গল্প

  • টস – রেহান কৌশিক

    জুলাই, ১৯৯৬’মিলেছে মিলেছে মিলেছে…’ সন্ধেবেলা বাড়ির ড্রয়িংরুমে পা দিয়েই শাম্মি কাপুরের চাহে মুঝে কোই জংলি কহের স্টাইলে একটা নাচ দিল মানস। দু’আঙুলের ফাঁকে ট্রান্সফার লেটারের কপি।’সত্যি!’ ইচ্ছাপূরণের বিস্ময় স্বস্তিকার গলায়।মানস বলল, ‘নিজের চোখে দ্যাখো।’স্বস্তিকা চোখ রাখল কাগজে। তাদের স্বপ্নের ছাড়পত্র। ট্রান্সফার হয়েছে ঘাটশিলাতেই। ওপরওয়ালার ভ্যানতাড়া দেখে মনে হচ্ছিল না শেষ অব্দি হবে। হল। অবশেষে হল।মানসের…

  • আশ্রয় – শাশ্বত নিপ্পন

    এমন শুনশান নিস্তব্ধতা লক্ষ্মী মাস্টার জীবনে কোনোদিন দেখেনি। গোরস্থানে অথবা শ্মশানেও একধরনের শব্দ থাকে; যা থাকে অশ্রুত। কিন্তু দুপুর গড়ানোর আগেই মেহেরপুর জনমানবশূন্য, খাঁ খাঁ করছে চারধার। শুধু মাঝে-মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসছে দু-একটা গুলির শব্দ আর শকুনের উল্লাসধ্বনি। আর এ সবকিছুর মধ্যেই ওরা আসছে। ওদের মাথায় জলপাই রঙের হেলমেট, পায়ে বুট, হাতে অস্ত্র, চকচকে।…

  • অমিত ও তার বান্ধবীরা – অভিজিৎ চৌধুরী

    খুব সাদামাটা জীবন অমিতের । মা ইস্কুলে পড়াত । সর্বশিক্ষার স্কুলে, মাইনে ৫ হাজার টাকা । বাবার গ্রসারি শপ মানে মুদির দোকান । ধার চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ~ এই প্রঘোষণ টাঙানোর আগের ধার দিতে দিতে বাবা দোকানটাই যাকে বলে লালবাতি জ্বালিয়েছে ।ছোট ভাই পড়তে গেছিল কলকাতায় , ফিরল বিয়ে করে । এখন পরিবারের সদস্য…

  • ফিরে দেখা – রণবীর সরকার

                                                                      (১)                      আজ তাহলে গল্প হোক কৌশিককে নিয়ে। আচ্ছা কৌশিকের পরিচয়টা দিয়ে নেওয়া…

  • বাঙালের জেলখানা – সাম্যজিৎ গাঙ্গুলি

    শীতের রাত্রি। তখনও সূর্য আড়মোড়া ভাঙেনি। পাশের শিশিরভেজা খেতে শোনা গেল পায়ের শব্দ। একটা না, অনেকগুলো। দরমার ঘরে কুঁকড়ে থাকা ওরা কিছুক্ষণ চুপচাপ শুনল। তারপর হঠাৎই, বুক ভরে দম নিয়ে বেরিয়ে এল। বাইরে কপি খেতে লোক জমেছে। বেশ কটা সোয়েটার-জ্যাকেট, স্যুট-কোট পরা বাবুসাহেব তাদের মধ্যে। তার থেকেও বেশি তাপ্পি দেওয়া ফুলশার্টের সাথে ফাটা হাফপ্যান্ট পরা…

  • তপন ঘোষের বিক্রিবাটা – মৃত্তিকা মাইতি

    গায়ে গামছা ঘষতে ঘষতে কলঘর থেকে বেরিয়ে এল তপন। সময় নেই একদম। কোনওদিনই থাকে না।সরু বারান্দার গ্ৰিলে গিঁট মেরে দড়ি ঝোলানো। সেখানে গামছাটা শুকোতে দিয়ে তড়বড় করে ঘরে ফিরল। গীতা রান্নাঘর থেকে ভাতের থালা নিয়ে ঢুকছে। বাতে দুটো হাঁটুই নড়বড়ে। মেয়েটা যখন ছিল তখন হাতে হাতে সাহায্য করত মাকে।এখন সব গীতাকেই করতে হয়। তপন ঝটপট…

  • পারুলীর উড্ডয়ন – আনোয়ারা সৈয়দ হক

    আকাশ থেকে বৃষ্টির ফলা কোত্থেকে যে শরীরে এত শান দিয়ে এসে লাফিয়ে পড়ল পারুলীর টিনের চালে, আল্লা মাবুদ সে-ই জানে। প্রসব যন্ত্রণায় কাটা মুরগির মতো দাপাতে দাপাতে পারুলী একবার চিৎকার করে বলল, ‘আল্লাহ’; কিছুক্ষণ পরে আবার বললো, ‘ইয়া রসুল’; তারপর চুপ। এমন যে হবে তা কক্ষণো ধারণা করা যায়নি। সকাল থেকে সামান্য মেঘ মেঘ খেলা চলছিল বটে…

  • মা – রিয়া মিত্র

    দত্তবাড়ির দুর্গাপুজো এই অঞ্চলের নামকরা। দুর্গাপুজোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। প্রতিমা তৈরির কাজ অনেক দিন আগেই আরম্ভ হয়েছে। দত্তবাড়ির বর্তমান শরিক প্রিয়নাথ, বসুনাথ, রমানাথ ও শ্যামানাথ। চার ভাইয়ের উদ্যোগেই বাড়ির পুজো জমজমাট। তাদের বোনেরাও জামাই-সন্তানসহ চলে এসেছে পুজোর চারদিন এই বাড়িতেই আনন্দে সামিল হওয়ার জন্য। সবথেকে ছোট ভাই শ্যামানাথের বিয়ে হয়েছে…

  • রাষ্ট্রহীন – প্রলয় নাগ

    ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।গুজরাটি এক নেতা শহরে এসেছেন। টিভির খবরে তাই বার বার দেখাচ্ছে। দেখিয়ে দেখিয়ে, শুনিয়ে শুনিয়ে কান পচিয়ে ফেলবে এখন। রামনগরে হাজার হাজার জনতার সামনে দাঁড়িয়ে হিন্দিতে তিনি যা বলেছেন, তার বাংলা করলে এই দাঁড়ায় : যদি ক্ষমতায় আসে তবে আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলি গুড়িয়ে দেওয়া হবে। ১.৪৩ লক্ষ ডি-ভোটার-কে সন্দেহ তালিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়া…

  • পুজোর একাল সেকাল – অন্তরা ঘোষ

    ছোটবেলা থেকেই দিল্লিতে বড়ো হওয়া সদ্য আঠারোতে পা দেওয়া মৌপিয়া আজ খুব খুশি। প্রায় দশ বছর পর গ্রামের বাড়িতে পুজো দেখতে এসেছে। বাবা যেহেতু এয়ারফোর্সে চাকরি করে তাই ছুটি পাওয়ার বিশাল সমস্যা। সেজন্য এতবছর ইচ্ছে থাকলেও গ্রামে আসতে পারেনি মৌপিয়ারা। বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে ওদের আদি বাড়ি। বিশাল বনেদি বাড়ি। মৌপিয়ার দাদুরা পাঁচ ভাই ছিলেন। মৌপিয়ার…