বিস্মৃতির অন্তরালে জাপান-বন্ধু-বাঙালি – দীপক সাহা

শেয়ার করুন

বিশ্ববাসী যে সকল মহান ব্যক্তিদের কারণে ভারতবর্ষকে সম্ভ্রম করে, ড. রাধাবিনোদ পাল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানি যুদ্ধবন্দিদের বিষয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরাগী জাস্টিস ড. রাধাবিনোদ পালের যুগান্তকারী রায় আজও বিশ্বজুড়ে আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে আলোচনার বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক মিলিটারি ট্রাইবুনালের সদস্য করে ড.পালকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জাপানের যুদ্ধবন্দিদের বিচার করতে। স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘জাপান-বন্ধু-ভারতীয়’ ড.রাধাবিনোদ পাল জাপানের পক্ষে যে দীর্ঘ রায় দিয়েছিলেন, তা আজও ভারত-জাপান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক ভিত্তিপ্রস্তর। শুধু আইনজীবীরাই নন, ‘টোকিও ট্রায়াল’ নামে বিখ্যাত ওই বিচারের কথা বিশ্ব কূটনৈতিক মহলেও সুবিদিত।

অবিভক্ত বাংলার নদিয়া জেলার বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়ার পদ্মার নিকটবর্তী হিসনা নদীর তীরঘেঁষা অখ্যাত গ্রাম সালিমপুর। যেখানে ১৮৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি মহাকালের ইতিহাস রচনার জন্য বাবা বিপিনবিহারী পাল আর মাতা মগ্নময়ী দেবীর কোলে আশ্রিত হয়েছিলেন কর্মবহুল বৈচিত্র্যময় এক বর্ণাঢ্য মনীষী। তিনি বাঙালির অহঙ্কার জাস্টিস ড.রাধাবিনোদ পাল। রাধার বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন তাঁর বাবা সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে সংসারত্যাগী হন। ঘরে রইলেন অসহায়া জননী – তিনটি শিশুসন্তানকে নিয়ে –রাধা আর দুই বোন। বাবার ভালোবাসার স্পর্শ পায়নি রাধা। রাধা বড় হতে থাকেন মায়ের দীর্ঘশ্বাসভরা আত্মবিস্মৃত বুকের ব্যথা চাপা ভাবগাম্ভীর্যে, অনাহূত আদরে আর ঠাকুর্দা ফ্যালান চন্দ্র পালের আশীর্বাদ ও স্নেহের উষ্ণ ছায়াতে। সংসারের অভাব আর দারিদ্র্য মোকাবেলা করতে গিয়ে মমতাময়ী মা অন্যের বাড়িতে শ্রম খেটে যখন দিনাতিপাত করছেন, তখন সেই জোয়ারে পাল তুলতে গরু চরানোর কাজে সময় ব্যয় করতেন ছোট্ট রাধা। তারাগুনিয়ায় ঈমান আলির পাঠশালায় পাঠজীবনের হাতেখড়ি নেন রাধা। বাড়ির পাশে পাঠশালা থাকায় প্রতিদিন বিদ্যালয়ের পাশে ঘন অরণ্যে গরুগুলো ছেড়ে দিয়ে স্কুলঘরের খোলা জানালা দিয়ে রাধা গরু পাহারা দিতে দিতে ক্লাসের পাঠ শুনতেন। রাধার লেখাপড়া এবং জীবন গড়ার ভিত্তিটা এখান থেকেই শুরু।

সাত বছর পেরিয়ে আটে পা দিয়ে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই রাধা শেষ করলেন পাঠশালার পড়া। সেখান থেকে গেলেন তিনি মাসিমার আশ্রয়ে–বাঁশবেড়ে। কিন্তু আশ্রয় যদি-বা জুটলো, সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হল এক বিড়ম্বনা। বোয়ালিয়াতে থাকতেন তাঁর মামা। তাঁর দোকানে সাহায্য করতে ডাক পড়ল রাধার। মামার দোকানের সমস্ত কাজ করে বালক রাধা আসতেন নদী পার হয়ে মাসীর বাড়ি। সেখান থেকে বাঁশবেড়ে মাইনর স্কুল। ফলে রোজ বাঁধাধরা লেট হতেন তিনি। তখন সেকেন্ড ক্লাসে পড়েন তিনি। সংসারের অভাবের তাড়নায় মামা কাকারা জানালেন বিনোদের পড়া আর বেশিদূর এগোনো চলবে না –বরং কাজ করুক। বাধ্য হয়ে মুদীর দোকানে কাজ নিলেন বিনোদ। চার টাকা মাইনেতে। মাত্র ১১ বছর বয়স তখন। মা কিন্তু এভাবে আশাভঙ্গ হতে কিছুতেই রাজী নন। অখ্যাত গাঁয়ের অশিক্ষিতা রমণী তিনি। মনে কিন্তু অদম্য ইচ্ছা। ছেলেকে মানুষ করতেই হবে। ছেলেকে দিয়ে চিঠি লেখান দূরের স্কুলে। যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি এই অসহায় ছেলেটিকে পড়াশুনা করবার সাহায্য করেন।

চিঠির প্রত্যুত্তরে কুমড়ী এম.ই. স্কুলের শিক্ষক কৃষ্ণলাল চৌধুরী রাধাকে আশ্রয় দেন তাঁর স্কুলে। সেখান থেকেই মাইনর পরীক্ষায় সমগ্র প্রেসিডেন্সি ডিভিশনে প্রথম স্থান পেয়ে পাশ করলেন। কুমড়ী ছেড়ে এলেন কুষ্টিয়াতে, কুষ্টিয়া এইচ.ই. স্কুলে। সেখানে আশ্রয় পেলেন কমলাপুর জিয়ারোবির জমিদার রামচন্দ্র রায় চৌধুরীর বাড়িতে। সেকেন্ড ক্লাসে পড়তে পড়তেই তিনি কুষ্টিয়া ছেড়ে গেলেন দুবলহাটিতে রাজসাহী জেলায়। সেখানকার জমিদার সমস্ত ভার নিলেন তাঁর। এখানে দুলালহাটি রাজা হরেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাশ করলেন। সঙ্গে পেলেন মাসিক আট টাকার বৃত্তি।

রাজসাহী কলেজ থেকে এফ.এ. পাশ করলেন ১৯০৫ সালে। থাকতেন কলেজ হোস্টেল ‘হেমন্ত কুমারী বোর্ডিং’এ। মাসিক ৬ টাকা খরচ, সেই খরচ বহন করতেন কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক রাখালদাস ঘোষ। রাজসাহী থাকার সময় তাঁর বৃত্তির পুরো টাকাই পাঠিয়ে দিতেন মায়ের কাছে, সংসার খরচের জন্য। এফ.এ. পাশ করে কলকাতায় বেলেঘাটাতে এসে উঠলেন পূর্ণচন্দ্র পালের বাড়িতে। এখান থেকেই রাধা ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পাশ করলেন। তারপর ১৯০৮ সালে এম.এ. পাশ করলেন গণিতশাস্ত্রে। প্রেসিডেন্সি কলেজে যখন বি.এ. পড়ছেন সেই সময় তিনি পূর্ণচন্দ্র পালের জ্যেষ্ঠা কন্যা নলিনীবালার সঙ্গে শুভ পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

এম.এ.পরীক্ষা শেষ করেই বিনোদ যান এলাহাবাদে জীবিকার সন্ধানে। সেখানে এলাহাবাদ আ্যকাউন্টান্ট জেনারেল অফিসে বছর দুই ক্লার্কের চাকরি করেন। এই চাকরি করা কালেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সসম্মানে বি.এল. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অবশেষে ময়মনসিংহে গণিতশাস্ত্রে প্রফেসারী পেয়ে সেখানে চলে গেলেন তিনি, মাসিক ১৫০ টাকা মাইনে। এখানে থাকা কালে তিনি অসংখ্য ছাত্র, বন্ধু, আত্মীয়দের যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন –আশ্রয় দিয়ে,অর্থ দিয়ে, আরও নানাভাবে। বস্তুতঃ এই সময় থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন পরের কল্যাণ কামনায়। এরই মধ্যে সময় করে তিনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন এম.এল. পরীক্ষার জন্য। তিনি ১৯২০ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এল. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন।

১৯২১ সালে, ময়মনসিংহ থেকে ফিরে আসার পর ১৯২৩ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল – এই সুদীর্ঘ ১৩ বছর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল কলেজের প্রফেসর পদে অতিবাহিত করেন। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অফ ল (ডি.এল.)উপাধি পান। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল – ‘Hindu philosophy of Law in the Vedic and PostVedic Times prior to the Institutes of Manu’. ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে তিনি তিনবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেগোর প্রফেসর অফ ল নির্বাচিত হন। এরমধ্যে ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত ড.পাল ভারত সরকারের আয়কর দপ্তরের আইনি পরামর্শদাতা ছিলেন। ১৯৩৭ সালে জামার্নির হেগে কংগ্রেস অফ কম্পারেটিভ ল’এর যে দ্বিতীয় অধিবেশনে ইন্টারন্যাশনাল আ্যকাডেমি অফ কম্পারেটিভ ল’এর তিনি যুগ্ম সভাপতি নির্বাচিত হন।১৯৪১ সালে ২৭ শে জানুয়ারি তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৩ সালের ২৩ শে জুন পর্যন্ত কার্যরত থাকেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ঐ আসন থেকে অবসর নেন।

১৯৪৬ এর এপ্রিল ! রাধাবিনোদ পালের জীবন যুক্ত হয় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নাড়ির সঙ্গে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ, অক্ষশক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করে নুরেমবার্গ এবং টোকিওতে দুটি ট্রাইবুনাল গঠিত হয়। হিটলারের মন্ত্রী পরিষদ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার করা হয় নুরেমবার্গে এবং জাপানের সমরবিদ জেনারেল হিদেকি তেজোর বিচার করা হয় টোকিও ট্রাইবুনালে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ফিলিপিনস, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউনাইটেড কিংডম, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া – ১১ টি দেশের সম্মানীয় বিচারকদের আহ্বান করা হয় টোকিও ট্রায়ালের জন্য। জাস্টিস পালেরও আমন্ত্রণ এল, বিচারক হয়ে যেতে হবে জাপানে। বলা বাহুল্য এ বিচারের মুখ্যহোতা যুদ্ধজয়ী আমেরিকা। ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ‘,’ যুদ্ধাপরাধ ‘, এবং ‘মনুষ্যত্বের বিরোধিতা’–এই তিন অভিযোগে সেখানে বিচার হয় ২৮ জনের, যাঁদের অধিকাংশই সেনা ও রাজনৈতিক নেতা। অন্যান্য বিচারকদের রায় যখন জাপানের বিরুদ্ধে। জাপানকে যুদ্ধাপরাধী বলে মেনে নিয়েছেন তাঁরা, ঠিক সেই মূহুর্তে বিস্মিত, মুগ্ধ, হতবাক পৃথিবীর মানুষ শুনলো ভারতীয় বিচারপতির রায় – এ বিচার নয়, এ বিচারের প্রহসন। জাপানকে ‘নির্দোষ’ অভিহিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি জাপানের বিচার হয়, তা হলে মিত্রশক্তিরও একইভাবে বিচার হওয়া উচিত।’ সুদীর্ঘ ১২৩৫ পাতার রায় বেরোলে যেদিন, বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হল ভারতীয় বিচারপতির অনমনীয় স্বাধীন চিন্তার পরিচয় পেয়ে। গৌরবের উচ্চ শিখরে উঠে যশের মালা গলায় পরে তিনি ফিরলেন দেশে ১৯৪৮ সালে নভেম্বর মাসে। এর কয়েক মাস পরেই ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি হারালেন তাঁর প্রিয় পত্নী নলিনীবালাকে। আনন্দের পরমমূহুর্তে মর্মান্তিক আঘাত পেলেন তিনি। তিনি নয় কন্যা ও পাঁচ পুত্রের গর্বিত পিতা ছিলেন। তাঁর বংশধরদের একাংশ এখনও নদিয়ার করিমপুরের নিকটবর্তী আরবপুর গ্রামে বসবাস করেন। পাঁচের দশকের শেষের দিকে ড. রাধাবিনোদ পাল আরবপুর গ্রামে এসেছিলেন। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের মনের স্মৃতিকোঠায় সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল।

জাপানের ঘটনার পর তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল দেশে বিদেশে। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার ড.পালকে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত করেন। ১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে দু’বার আন্তর্জাতিক ল কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। আজ পর্যন্ত ভারতীয় হিসাবে এ-বিরল গৌরবের অধিকারী একমাত্র তিনি।

প্রথম সূর্যের দেশ জাপান বরণ করে নিল জ্যোর্তিময় মহাপুরুষকে। ১৯৬৬ সালে এল সেই বিরলতম সম্মান, তাঁর আদরের দেশ জাপান থেকে। জাপানবাসীর অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে ঝরে পড়ল শ্রদ্ধার্ঘ্যের ঝরণাধারা। জাপানের নিহন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এল.এল. ডি.( অনরিস কউজা) উপাধিতে ভূষিত করেন। জাপানের সম্রাট তাঁকে দিলেন ‘ফার্স্ট অর্ডার অফ স্যাকরেড ট্রেজার’ উপাধি। জাপানের টোকিও শহরে তাঁর নামে জাদুঘর, সড়ক ও ইয়াসুকুনি শ্রাইনে তাঁর সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। জাপান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে একটি রিসার্চ সেন্টার রয়েছে ।

ড.পালের স্মৃতিতে জাপান সরকারের তরফে যে স্মৃতিতর্পণ করা হয় সেই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্র এখনও জাপান থেকে নিয়মিত প্রতি বছর ড.পালের কলকাতার ডোভার লেনে বাসভবনে আসে। ২০০৭ সালের ২৩ আগষ্ট প্রাক্তন জাপানি প্রধানমন্ত্রী কিশির নাতি, তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কলকাতায় রাধাবিনোদ পালের ছেলে প্রশান্ত পালের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আসেন।

ড.পালের লিখিত ও পঠিত ঐতিহাসিক রায় বাংলা, জাপানি, ইংরেজিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। রাধাবিনোদ পালের ঐতিহাসিক রায় কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ডসহ নামকরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও আইন প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচিতে আছে। উল্লেখ্য, ‘টোকিও ট্রায়াল’ টেলিসিরিয়ালটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের ট্রায়াল নির্মিত হলে ড.পালের চরিত্রে অভিনয় করেন বিখ্যাত অভিনেতা ইরফান খান। এছাড়া বিচারপতি তথা পরাধীন ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ উপাচার্য রাধাবিনোদ পালকে সাধারণ জনতার কাছে পৌঁছে দিতে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে জাপানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা ‘নিপ্পন হোসো কিয়োকাই (এনএইচকে’। এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক। রাধাবিনোদ পালের জন্মস্থান অধুনা বাংলাদেশের সালিমপুরেও গিয়েছিলেন তথ্যচিত্রের নির্মাতারা। ওই রকম প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এক জন কী ভাবে এমন আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেলেন, তা নিয়ে জাপানিরা বিস্মিত।

মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা নিজের সৃষ্টির পরিপূর্ণতায়। ড.রাধাবিনোদ পাল এই সার্থকতার পূর্ণ আস্বাদ পেয়েছিলেন। খ্যাতিমান মনীষী ড. রাধাবিনোদ পাল ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি দেহত্যাগ করেন কলকাতার ১৬ নম্বর, ডোভার লেনের নিজ বাড়িতে। একটি ইতিহাস, সাহস ও গর্বিত অহংকারের পার্থিব যবনিকা পড়ল।

দেশের মানুষ তাঁকে ভুলতে বসেছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকে তো তাঁর নামই শোনেনি। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ (৩০ মে, ২০০৭ ), ১৯৭৮ সালে জাপান থেকে রাধবিনোদের যে মূর্তিটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল, দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে তা পড়েছিল গুদামে। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানতেনই না ওটা কোথায়। অন্য এক দেশে আদৃত, কিন্তু ‘ঘরের ছেলে’কে সম্মান জানানোর কোন উৎসাহ নেই এ দেশে। জাপান অন্তত ওঁকে সম্মান জানাচ্ছে। এইটুকুই বোধহয় সান্ত্বনা আমাদের।

ছবি – আন্তর্জাল

কৃতজ্ঞতা স্বীকার – ভবতোষ পাল, মনোতোষ পাল ( রাধাবিনোদ পালের ভ্রাতুষ্পুত্র)

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *