সমব্যথী – সন্দীপ ভট্টাচার্য্য

শেয়ার করুন
সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল ভীষণ। দরজায় দাঁড়িয়ে সোমা অপেক্ষা করছিল সুনীলের। ঘরে ছেলেটা ঘুমাচ্ছে অঘোরে। সোমার মনে পড়ে যাচ্ছিল বিয়ের প্রথম দিকের কথাগুলো। প্রথম প্রথম সোমা ফ্ল্যাটের বারান্দায় ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো সুনীলের। রাস্তায় সোডিয়াম ভেপারের আলোয় ভেজা সুনীলকে দেখতে পেলেই যেন একগাদা সোহাগ, আহ্লাদ জেগে উঠত তার মনে। ঘরে ফেরার পরে দুইয়ে মিলে কত খুনসুটি, কত মজা!
বৃষ্টির ছাঁটে হুঁশ ফেরে সোমার। এখন আর তারা ফ্ল্যাটে থাকে না, চলে এসেছে ভাড়া বাড়িতে। সুনীলের সেই চাকরিটাও আর নেই। কিন্তু ছেলেটা পড়াশোনায় ভীষণ ভালো, তাই তাকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য সোমা আর সুনীল প্রাণপণে লড়াই করছে। বৃষ্টি ভেজা সুনীলের হতাশ মাথা নাড়া দেখে সোমা মনটাকে শক্ত করে, তার মানে সুনীল যে খাবারের যোগান করতে পারেনি সেটা বুঝে যায় সে। যেটুকু খাবার ঘরে ছিল সেটা  ছেলেকে খেতে দিয়ে দেয় হাসি মুখে ।
এভাবে কেটে যায় অনেকদিন।
–অনেকদিন তো হলো, এবার রেহাই দাও। ভগবানকে বলো দয়া করে যেন তোমায় তুলে নেয়। আর পারিনা তোমাকে নিয়ে।
খোলা ক্যাথিটারটা লাগাতে লাগাতে সোমা বলল।
তার স্বামী সুনীল বেশ কয়েক বছর প্যারালিসিসে ভুগছে। তার সব দায়িত্ব এখন পঞ্চাশোর্ধ সোমার হাতে।
কত কষ্ট করে ছেলেকে নামী ইস্কুলে পড়িয়ে,  ভালো পড়াশুনা করিয়ে এখন তাদের একমাত্র ছেলে বাইরে চাকরি করে। ঘরে ফেরারও সময় নেই তার। বড্ড ব্যস্ত সে তার কাজ নিয়ে। নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে যায় সোমার।
সুনীল খানিক উসখুস করছিল,  জামার ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তার বুকে একটু হাত বুলিয়ে দিল সোমা। কম্পমান অশক্ত হাতে সুনীল আঁকড়ে ধরলো সোমার হাত। দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল তার চোখ দিয়েও।
শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *