপন্যাসের সবচেয়ে বড় বদল ছিল এর কাহিনীর পটচিত্রে। পাঁচকড়ি দে কেবলমাত্র ‘A Study in Scarlet’ উপন্যাসের বঙ্গীকরণ করে “গোবিন্দরাম” লেখেননি। এই উপন্যাসে তিনি একসঙ্গে দুটি কাহিনীকে যোগ করেন। দ্বিতীয় কাহিনীটি ছিল ‘A Sign of Four’। যদি কেবলমাত্র প্রথম উপন্যাসটি অবলম্বনে এই কাহিনী রচিত হত, তাহলে উপন্যাসটি মোট দুটি খণ্ডে সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। তা না হয়ে আরও আঠেরোটি পরিচ্ছেদ এবং একটি উপসংহারসহ তৃতীয় খণ্ড যুক্ত হয়েছে। কিন্তু দুটি কাহিনীকে একত্রে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা লেখক করেননি।
প্রশংসাজনিত ব্যাপার হল এই, লেখক কখনওই তাঁর এই সৃষ্টিকে মৌলিক বলে দাবী করেননি। ‘গোবিন্দরাম’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার সময় গ্রন্থকার ‘বিজ্ঞাপন’ শিরোনামে সে কথা স্বীকার করেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই কাহিনীটিকে একটি গোটা কাহিনী না বলে “সঙ্কলিত” কথাটিও ব্যবহার করেছিলেন। তাতে যা লেখা ছিল, তা অপরিবর্তিতভাবে নিচে দিলাম:
“একই গ্রন্থকারের ইংরাজি ভাষায় দুইখানি সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ডিটেকটিভ উপন্যাসের ছায়াবলম্বনে “গোবিন্দরাম” সঙ্কলিত। ইহা সঙ্কলন করিতে আমাকে সর্ব্বত্র বড়ই স্বাধীনতা প্রকাশ করিতে হইয়াছে। মূলগ্রন্থ হইতে বাহুল্য বোধে অনেকস্থান পরিবর্জ্জিত হইয়াছে; কোন কোন স্থান একেবারে স্বকোপলকল্পিত। ইহাতে যদি কোন দোষ হইয়া থাকে, তাহা আমারই। আর যদি আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ এই উপন্যাসখানি প্রীতনেত্রে দেখেন, তাহা হইলে আমার সকল শ্রম সার্থক হইবে।”
পাঠক-পাঠিকারা সকলেই এই উপন্যাস সত্যিই “প্রীতনেত্রে” গ্রহণ করায় কিছুটা তাঁদের প্রশ্রয়েই শ্রীদে মহাশয় গোবিন্দরাম সিরিজটি আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। শার্লক হোমসের সর্বোৎকৃষ্ট (ব্যক্তিগত মতামত) এবং সর্বজনবিদিত উপন্যাস “Hound of the Baskervilles” অবলম্বনে তিনি যে উপন্যাস লেখেন, তা ছিল প্রমাণাকায়। সেই উপন্যাসের নামকরণ করেছিলেন “মৃত্যু বিভীষিকা”। এই উপন্যাসে ডার্টমুর হয়ে যায় বীরভূমের নিকটস্থ নন্দনপুর (ভৌগোলিক অবস্থান জানা নেই। অনুমান করা যায়, এই জায়গাটি কাল্পনিক) এবং কুখ্যাত বাস্কারভিল বংশ হয়ে যায় রায় বংশ।
এরপর পাঁচকড়ি দে “The Adventure of the Musgrave Ritual” অবলম্বনে লেখেন “কৃপণের মন্ত্র”। এই কাহিনীটি বাকি দুই গোবিন্দরাম কাহিনীর তুলনায় কলেবরে অনেকটাই ছোট ছিল। তা হবে না-ই বা কেন? মূল কাহিনীই যে ক্ষুদ্রাকার! এ ছাড়াও “প্রতিজ্ঞা পালন” ও “সতী সীমন্তিনী” কাহিনীতেও গোবিন্দরামের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে এই দুটি কাহিনী হোমস কাহিনীর অনুবাদ নয়।
তবে পাঁচকড়ি দে অনুবাদের রূপে বঙ্গীকরণ করে তিনটি এরকম কাহিনী পাঠককে উপহার দেওয়ায় হিড়িক পড়ে যায় শার্লক হোমসের অনুবাদের। কিছু কিছু কাহিনী বঙ্গীকরণের চোটে এমনই হয়ে গিয়েছিল, যে মূল কাহিনীর সঙ্গে তার সাযুজ্য পাওয়া বড় বিপদজনক বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এরকমই এক কাহিনী ছিল শ্রী শরচ্চন্দ্র সরকার প্রণীত “হরতনের নহলা”। এই কাহিনীটি সংশোধন করেছিলেন পাঁচকড়ি দে। তবে প্রথম প্রকাশকাল দেখতে গেলে এই কাহিনী গোবিন্দরামের বেশ কিছুকাল আগে লেখা। সুকুমার সেন, অশোক দাস, প্রসাদরঞ্জন রায়, প্রমুখরা এই কাহিনীকে “The Sign of Four”-এর অনুবাদ বললেও বর্তমানে এই তত্ত্বটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। “হরতনের নহলা” ছিল সম্পূর্ণ মৌলিক একটি কাহিনী।
মজার ব্যাপার হল, “হরতনের নহলা” উপন্যাসের মূল চরিত্রের নামও গোবিন্দরাম। অনেকে অনুমান করেন, এই কাহিনীর গোয়েন্দা চরিত্র থেকেই পাঁচকড়ি দে তাঁর “গোবিন্দরাম আদিত্য” চরিত্রটি তৈরি করতে উৎসাহ পেয়েছিলেন।
তবে “Hound of the Baskervilles” অবলম্বনে আরও বেশ কিছু কাহিনী লেখা হয়েছিল। তার মধ্যে প্রথমেই আসবে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর লেখা “জলার পেত্নী”। এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল “মৌচাক” পত্রিকায় ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে। তবে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হয়নি, বরঞ্চ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় “জলার পেত্নী”। শ্রীআতর্থী হোমস উপন্যাস থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার সময় একটি ভয়ানক পরিবর্তন আনেন। ডার্টমুরে আতঙ্কের মূল উৎস ছিল কুকুর, কিন্তু এখানে তা বদল হয়ে পরিণত হয় ষাঁড়ে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কাপড়ের পেত্নী। এই লেখাটি বর্তমানে আর পাওয়া যায় না। তবে যে কটি অংশবিশেষ পাওয়া যায়, তা থেকে অনুমান করা যায় যে ডার্টমুর হয়ে গিয়েছিল কুসুমপুর। হোমস এবং ওয়াটসন সম্ভবত হয়ে গিয়েছিলেন সদাশিববাবু ও অপূর্ব্ব। এঁদের নিবাস ছিল ঢাকায়। পাঠক, আর একবার খেয়াল করে দেখুন, কলকাতার বদলে বৃহত্তর ভারতবর্ষের আরও একটি শহরকে ভারতীয় শার্লক হোমসের কর্মস্থল বলে দেখানো হয়েছে।
ডয়েল বিরচিত এই উপন্যাসটি এতটাই প্রভাবশালী উপন্যাস, বহু বাংলা সাহিত্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়েছিল। তার মধ্যে নীহাররঞ্জন গুপ্ত প্রণীত ‘বউরাণীর বিল’ ও ‘পদ্মদহের পিশাচ’ এবং দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় প্রণীত “প্রেতের আহ্বান” বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে।
তবে এহেন বঙ্গীকরণে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়। “The Sign of Four” উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি লিখেছিলেন “চতুর্ভুজের স্বাক্ষর”। “Hound of the Baskervilles” অবলম্বনে তিনি রচনা করেন “নিশাচরী বিভীষিকা”। এই দুটি উপন্যাসেই ডাক্তার ওয়াটসনের নাম ছিল ভাস্কর। তবে শার্লক হোমসের নাম দুই কাহিনীতে দু’ রকম পাওয়া যায়। প্রথম কাহিনীতে নাম ছিল ভারত কুমার চৌধুরী ও দ্বিতীয় কাহিনীতে সে নাম বদল হয়ে হয়ে যায় ভারত ভূষণ চৌধুরী। “নিশাচরী বিভীষিকা” উপন্যাসে কুকুর বদলে হয়ে গিয়েছিল ভালুক।
এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু হোমস কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রীরায় বেশ কিছু ছোটগল্প লেখেন। যেমন, “The Adventure of the Six Napoleons” অবলম্বনে “নেতাজির ছয় মূর্তি”, “A Scandal in Bohemia” অবলম্বনে “ব্রহ্মরাজের পদ্মরাগ” এবং “The Adventure of the Beryl Coronet” অবলম্বনে “ফিরোজা-মুকুট রহস্য” লিখেছিলেন তিনি। এই ছোটগল্পগুলির প্রতিটিই ছিল তাঁর বিখ্যাত জয়ন্ত-মানিক সিরিজের অন্তর্ভুক্ত।
আরও একটি কাহিনীর কথা না বললে হোমস বঙ্গীকরণের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। থ্রিলার-রহস্যরোমাঞ্চপ্রেমী পাঠক মাত্রেই কাঞ্চনজঙ্ঘা সিরিজ, প্রহেলিকা সিরিজের নাম শুনেছেন আশা করা যেতে পারে। যাঁরা জানেন না, তাঁদের জন্য বলে রাখি, বাংলা সাহিত্য জগতে যখন ‘পাল্প থ্রিলার’ ঘরানা অবলম্বনে নানা গোয়েন্দা গল্প লেখা শুরু হয়, তখন স্বপনকুমার ও আরও নানা লেখকের তত্ত্বাবধানে সযত্নে বেড়ে উঠতে থাকে এই ঘরানা। এর মধ্যে প্রহেলিকা সিরিজে শ্রী নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় শার্লক হোমসের কাহিনীর বঙ্গীকরণ করেছিলেন। তিনি এই উপন্যাসটির নাম দিয়েছিলেন “শার্লক হোমস্-এর কথা”। এই কাহিনীর সূত্রপাতটি খুব মজাদার। কাহিনীর শুরুতে কথক জানাচ্ছেন, তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল নালক হোম। কিন্তু তাঁর হোমস প্রীতির সুবাদে বন্ধুরা তাঁকে “নালক হোমস” বলে ডাকতে শুরু করে এবং ক্রমে তা অপভ্রংশ হয়ে পরিণত হয় “হোমস”-এ। এই কাহিনীতে নালক হোমসের সঙ্গী তাঁর বন্ধু আশীষ সেন। বলাই বাহুল্য, ওয়াটসন নামটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই লেখকের এহেন নামকরণ। এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল শার্লক হোমসের ছোটগল্প “The Red-Headed League” অবলম্বনে। এই লেখায় ২২১ বি বেকার স্ট্রিট হয়ে গিয়েছিল লেক রোড এবং হোমসের মক্কেল উইলসন হয়ে গিয়েছিলেন জনার্দন মিত্র। কাহিনীর প্লটেও এসেছিল এক বড় পরিবর্তন। Red-Headed League, অর্থাৎ, অনুবাদকের ভাষায় যা কিনা “লাল-চুলো সমিতি” বা “লাল মাথা সঙ্ঘ”, তা পরিণত হয়েছিল “একচরণ সমিতি”-তে। ওয়াকিবহাল পাঠকমাত্রেই জানেন, উইলসনের মাথার চুল ছিল লাল। তাঁকে বোকা বানানোর জন্যই সেই ক্লাবের অবতারণা করা হয়। সেরকমভাবেই, এই কাহিনীতে দেখানো হয় জনার্দন মিত্রের একটি পা নেই। আশা করছি, “একচরণ সমিতি”-র নামকরণ যে কতটা যথাযথ, তা এ থেকে যথেষ্ট পরিষ্কার! এছাড়া আরও যে সব চরিত্রের বদল হয়েছিল, তার সবকিছু নিয়ে আলোচনা করতে গেলে পুঁথি বেড়ে যাবে অনেক। তাই আপাতত এখানেই থামলাম।
এ তো গেল গল্পকথা। কিন্তু চলচ্চিত্রেও একসময় হোমস কাহিনীর প্রবল প্রভাব পড়েছিল। অবশ্য হিসেব অনুযায়ী দেখতে গেলে তা নিতান্তই পূর্বোল্লিখিত কাহিনী অবলম্বনে হওয়াতেই এমনটা হয়। বীরেন নাগের পরিচালনায় নির্মিত হয়েছিল হিন্দি ছবি “বিশ সাল বাদ”। ছবির কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ছিলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই ছবিটি নির্মিত হয়েছিল হেমেন্দ্রকুমার রায়ের “নিশাচরী বিভীষিকা” অবলম্বনে। এই ছবিতে ওয়াটসন হয়ে যান গোপীচাঁদ জাসুস ও শার্লক হোমস হয়ে যান ডিটেকটিভ মোহন ত্রিপাঠী। মোহন ত্রিপাঠীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সজ্জন এবং গোপীচাঁদের ভূমিকায় ছিলেন অসিত সেন।
এছাড়াও হিন্দিতে আরও একটি ছবি খুবই দুর্বলভাবে “Hound of the Baskervilles” থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। ছবিটির নাম “ভূত বাংলো”। তবে এই ছবিটিতে মূল কাহিনীর গুরুগম্ভীর রসটির বদলে যুক্ত হয়েছিল কৌতুক।
বাংলাতেও যে হোমস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি হয়নি, তা বলা যায় না। ১৯৫১ সালে অজয় কর পরিচালনা করেন “জিঘাংসা”। এই ছবি পুরোপুরিভাবে “Hound of the Baskervilles” থেকে অনুপ্রাণিত। কোনো কোনো গবেষকের মতে, এই কাহিনীটি প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর “জলার পেত্নী” অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল। তবে এ কথা সর্বৈব ভুল। ছবির চিত্রনাট্য করেছিলেন অজয় কর নিজেই। সংলাপ লিখেছিল মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য্য (গোয়েন্দা হুকাকাশি খ্যাত?) এবং হীরেন নাগ। “জলার পেত্নী” ও এই ছবি — দুইয়েরই নির্যাস ছিল “Hound of the Baskervilles”। এদের মধ্যে মিল বলতে এটুকুই। এখানে শার্লক হোমস হয়ে যান স্মরজিৎ সেন ও তাঁর সহকারীর নাম হয় বিমল সান্যাল। ডার্টমুর হয়ে গিয়েছিল রত্নগড় এবং বাস্কারভিল বংশ হয়ে গিয়েছিল সিংহরায় বংশ। ছদ্মবেশী স্মরজিৎকে চিনতে না পারায় বিমলকে ভর্ৎসনা করে হতাশ সুরে স্মরজিৎরূপী শিশির বটব্যালের “চিনতে তো পারলে না বিমল” আজও বহু চলচ্চিত্রপ্রেমীর কানে বাজে। ছবিটিতে প্রেতীনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মঞ্জু দে এবং মূল কাহিনীর জ্যাক স্টেপলটন বঙ্গীকৃত হয়ে পরিণত হন ডা. গুপ্তয়। সেই ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করেছিলেন অভিনেতা বিকাশ রায়। এছাড়া কমল মিত্র বা কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বলিষ্ঠ অভিনেতাদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ছবির যে পোস্টারটি এই লেখার সঙ্গে যোগ করা হয়েছে, পাঠক খেয়াল করলে দেখবেন, সেখানে একটি বিকৃত মুখের মানুষের ছবি আছে। এই অতিকায় চরিত্রটির (প্রকৃতপক্ষে এক বোবা-কালা কুলি, যাকে দিয়ে খুন করানো হত) সঙ্গে অনেকে গোলেমের তুলনা করেন। কাহিনীকে যদি খুব নিখুঁতভাবে অনুসরণ করা যায়, তাহলে অবশ্য বোঝা যায় যে এই তুলনা পুরোপুরি অবান্তর।
পাঠক যদি খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করেন, তাহলে খেয়াল করবেন, অনুবাদ এবং শ্রীপাঁচকড়ি দে কৃত বঙ্গীকরণ বাদে সব কাহিনীতেই কুকুর বদলে গিয়ে অন্য কোনো জন্তু এসেছে। কখনও তা অতিকায় ষাঁড় তো কখনও হয়েছে ভালুক। কখনও আবার কুকুর বিষয়টি বাদ পড়ে গিয়ে সমস্ত স্পটলাইট গিয়ে পড়েছে রহস্যময়ী নারীমূর্তির ওপরে, যাঁকে সকলেই প্রেতিনী বা পেত্নী ভেবে ভয় পেয়েছেন। কিন্তু, প্রশ্ন ওঠে, এমন একটা বদলের প্রয়োজন কি ছিল? যেখানে গোটা কাহিনী এক, কেবল ঘটনাস্থল ও চরিত্রের নাম বদলে যাচ্ছে, সেখানে এরকম একটা বড়সড় বদল ঘটানোর প্রয়োজন কেন পড়ল?
সুধী পাঠক, মনে রাখবেন, এই বঙ্গীকরণের ঘটনাস্থল বদলে তা হচ্ছে ভারতের কোনো প্রকৃত অঞ্চল, বা কল্পিত স্থান। একই সঙ্গে যে মূল বিষয়টি বদলানো হচ্ছে, সেটি কোনো মানুষ নয়, বরঞ্চ একটি জন্তু। মূল উপন্যাসে জ্যাক স্টেপলটনের কুকুরটি ছিল একটি দোআঁশলা কুকুর। ম্যাস্টিফ ও ব্লাডহাউন্ড — উভয়েরই জিন তার মধ্যে উপস্থিত ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ধরণের কুকুর ভারতবর্ষে পাওয়া যায় না। প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, হেমেন্দ্রকুমার রায় যখন এই কাহিনীর বঙ্গীকরণ করছেন, তখন তাঁরা অবগত হয়েই গিয়েছিলেন যে এই জাতের কুকুর ভারতবর্ষে নেই। সে জন্যই কুকুরের বদলে অন্য কোনো ভারতীয় জানোয়ারের অবতারণা করতে হয়। এটা মাথায় রাখতেই হবে, সেই জানোয়ার এমন জানোয়ার হতে হবে, যার কাহিনী বংশপরম্পরায় চালানোও যায়, আবার কাহিনী বলার সমকালীন প্রেক্ষাপটে সেই জানোয়ারকে কেউ পুষতেও পারে।
আবার, বেশ কিছু কাহিনীতে যে প্রেতিনীকেই মূল রহস্যের সূত্র হিসেবে ধরা হয়েছে, তার পেছনেও যথেষ্ট যুক্তি বিদ্যমান। মনে রাখতে হবে, হোমসের এই মূল উপন্যাসে এক মহিলাকে বন্দিনী করে রাখার কথা শোনা যায়। স্যার হেনরি বাস্কারভিল তাঁদের অভিশপ্ত বংশের ইতিহাস শোনাতে গিয়ে এই কাহিনী বলেন। তবে সম্ভবত নিজের দেশের সামন্ততন্ত্রের প্রতি সৌজন্যবশত এবং হোমসকে পরবর্তীকালে রাইগেট জমিদারির উত্তরাধিকারী করার ইচ্ছা পোষণ করায় কোনান ডয়েল হিউগো বাস্কারভিলকে দিয়ে কেবলমাত্র সেই মহিলাকে বন্দী করিয়েছিলেন।
কিন্তু, আমাদের ভারতবর্ষের ইতিহাস সম্পূর্ণ আলাদা ধাঁচের। বর্তমান ভারতবর্ষ, তথা অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রাচীন জমিদারবাড়ি বা রাজপ্রাসাদের দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যাবে কোনো না কোনো অজ্ঞাতনামা মহিলার অস্ফুট চিৎকার। প্রতি রাজবংশ বা জমিদারবংশের ইতিহাস ঘাঁটলে ক্ষমতা ও সামাজিক অধিকারের বশে ধর্ষণের ইতিহাস পাওয়া যায়ই। ভারতীয় জমিদারসমাজের এই মূল নির্যাসটি ধরতে পেরেছিলেন এই অসম্ভব মুনশিয়ানাসম্পন্ন লেখক এবং চিত্রনাট্যকাররা। সে জন্যই তাঁরা নির্দ্বিধায় কুকুরকে সরিয়ে দিয়ে সমস্ত রহস্যকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন জলাভূমিতে ঘুরে বেড়ানো এক নারীমূর্তির ওপরে। সেই নারীমূর্তির ইতিহাস বিবরণের জন্যও বিশেষ ঝক্কি পোহাতে হয়নি তাঁদের।
এই লেখার সঙ্গে আরও একটি অংশ জোড়া যেত, তা হল বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন মৌলিক চরিত্রতে শার্লক হোমসের প্রভাব। কেবলমাত্র পরশুরামের সরলাক্ষ হোম, বা নারায়ণ সান্যালের শার্লক হেবোই হোমস থেকে অনুপ্রাণিত ছিল না। আরও বহু জনপ্রিয় গোয়েন্দার নানা চারিত্রিক গুণের সূত্র ছিলেন ২২১ বি বেকার স্ট্রিট নিবাসী কোকেনাসক্ত এই ভদ্রলোক। কিন্তু সে আলোচনা আজ বরঞ্চ থাক, তা নিয়ে আবার অন্য কোনো দিন আলোচনা করা যাবে।
সবশেষে বাংলা সাহিত্যে শার্লক হোমসের কোন কোন কাহিনী অবলম্বনে কী কী কাহিনী লেখা হয়েছে, বা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, তার একটি তালিকা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
উপন্যাস ও ছোটগল্প:
কাহিনী | লেখক | প্রকাশকাল | মূল হোমস কাহিনী | শার্লক হোমসের পরিবর্তিত নাম | ডা. ওয়াটসনের পরিবর্তিত নাম |
---|---|---|---|---|---|
গোবিন্দরাম | পাঁচকড়ি দে | ১৯০৫ | A Study in Scarlet, The Sign of Four | গোবিন্দরাম আদিত্য | ডা. বসু |
মৃত্যু বিভীষিকা | ঐ | – | Hound of the Baskervilles | ঐ | ঐ |
কৃপণের মন্ত্র | ঐ | – | The Adventure of the Musgrave Ritual | ঐ | ঐ |
জলার পেত্নী | প্রেমাঙ্কুর আতর্থী | ১৯২৮ | Hound of the Baskervilles | – | – |
চতুর্ভুজের স্বাক্ষর (বিচিত্রা সিরিজ) | হেমেন্দ্রকুমার রায় | ১৯৫৬ | The Sign of Four | ভারত কুমার চৌধুরী | ভাস্কর |
নিশাচরী বিভীষিকা | ঐ | ১৯৫৭ | Hound of the Baskervilles | ঐ | ঐ |
নেতাজির ছয় মূর্তি | ঐ | – | The Adventure of the Six Napoleons | জয়ন্ত | মানিক |
ব্রহ্মরাজের পদ্মরাগ | ঐ | – | A Scandal in Bohemia | ঐ | ঐ |
ফিরোজা-মুকুট রহস্য | ঐ | – | The Adventure of the Beryl Coronet | ঐ | ঐ |
শার্লক হোমসের কথা | নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় | – | Red-Headed League | নালক হোম | আশীষ সেন |
চলচ্চিত্র:
সিনেমা | পরিচালক | মুক্তি | মূল হোমস কাহিনী | শার্লক হোমসের পরিবর্তিত নাম | ডা. ওয়াটসনের পরিবর্তিত নাম |
---|---|---|---|---|---|
জিঘাংসা | অজয় কর | ১৯৫১ | Hound of the Baskervilles | স্মরজিৎ সেন | বিমল সান্যাল |
বিশ সাল বাদ | বীরেন নাগ | ১৯৬২ | ঐ | মোহন ত্রিপাঠী | গোপীচাঁদ জাসুস |
তথ্যসূত্র:
- ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি। সেন, সুকুমার; আনন্দ পাবলিশার্স; ১৯৮৮
- গোয়েন্দা রহস্যের সন্ধানে। বসু, প্রলয়; খড়ি প্রকাশনী; ২০২০
- জয়ন্ত-মানিক সমগ্র। রায়, হেমেন্দ্রকুমার; দেব সাহিত্য কুটির
- পাঁচকড়ি দে রচনাবলী। দে, পাঁচকড়ি; করুণা প্রকাশনী
- হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী। রায়, হেমেন্দ্রকুমার; এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি
- প্রহেলিকা সিরিজ ৬। দেব সাহিত্য কুটির
- http://chhayabani.in/
- http://dspace.wbpublibnet.gov.in:8080/jspui/
- https://blogus-abogusblog.blogspot.com/
- https://bn.wikipedia.org/
- https://bn.wikisource.org/
- https://eisamay.indiatimes.com/
- https://en.wikipedia.org/
- https://www.guruchandali.com/