অপবিজ্ঞান – রাজশেখর বসু (পরশুরাম)
|

অপবিজ্ঞান – রাজশেখর বসু (পরশুরাম)

বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের ফলে প্রাচীন অন্ধসংস্কার ক্রমশ দূর হইতেছে। কিন্তু যাহা যাইতেছে তাহার স্থানে নূতন জঞ্জাল কিছু কিছু জমিতেছে। ধর্মের বুলি লইয়া যেমন অপধর্ম সৃষ্ট হয়, তেমনি বিজ্ঞানের বুলি লইয়া অপবিজ্ঞান গড়িয়া উঠে। সকল দেশেই বিজ্ঞানের নামে অনেক নূতন ভ্রান্তি সাধারণের মধ্যে প্রচলিত হইয়াছে। বৈজ্ঞানিক ছদ্মবেশে যেসকল ভ্রান্ত ধারণা এদেশে লোকপ্রিয় হইয়াছে, তাহারই কয়েকটির কথা বলিতেছি।…

শিক্ষার দর্শন – আহমদ ছফা
|

শিক্ষার দর্শন – আহমদ ছফা

ইউরোপীয় রেনেসাঁর পূর্বে শিক্ষার দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল অতীন্দ্রিয়বাদে প্রোথিত। মানুষ জানবে কেন? বুঝবে কেন? জ্ঞান লাভ করবে কেন? এই সবগুলো কেনর জবাব প্রাচীন জগৎ দিয়েছে–কোনো এক অলৌকিক সত্তায় তাকে বিশ্বাসী হতে হবে। যেহেতু মানুষের মন চঞ্চল, ইন্দ্রিয় অসংযত, তাই তাকে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে দৈনন্দিন শৃঙ্খলার মাধ্যমে এই বিশ্বাসকে চিত্তে চেতনায় স্থির করতে হবে,…

দাঙ্গা – সোমেন চন্দ
|

দাঙ্গা – সোমেন চন্দ

লোকটি খুব তাড়াতাড়ি পল্টনের মাঠ পার হচ্ছিল। বোধহয় ভেবেছিল লেভেল ক্রসিংয়ের কাছ দিয়ে রেলওয়ে ইয়ার্ডে পড়ে নিরাপদে নাজিয়াবাজার চলে যাবে। তাহার হাতের কাছে বা কিছু দূরে একটা লোকও দেখা যায় না—সব শূন্য, মরুভূমির মতো শূন্য। দূরে পিচঢালা পথের ওপর দিয়ে মাঝে মাঝে দুই একটি সুদৃশ্য মোটরকার হুস করে চলে যায় বটে, কিন্তু এত তীব্র বেগে…

ভদ্ৰলোক – সুকান্ত ভট্টাচার্য
|

ভদ্ৰলোক – সুকান্ত ভট্টাচার্য

“শিয়ালদা–জোড়া-মন্দির–শিয়ালদা” তীব্র কণ্ঠে বার কয়েক চিৎকার করেই সুরেন ঘন্টি দিল ‘ঠন্‌ ঠন্‌’ করে। বাইরে এবং ভেতরে, ঝুলন্ত এবং অনন্ত যাত্রী নিয়ে বাসখানা সুরেনের ‘যা-ওঃ, ঠিক হ্যায়’ চিৎকার শুনেই অনিচ্ছুক ও অসুস্থা নারীর মতো গোঙাতে গোঙাতে অগ্রসর হল। একটানা অস্বস্তিকর আওয়াজ ছড়াতে লাগল উঁ-উঁ-উঁ-উঁ-উঁ-উঁ-উঁ। “টিকিট, বাবু, টিকিট আপনাদের”—অপরূপ কৌশলের সঙ্গে সেই নিশ্ছিদ্র ভিড়ের মধ্যে দিয়ে সুরেন…

ইঁদুর – সোমেন চন্দ
|

ইঁদুর – সোমেন চন্দ

আমাদের বাসায় ইঁদুর এত বেড়ে গেছে যে আর কিছুতেই টেকা যাচ্ছে না। তাদের সাহস দেখে অবাক হতে হয়। চোখের সামনেই, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদলের সুচতুর পদক্ষেপে অগ্রসর হওয়ার মতো ওরা ঘুরে বেড়ায়, দেয়াল আর মেঝের কোণ বেয়ে-বেয়ে তরতর করে ছুটোছুটি করে। যখন সেই নির্দিষ্ট পথে আকস্মিক কোনো বিপদ এসে হাজির হয়, অর্থাৎ কোনো বাক্স বা কোনো ভারী…

দ্রৌপদী – মহাশ্বেতা দেবী
|

দ্রৌপদী – মহাশ্বেতা দেবী

নাম দোপ্‌দি মেঝেন, বয়স সাতাশ, স্বামী দুলন মাঝি (নিহত), নিবাস চেরাখান, থানা বাঁকড়াঝাড়, কাঁধে ক্ষতচিহ্ন (দোপ্‌দি গুলি খেয়েছিল), জীবিত বা মৃত সন্ধান দিতে পারলে এবং জীবিত হলে গ্রেপ্তারে সহায়তায় একশত টাকা….. দুই তকমাধারী ইউনিফর্মের মধ্যে সংলাপ। এক তকমাধারী: সাঁওতালীর নাম দোপ্‌দি, ক্যান? আমি যে নামের লিস্টি লইয়া আসছি তাতে ত এমুন নাম নাই? লিস্টিতে নাই…

বালুকা, বনস্পতি – গৌতম বসু
|

বালুকা, বনস্পতি – গৌতম বসু

কবি ও সম্পাদক মহাশয় একটি বিচিত্র প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ অতর্কিতে আমার উপর নিক্ষেপ করেছেন। বিশেষ কোনো প্রসঙ্গে বিচার করে একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা সূত্রে পৌঁছনো যে সম্ভব, এ-মনোবল আমার এক সময় ছিল, আজ আর নেই। অন্য কাউকে কিছু বোঝাতে যাওয়ার প্রচেষ্টার করুণ পরিণতি দেখতে পাই সর্বত্র, চলার পথে, কর্মস্থলে, গৃহে, দূরদর্শনে সম্প্রচারিত বিভিন্ন বিবাদানুষ্ঠানে। এখন মনে…

আহা যদি অহর্নিশি দাঙ্গা হত – পরম ভট্টাচার্য (পুনর্পাঠ)

আহা যদি অহর্নিশি দাঙ্গা হত – পরম ভট্টাচার্য (পুনর্পাঠ)

ক. অপু এ শহরে অভ্যস্ত, পরিচিত। প্রতিটি বাড়িঘর, মানুষজন, গলি, তস্যগলির আলাভোলা পাগল যত, সবেতেই অপু প্রাচীন। কোথায় ভয়, কোথায় স্বস্তি, কোথায় আনন্দ-বেদনা জানে অপু। ছোট্ট এই রেল শহরের রেলকর্মীর ছোটোছেলে। মধ্যবিত্ত পরিবার। অপুর দাদা ব্যাঙ্ককর্মী। দিদি এম এস সি করছে। অপুর বাবার চাকরির মেয়াদ আর দুবছর। সাধারণ গ্র্যাজুয়েট হয়েছে অপু গেল বছর। অপু বুঝেছিল…

বাসুকি নড়ে উঠুক (পুনর্পাঠ) – অমিতাভ গুপ্ত
|

বাসুকি নড়ে উঠুক (পুনর্পাঠ) – অমিতাভ গুপ্ত

১ শ্রেণিসমাজ থেকে এবং শ্রেণিসমাজের পক্ষাশ্রয়ী স্থিতাবস্থাপন্থীদের দুর্বুদ্ধি থেকে উৎসারিত যন্ত্রণাকে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রায়শ ক্ষেত্রকালনিরপেক্ষ বেদনার রূপকে ধৃত করেছেন। এই রূপকাভাসে প্রচ্ছন্ন রয়েছে প্রত্নকথা, লোককথা, রূপকথা। ১৯৭৮ মরিচঝাঁপিতে নির্বিবেক রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে (সম্ভবত তখন কোনো কবির একক প্রতিবাদ) তিনি যেমন ঠাকুমার ঝুলির অনুষঙ্গ প্রয়োগ করেছেন, তেমনই, একটু পা চালিয়ে ভাই কাব্যগ্রন্থের…

জীবনানন্দ দাশ-এর স্মরণে (পুনর্পাঠ) – বুদ্ধদেব বসু
|

জীবনানন্দ দাশ-এর স্মরণে (পুনর্পাঠ) – বুদ্ধদেব বসু

১ ঢাকা, গ্রীষ্মকাল, ১৯২৭। হাতে-লেখা ‘প্রগতি’ পত্রিকা ছাপার অক্ষরে রুপান্তরিত হ’লাে। শু’য়ােপােকার খােলশ ঝ’রে গেলাে, বেরিয়ে এলাে ক্ষণ–কালীন প্রজাপতি। কিন্তু শুধুমাত্র ক্ষণিক ব’লেই কোনাে-কিছু উপেক্ষণীয় নয় ; কারাে হয়তো অল্প সময়েই কিছু করবার থাকে, সেটুকু করে দিয়েই সে বিদায় নেয়। ‘প্রগতি’ র নিয়মিত লেখকদের মধ্যে রীতিমতাে বিখ্যাত ছিলেন একমাত্র নজরুল ইসলাম, আর অচিন্ত্যকুমার-যাঁর ‘বেদে’, ‘টুটা-ফুটা’…