ডিটেনশন-ক্যাম্প – ইভান অনিরুদ্ধ

শেয়ার করুন


অবসরপ্রাপ্ত স্কুল মাস্টার আশরাফ জমাদার। বয়স ষাট পেরিয়েছে গতবছর। বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটে এই গ্রামেই। তার  দুই মেয়ে । সবার বিয়েশাদি হয়ে গেছে। এখন বাড়িতে তারা দুইজন কেবল। বড় মেয়েটার বিয়ে পাশের গ্রামেই দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে থাকে গুয়াহাটি।
উঠানের পুবদিকে মাস্টারের বউ রাহেলা দেশি লাউয়ের চারা লাগিয়েছে। কী সুন্দর লকলকিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে আকাশের দিকে উঠে যেতে চাইছে! কী স্বাধীনতা এদের! মাগরিবের আজানের ঘন্টাখানেক দেরি। লাল মুরগিটা নয়টা বাচ্চা নিয়ে বারবাড়ির উঠানে খেলছে।বাড়ন্ত লাউগাছগুলোতে রাহেলা বদনা দিয়ে পানি ঢালছে। বারান্দায় বসে একধ্যানে আশরাফ জমাদার সেদিকে তাকিয়ে আছে। তারপর রাহেলাকে বলল- ‘বাদ দ্যাও এইসব তালাবি দেয়া। কী অইবো গাছের গোড়ায় পানি দিয়া? এই লাউয়ের চারা সেয়ান অইতে অইতে মোদি সরকার আমাগো রে ডি-ক্যাম্পে নিয়া গরুর মত বাইন্দা রাখবো। এই বাড়িঘর তো বারো ভুতে লুইট্যা খাইবো। নিজের বাপ-দাদার ভিটা, নিজের দ্যাশ এইডা। অহন মরণের আগে প্রমাণ দিয়া মরতে অইবো যে, আমি ভিনদেশি না। মানুষ যখন রাজনীতির কারণে অমানুষ অইয়া যায় তহন আল্লাহর কাছে বিচার দ্যাওন ছাড়া আর কী করার আছে! দোষ একটাই- আমার ধর্মীয় পরিচয় তাগো পছন্দ না! এই কারণে গরুরে মাথায় লইয়া নাচতাছে কিন্তু সুযোগ পাইলে আমারে পিডাইয়া মারবো। আমি যে এদের চউক্ষে গরুর চেয়েও অধম!’
মাগরিবের আজান হচ্ছে। আশরাফ জমাদার আস্তে আস্তে নামাজের ওযু করার জন্য কলতলায় যাচ্ছে। রাহেলা শূন্য দৃষ্টিতে গাছের চারাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের দুজনের কাছেই বাড়িটাকে এখন মোদির ডি-ক্যাম্পের মতো লাগছে! 

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *